শেয়ার বিজ ডেস্ক : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাজীপুর-১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনসংযোগ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তৎপরতা বেড়েছে। নির্বাচনের দিন-তারিখ সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা না হলেও বিএনপি বাদে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন গাজীপুরের ছয়টি আসনে এবং গণঅধিকার পরিষদ একটি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে বিএনপিতে রয়েছে কোন্দল। আসনটিতে চারটি ভাগে বিভক্ত দলটির নেতাকর্মীরা।
গাজীপুর-১ আসনটি পুরো কালিয়াকৈর উপজেলা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৭৫ হাজার ২৭৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৪১ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ৩৮ হাজার ২৭ জন।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে গাজীপুর সদরের বাসন, কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর ইউনিয়নকে যুক্ত করে আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। পরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও আরেক দফা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে আসনের সীমানা ফের বিন্যাস করা হয়।
আসনটি মূলত আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার আগ পর্যন্ত এ আসনের এমপি ছিলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ আসনটি একসময় শ্রীপুরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে এখান থেকে এমপি হন জাতীয় পার্টির মতিউর রহমান। ১৯৯১ সালে জয়ী হন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এমপি হন বিএনপির তানবীর আহমেদ সিদ্দিকী। ১৯৯৬ সালের জুন ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আবার জয়ী হন রহমত আলী। এরপর ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা চারটি নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আ ক ম মোজাম্মেল হক।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পলাতক দলটির নেতাকর্মীরা। বর্তমানে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি দখলে নিতে নানা কৌশলে মাঠে কাজ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে। তবে এ আসনে বিএনপির নেতাদের মধ্যে কোন্দল বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। এখানে বিএনপি চার ভাগে বিভক্ত। দীর্ঘদিন ধরেই চারটি গ্রুপ সক্রিয় আছে। সম্প্রতি কালিয়াকৈর থানা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর ছেলে চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী এবং সাবেক পৌর মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান এই চারটি গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন। ধানের শীষের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তারা।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুল বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছি। দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছি। ফলে দলের মনোনয়নের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’
কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির খান বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন চাইবো। দল যদি মনোনয়ন দেয়, তবে এ আসন থেকে ধানের শীষকে বিজয়ী করে আনবো।’
সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি মেয়র থাকাকালে এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। জনগণের পাশে থেকেছি। আশা করছি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’
চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার বাবা চৌধুরী তানভীর আহমদ সিদ্দিকী এই এলাকার মানুষের প্রিয়জন। তার অবদান অনেক। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। আমি বিগত দিনগুলোতে এলাকার মানুষের ও নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। আশা করছি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’
বিএনপির নেতাকর্মীরা চার ভাগে বিভক্ত হলেও জামায়াতের ইসলামীর নেতাকর্মীরা একক প্রার্থী নিয়ে নির্ভার আছেন। আসনটিতে জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক সচিব শাহ আলম বকশিকে।
শাহ আলম বকশি বলেন, ‘আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি। জনগণ আমাদের কথা শুনছেন। আগামী নির্বাচনে এ আসনের জনগণ খুব ভেবেচিন্তে ভোট দেবেন। আশা করছি দাঁড়িপাল্লার জয় হবে।’
মানুষ এখন পরিবর্তন চায় বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী জি এম রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘মানুষ কয়েকটি দলের শাসন দেখছে। এখন জনগণ পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দেবে বলে আশা করছি।’
কোনাবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলে এ আসনে বিএনপির সম্ভাবনা বেশি। তবে জামায়াতে ইসলামীরও জনপ্রিয়তা বাড়ছে।’
মধ্যপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন দিলু বলেন, ‘এ আসনে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রী ছিলেন। এবার বিএনপির সুযোগ আছে। তবে এলাকার হিন্দু ভোট ও আওয়ামী লীগের ভোট যে দিকে যাবে, তারাই নির্বাচিত হবেন বলে মনে হচ্ছে।’
এস এস/
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post