‘আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা: ৭৫% শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় ভোগেন’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন গত রোববার দৈনিক শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। প্রতিবেদনটির তথ্যমতে, কভিড মহামারি-পরবর্তী সময়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ৭৫ শতাংশের বেশি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এ মানসিক সমস্যায় পেছনে সমীক্ষা প্রতিবেদনে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছেÑকভিড মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেশনজট ও পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে হতাশা, প্রাতিষ্ঠানিক চাপে পড়াশোনায় অনীহা, অভিভাবকদের চাপ ও কভিডের ফলে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন।
ওপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন নয়। কিন্তু শিক্ষাক্রম আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উপযোগী করে তুলতে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বিশেষ করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় ত্রুটি যেটি চিহ্নিত হয়, তা হলো পাঠ্যক্রমের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের মিল না থাকা। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর কর্মক্ষেত্রে নিজের উপযোগী কোনো কাজ পান না। ফলে তার মধ্যে হতাশা ভর করে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একের পর এক অকারিগরি বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানের সংখ্যা বাড়িয়েই চলেছে। অথচ দেশের সমৃদ্ধি ও সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষা। কিন্তু সে ধরনের শিক্ষাক্রম স্বাধীনতার ৫২ বছরেও প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। পাঠ্যক্রমে আধুনিকতা ছোঁয়া দেয়ার লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার শিক্ষা কমিশন গঠনের মাধ্যমে নতুন নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হলেও সেসব শিক্ষানীতি আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত কোনো পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি। ফলে আমাদের শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে যাচ্ছে অত্যন্ত নিরানন্দ অবস্থায়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম বিনিময়ের হার বাড়ানো জরুরি। বিশ্বের সফল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাঠদান ও শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী করে তোলার জন্য কী ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে, সে বিষয়ে প্রয়োগিক ধারণা অর্জন করে তা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে একদিকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকতার ছোঁয়া পাবে, অন্যদিকে শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে।
এটা করা সম্ভব হলে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকটাই নিশ্চয়তার মনোভাব বিরাজ করবে। এতে করে তাদের হতাশা কমবে বলে মনে করি। তাছাড়া চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞানভিত্তিক জনশক্তির সংখ্যা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। বিজ্ঞানভিত্তিক কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি বাড়ানো না গেলে অদূর ভবিষ্যতে দেশকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব সুবিধা পাওয়ার কথা, দক্ষ জনশক্তির অভাবে তা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে একটি হতাশামুক্ত কর্মোদ্যমী যুবসমাজ প্রতিষ্ঠায় আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন ঘটাতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।