প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

খরায় বিশ্বব্যাপী কমবে চাল উৎপাদন দাম বাড়ার শঙ্কা 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২০১০ সালের পর চলতি বছর প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী চাল উৎপাদন কমবে। এতে রফতানি হ্রাস পেয়ে দামও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চালের ঝুড়িখ্যাত এশিয়ায় চলতি বছর তীব্র খরার কারণে শীর্ষ রফতানিকারক দেশ ভারত, থাইল্যান্ড ওভিয়েতনামে চাল উৎপাদন কমবে। খবর রয়টার্স।

চলতি বছর তীব্র খরার মোকাবিলা করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল রফতানিকারক দেশ ভারতে। দ্বিতীয় বছরের মতো খরার মুখোমুখি হয়েছে দ্বিতীয় রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ড। অন্যদিকে ম্যাকং নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদের পানি পায়নি তৃতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনামের কৃষকরা। এ তিনটি দেশই বিশ্বের চাল রফতানির ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। যার পরিমাণ চার কোটি ৩০ লাখ টন।

আন্তর্জাতিক শস্য সংস্থা (আইজিসির) অর্থনীতিবিদ জেমস ফেল বলেন, ‘এ মুহূর্তে খরার প্রভাব চালের বাজারে দেখা যাচ্ছে না। কারণ ভারত এবং থাইল্যান্ডের কাছে পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত রয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে তা ভাবার কারণ নেই। চালের দাম বাড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি সংস্থা ইউএসডিএ’র তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ তিন রফতানিকারক দেশে চালের যে মজুত রয়েছে তা ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে এক কোটি ৯০ লাখ টনে উপনীত হবে, যা হবে ২০০৩ সালের পর সবচেয়ে বড় বার্ষিক হ্রাস।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের বাজারে যদি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, তবে আতঙ্ক থেকেও হঠাৎ করে দাম চড়াও হয়ে উঠতে পারে। তারা জানান, ২০০৮ সালে এল নিনোর কারণে এশিয়ায় চাল উৎপাদন কমে যায়। তখন ভারত আকষ্মিক রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। ফলে বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় চালের দাম। ওই সময় থাইল্যান্ডের চালের দাম টনপ্রতি এক লাফে এক হাজার ডলারে উঠে আসে। আতঙ্ক থেকে হাইতিতে এ নিয়ে সংঘাতও হয়। ফিলিপাইনের মতো অনেক আমদানিকারক দেশে হাহাকার পড়ে যায়। চালের প্রভাবে ওই সময়ে গম ও সয়াবিনের দামও বেড়ে যায়।

তবে বর্তমান বাজারে চালের দর খুব বেশি নয়। এ মাসের শুরুতে বাজারে টনপ্রতি চালের দাম ছিল ৩৮৯ দশমিক ৫০ ডলার। যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের দাম ৩৪৪ ডলারের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি।

এশিয়ায় চালের উৎপাদন নিয়ে ফিলিপাইনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ ব্রুস টলেনটিনো বলেন, ‘এ মুহূর্তে বাজারে চালের দর স্থিতিশীল রয়েছে। দামও আস্তে আস্তে বাড়ছে। যদি শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলোর কোনো একটিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে তবে দাম দ্রুত বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ভারতে চালের উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলেও খরার কারণে দেশটির পূর্বাঞ্চলে দ্বিতীয় মৌসুমের ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আগামী বছর শুরুর দিকে চালের দাম বাড়তে পারে। যদিও ভারতের দ্বিতীয় মৌসুমের ফসল আসার কথা সেপ্টেম্বরের মধ্যে, এর পাশাপাশি থাইল্যান্ডে আসার কথা বছর শেষে।

আইসিজি জানায়, ২০১৬ সালে বিশ্বে চালের উৎপাদন হবে ৪৭ কোটি ৩০ লাখ টন, যা ২০১৫ সালের ৪৭ কোটি ৯০ লাখ টন থেকে কম। এর ফলে ছয় বছরে প্রথম চালের উৎপাদন কমছে এ বছর।

ইউএসডিএ জানায়, এ বছর খরার কারণে থাইল্যান্ডের চাল উৎপাদন এক-পঞ্চমাংশের বেশি কমে হবে এক কোটি ৫৮ লাখ টন। দেশটিতে দুই বছরের খরায় পানি খুব বেশি না থাকায় সরকারও কৃষকদের চাল উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করছে। এর পাশাপাশি ভিয়েতনামেও চাল উৎপাদন ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমবে। দেশটি এ বছর রফতানি করবে ৮৭ লাখ টন চাল। দেশটিতে খরা ও পানির অভাবে দুই লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির ধান ধ্বংস হয়েছে বলে সরকারি তথ্যে জানা যায়। থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম বছরে তিনবার ধানের আবাদ করে।