একজন শিক্ষার্থীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয় হলো পরম আকাক্সক্ষার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার প্রথম দিন থেকেই ক্যাম্পাস, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে তিনি বিভিন্ন রকমের স্বপ্ন বুনতে থাকে। সারাদিন টইটই করে ঘুরে বেড়ানো, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় পার করা। ছুটির দিনগুলোয় বাসায় গেলেও ক্যাম্পাসে পড়ে থাকে মন। ক্যাম্পাসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা, ঘোরাঘুরি, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে পার হয় জীবনের অন্যতম সেরা দিনগুলো। সেশনজট ছাড়াই চারটি বছর পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টুং করে বেজে ওঠে বিদায়ের ঘণ্টা।
এই তো সেই দিন। নতুন নতুন মুখ প্রথম ক্লাস করতে এসেছিল গণবিশ্ববিদ্যালয়ে। কেউ কাউকে চেনে না, অথবা এক-দুজন পূর্ব পরিচিত। সবাই যার যার মতো যতটা পারা যায় পরিপাটি হয়েই ক্যাম্পাসে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও কর্মকর্তার উপস্থিতিতে উপাচার্য মহোদয় নবীন শিক্ষার্থীদের শপথ করানোর মধ্য দিয়ে ন্যায় ও সত্যের পথে থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসার আহ্বান জানান। এরপর ক্যাম্পাসের সেমিনার রুমে নবীনদের উদ্দেশ্যে ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানরা দিকনির্দেশনা দেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অচেনা ক্যাম্পাসটাই সবার প্রিয় হয়ে ওঠে। এগুলো আজ অতীত।
আইন বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ১৮ এপ্রিলে দিনব্যাপী র্যাগ অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে অনার্স কোর্সের শিক্ষা সমাপনী করেন। সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপর, সবাই যে যার মতো আনন্দ উল্লাসে মেতে আছে। নাচ, গান, ফ্লাশ মুভ প্রভৃতিতে মুখর ক্যাম্পাস আর রঙিন হয়ে ওঠে। সমাপনী শিক্ষার্থীরা মনে করেন, ‘আমরা শেষ করলাম তা বলা যাবে না বরং আজ থেকে শুরু হলো প্রকৃত শিক্ষা জীবনের। বিগত চার বছরের শিক্ষা সঠিক প্রয়োগ করতে পারলে কর্মজীবনে সাফল্য আসবেই। আমরা ক্যাম্পাসের প্রেমে পড়ে গেছি, তাই আমরা আসতে চাই।’
দিনের শুরুটা হাসিমুখে হলেও বিদায়লগ্নে ক্লান্ত বিকালে সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসে অশ্রুসিক্ত আর্তনাদের আধিক্য। একে অপরকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আর বিগত দিনের কষ্টগুলোকে চোখের জলে ধুয়ে মঙ্গল কামনায় আলিঙ্গনে ব্যস্ত। সবার মনে তখন যেন কেবল একই সুর, ‘আবার আসিব ফিরে’। আসলেই কি ফিরে আসবে সবাই একসঙ্গে?
এস এম আহমেদ মনি ও মুন্নি আক্তার