বগুড়ায় এক টাকা কেজি দরের মুলা ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। একটি ফুলকপির দাম যেখানে ৩ টাকা, তা কয়েক হাত ঘুরে ঢাকার ক্রেতার কাছে যাচ্ছে ৩০ টাকায়। বগুড়ার কৃষক ৮ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করছেন; একই বেগুন পরদিন ঢাকার কাঁচাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে। এমনই খবর উঠে এসেছে পত্রিকান্তরে। এসব আমাদের জন্য নতুন নয়। প্রতি বছরই এভাবে কৃষকের আর্তনাদে শীতের বাতাস আরও ভারী হয়ে ওঠে। শুধু শীতের পণ্যেই নয়, যখন যেভাবে সম্ভব দাম কম দিয়ে একদিকে ঠকানো হচ্ছে কৃষকদের; অন্যদিকে বেশি দামে বিক্রি করে ঠকানো হচ্ছে ক্রেতাদের। মাঝখানের মানুষদের লাভে লাভ!
বাজার ব্যবস্থায় মনিটরিং একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। ব্যবসায়ীরা যদি এর নীতিনৈতিকতা মেনে চলেন, তাহলে সবচেয়ে ভালো; না হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টকে অনাকাক্সিক্ষত হলেও হস্তক্ষেপ করতে হয়। এটি করতে হয় বাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে, পণ্যের যথাযথ দাম ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে, কৃষকদের উৎসাহিত করতে এবং সর্বোপরি ভোক্তা অধিকার রক্ষার্থে। আমাদের বাজারগুলো অবশ্য সব দিক দিয়েই ব্যতিক্রম। পত্রিকার খবর অনুসারে, যে ফুলকপি ফলাতে নিজের শ্রম বাদ দিয়েও কৃষকের খরচ হয়েছে ৮ টাকা, সেই ফুলকপি বিক্রি হয়েছে মাত্র তিন টাকায়। সব তত্ত্ব অকার্যকর প্রমাণ করে ঢাকায় এনে লাভ করা হচ্ছে প্রায় দশগুণ! একে অবিশ্বাস্য না বলে ডাকাতি বলাই ভালো। বাইরে থেকে যেসব পণ্য ঢাকায় আসে, সেগুলোর পরিবহন খরচ আছে। আছে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। এতে খরচ কিছুটা বাড়ে সত্যি; কিন্তু তাই বলে সব মিলিয়ে ৮ থেকে দশগুণ বাড়া সম্ভব নয়। এ থেকে বোঝা যায়, মাঝখানের অংশটি বড়সড় লুটপাট চালাচ্ছে। কৃষকরা মনে করছে, ফড়িয়া ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে তাদের কাছ থেকে দাম কমাচ্ছে
যদিও আড়তদাররা বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। অন্যদিকে পাইকাররা দোষ চাপাচ্ছেন খুচরা বিক্রেতাদের ওপর। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, দুদিক থেকেই এটা চলছে। রাজধানীর কারওয়ানবাজার পাইকারি মার্কেটে যে ফুলকপি ৭ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়, তা খুচরা বাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা হয় কীভাবে? কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম টানিয়ে দেওয়ার বিধান আছে, কিন্তু সেটি যথাযথভাবে মানা হয় না। কড়াকড়ি চললে ব্যবসায়ীরা কিছুদিন নিয়ম মেনে চলেন, পরে আবার সবকিছু চলে আগের মতো, নিয়মহীনভাবে। ব্যবসায় লাভ করতে হবে সত্যি; কিন্তু কতটুকু লাভ করতে হবে, তারও মাত্রা থাকা প্রয়োজন। সবারই মনে রাখা প্রয়োজন, কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যে লাভ না পেলে পরবর্তী বছরে সেটি ফলনে উদ্বুদ্ধ হবেন না। তখন ক্ষতিটা হবে সবারই। কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না আর ক্রেতা বিমুখ হলে ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবেন না, গতিশীল থাকবে না অর্থনীতির চাকা। এ অরাজকতা বন্ধের জন্য আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই।