দেশের ব্যাংক খাতের ‘খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকের নির্বাহীদের দায়িত্ব দিলেন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজ কড়চায়। বুধবার ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)-এর ‘ব্যাংকিং অন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। সেখানে তিনি বলেছেন, খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা কমাতে ব্যাংকের শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন, তাদের বিশেষ করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব নিতে হবে। তারা শক্তভাবে পদক্ষেপ নিলে খেলাপি ঋণের সমস্যা কমে আসবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নীতিমালা প্রণয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
গভর্নর দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে এটি স্বীকার করতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বড় দায়িত্ব আছে। গত সোমবার খেলাপি ঋণ নিয়ে এবিবির চেয়ারম্যান বলেন, খেলাপি ঋণ সমস্যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা ব্যাংকাররা সমাধান করবেন; সেই পর্যায়ে নেই। এ সমস্যা সমাধানে সবাইকে একসঙ্গে কাজ না করলে সমাধান করা সম্ভব নয়। এখানে আইনি সংস্কারের দরকার আছে। আদালত ও বিচারক সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর্থিক বিষয়ে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া ঋণখেলাপিদের বিষয়ে কঠোর নীতি প্রয়োগ করতে হবে। এবিবি চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যর পর গভর্নরের খেলাপি ঋণ নিয়ে এমন মন্তব্য বেশ অর্থবহ।
অর্থ ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যাংকার ছাড়াও আরও পক্ষ আছে। প্রভাবশালী পক্ষ হলো ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পরিচালক পর্ষদ। বড় অঙ্কের ঋণ দানে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আছে নীতিনির্ধারক। ব্যাংক খাতের আর্থিক অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির পর জানা অনেক পক্ষের সংশ্লিষ্টতা। আমরা মনে করি, কেবল ব্যাংকারদের ওপর দায়িত্ব চাপানো সংগত হবে না। তারা বড় জোর ঋণ দানে অভিমত জানাতে পারেন, কিন্তু সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। তাই সমন্বিত পদক্ষেপেই খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বিষেজ্ঞরা বারবারই বলে আসছেন একক গ্রহীতাকে বিপুল ঋণ জোগানোর আগে সতর্ক হতে। কে সতর্ক হবে! অবশ্যই ব্যাংকার। কিন্তু তিনি কি পরিচালনা পর্ষদের কারও নির্দেশনা অগ্রাহ্য করতে পারবেন।
ঋণগ্রহীতাদের অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অথবা প্রভাবশালী কারও সহায়তায় ঋণ পান। ফলে তা পরিশোধ না করার সুযোগ নেন তারা। যারা যখন ক্ষমতায় থাকেন, তাদের সমর্থিত লোকজন ব্যাংক থেকে অর্থ বের করে নিয়ে যায়, এটিই বাস্তবতা এ প্রবণতা রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে বৈকি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ব্যবস্থাপনা নজরদারি করা। অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কি করণীয় কিছু নেই! নির্দিষ্ট সময় অন্তর খেলাপি ঋণের হালনাগাদ তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানানো হয়, ঋণ তথ্য ব্যুরো নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আলাদা বিভাগও আছে। তাহলে তাদেরও দায় নিতে হবে। খেলাপি ঋণের সঙ্গে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিষয় জড়িত। খেলাপি ঋণের জন্য একক কাউকে দায়ী না করে, দায়িত্ব না দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পক্ষকে ভূমিকা অনুসারে দায়িত্ব নিতে হবে।