শওকত আলী: লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষিঋণ বিতরণ করতে পারছে না নতুন প্রজšে§র ব্যাংকগুলো। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাপক পিছিয়ে রয়েছে তারা। বার বার তাগিদ দেওয়া হলেও কৃষিঋণ বিতরণ করছে না ব্যাংকগুলো।
কৃষিঋণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, নতুন প্রজšে§র ৯টি ব্যাংকের মধ্যে পিছিয়ে রয়েছে ৭টি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ফারমার্স ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড। এছাড়া এ তালিকায় রয়েছে মেঘনা, মধুমতি, এনআরবি কমার্শিয়াল, এনআরবি গ্লোবাল ও সাউথ বাংলা ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরে ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১০৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটি (জুলাই-নভেম্বর) পাঁচ মাসে ঋণ বিতরণ করেছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ইউনিয়ন ব্যাংকের ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। কিন্তু উল্লিখিত সময়ে ব্যাংকঋণ বিতরণ করতে পেরেছে ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার দশমিক ৮০ শতাংশ।
এছাড়া উল্লিখিত সময়ে মেঘনা ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ১৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংক ১ দশমিক ১০ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ৬ দশমিক ১০ শতাংশ, এনআরবি গ্লোবাল ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং সাউথ বাংলা ব্যাংক ২৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে।
তবে নতুন প্রজšে§র দুটি ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে বেশ ভালো করেছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ‘মিডল্যান্ড ব্যাংক’ সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে। ব্যাংকটি তাদের পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ মাসেই অতিক্রম করে গেছে। ব্যাংকটির পুরো বছরে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ কোটি টাকা। তারা ৫৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২৯ শতাংশ। ঋণ বিতরণে এর পরই ভালো করছে ‘এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড’। ব্যাংকটি ৫০ কোটি টাকা বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ করেছে ৪০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ।
কেন ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করতে পারছে না জানতে চাইলে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূরুল আমিন শেয়ার বিজকে বলেন, এ সময়টা মূলত আগের ঋণ রিকোভারির সময়। তাই বিতরণ কিছুটা কম হয়। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বিতরণ বেড়ে যায়। প্রতি বছরই এ অবস্থাটা বজায় থাকে। আর একটি কারণ হলো, আমাদের শাখার সংখ্যা কম থাকার কারণে কৃষিঋণ বিতরণ একটু কষ্টকর হয়ে পড়ে। বিভিন্ন এনজিও লিংকেজের মাধ্যমে এগুলো করতে হয়।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সাত হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো পাঁচ মাসে বিতরণ করতে পেরেছে তিন হাজার ৮৫২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বিদেশি ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪৩৩ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো বিতরণ করতে পেরেছে ৩২২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। যদিও ব্যাংক আল-ফালাহ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার কৃষিঋণ বিতরণ করেনি।
এছাড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো উল্লিখিত সময়ে কৃষিঋণ বিতরণ করেছে তিন হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। যা পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৩৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত আটটি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। এসব ব্যাংকের মধ্যে এখন পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএল কৃষিঋণ বিতরণে পিছিয়ে রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত, বিশেষায়িত, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো এ ৫ মাসে কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ৭ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। কোনো ব্যাংক যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারে তাহলে যে পরিমাণ ঋণ কম বিতরণ করা হবে সে পরিমাণ অর্থ বাধ্যতামূলকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করতে হবে। আর এ অর্থের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো প্রকার সুদ দেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নতুন ব্যাংকগুলোর শাখার পরিমাণ কম থাকায় তাদেরকে এমএফআই লিংকেজের (এনজিওর মাধ্যমে) মাধ্যমে কৃষিঋণগুলো দিতে হয়। তো দেখা যায় তারা প্রতিবছরই শুরুতে একটু খারাপ করলেও শেষ ছয় মাসে সেটা পূরণ করে ফেলে। বিগত অভিজ্ঞতা তাই বলছে। তাই আমরা আশাবাদী তারা তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে। না হলে শাস্তি যেটা রয়েছে সেটা তো পেতেই হবে।’