প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

গাজীপুরে ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ

দুদকের গণশুনানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে বিস্তর অভিযোগ। এর মধ্যে জেলার ২৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ১৬৫টি অভিযোগ তুলেছেন সেবাগ্রহীতারা। কিছু অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক সমাধান দিয়েছে দুদক। তাছাড়া ধাপে ধাপে অভিযোগ সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটি। সেবা বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার নাগরিকদের অভিযোগ সরাসরি শুনেছে দুদক। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রয়েছে ভুমি অফিসের বিরুদ্ধে।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় গাজীপুর সদরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

শুনানিতে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হয়রানি, দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষসহ নানা অভিযোগ তোলেন সেবাগ্রহীতারা। এর মধ্যে কিছু অভিযোগ ছিল সুনির্দিষ্ট, কিছু ছিল ঢালাও।

৮৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের শুনানি হয়। ৪টি অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধান ও একটি অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ৮১ টি অভিযোগ তাৎক্ষণিক সমাধান করে দুদক। পাশাপাশি অভিযোগ সমাধানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন দুদক কর্মকর্তারা।

অভিযোগ উঠা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পাসপোর্ট অফিস, পল্লীবিদুৎ অফিস, উপজেলা নির্বাচন অফিস, ভূমি অফিস, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, বিআরটি অফিস, কৃষি ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, বন বিভাগ, শিক্ষা অফিস, গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ, তিতাশ গ্যাস, সমাজসেবা অধিদপ্তর, প্রবাসী কল্যাণ অধিদপ্তর, জীবন বিমা করপোরেশন, কারা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভুমি অফিস। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রয়েছে ভুমি অফিসের বিরুদ্ধে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর বিধান অনুযায়ী গণশুনানি হয়েছে। কিছু অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া হয়েছে। কিছু অভিযোগ সমাধানের জন্য দুই-একদিন সময় চাওয়া হয়েছে। যেগুলো কিছুটা জটিল, সেসব সমাধানের জন্য এক মাস সময় নেওয়া হয়েছে। আজ এখানে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর শতভাগ সমাধান হবে।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ উঠা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। আগামী বুধবার সেবাপ্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গণশুনানিতে উপস্থাপন ও সমাধান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অনুষ্ঠানে শহীদ তাউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সামসুদ্দিন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা কাঙিক্ষত সেবা পান না। চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে যেই ওষুধ লেখেন তার সবগুলো হাসপাতালে পাওয়া যায় না, বাইরে থেকে কিনতে হয়। হাসপাতালটিতে দালালচক্রে ভরা। সদর ভূমি অফিস নিয়ে অভিযোগ করেন রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ওই অফিসে নামজারি করতে হলে ১২ হাজার টাকা দাবি করেন। পাসপোর্ট নিয়ে নানা হয়রানির ও বিরম্বনার অভিযোগ করেন গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকার আলেক মিয়া।

গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ ও গণসচেতনতা) আক্তার হোসেন, ঢাকা বিভাগের পরিচালক মোরশেদ আলম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান, গাজীপুর পুলিশ সুপার কাজী শরিফুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এম.এ.বারী এবং সাধারণ সম্পাদক মুকুল কুমার মল্লিক এবং গাজীপুর জেলার অধিকাংশ সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা।