সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ‘ভ্যালু ফর মানি’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি বিনিয়োগ প্রকল্প থেকে কী পরিমাণ রিটার্ন আসতে পারে, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে তা বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। তবে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল সংযোগ প্রকল্পটি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় এটি বাস্তবায়নে যে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল, বর্তমানে সে ব্যয় দেড় গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পটি অর্থনৈতিকভাবে কতটা সুফল দেবে, তা নিয়ে নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বড় অঙ্কের ঋণ নেয়া হয়েছে চীন থেকে। এ ঋণের সুদ ও সার্বিক ঋণ পরিশোধের শর্তও বেশ জটিল। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সেটির কস্ট-বেনিফিট অ্যানালিসিসটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করা উচিত বলে মনে করি।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প: মাত্র চার ট্রেনের জন্য ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে তাৎক্ষণিকভাবে চারটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। এগুলো হলোÑসুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস। এছাড়া ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসও এ রুটে চলার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া নতুন ট্রেন চালু হলে এ সংখ্যা বাড়লেও থাকবে মোট যাত্রীবাহী টেন ১০টির নিচেই থাকবে, যা খুবই কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে বিপুল বিনিয়োগের এ প্রকল্প কতটা অর্থনৈতিকভাবে দক্ষ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে। এমনকি দেশের বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পটিকে কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি দক্ষ ও সুফলদায়ক করে তোলা যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা জরুরি।
রেল সারাবিশ্বেই অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সড়ক পরিবহনের তুলনায় সাশ্রয়ী বাহন হিসেবে বিবেচিত। ইউরোপের ২৬টি দেশ নিজেদের রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে যুক্ত করার মাধ্যমে এটিকে একটি দক্ষ ও সাশ্রয়ী যাতায়াত মাধ্যমে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া চীন-জাপানের মতো অনেক দেশ অভ্যন্তরীণ রুটে হাইস্পিড ট্রেন চালুর মাধ্যমে এই যোগাযোগমাধ্যমকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সেই আমাদের দেশের রেল যোগাযোগ এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যদিও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে রেলের সম্পদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু যথাযথ দক্ষতার অভাবে বৃহৎ এ সংস্থাটি বছরের পর বছর লোকসান গুনে চলেছে। রেলের ভূ-সম্পতিসহ অন্যান্য সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা গেলে সেখান থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আহরণ সম্ভব। সেই অর্থ দিয়েই রেলের নানা উন্নয়ন কাজসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানো সম্ভব। রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক প্রতিষ্ঠানই দক্ষতার পরিচয় দিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বছরে বিপুল পরিমাণ মুনাফাও করছে। রেলের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে এটির আরও বেশি অগ্রগতি সাধনে উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।