প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

চলছে দফায় দফায় সংঘর্ষ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সাথে চলা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গতকাল রাত থেকে চলা এই সংঘর্ষ, আজ সকালে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে। আজ সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা সংঘব্ধ হলে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরাও একত্র হয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। এর ফলে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে নিউ মার্কেট এলাকার নূরজাহান ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে শিক্ষার্থীদের আগুন দেওয়ার খবরে ব্যবসায়ীরা আবারও বিক্ষুব্ধ হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেছেন। অন্যদিকে পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে মুহুর্মুহু কাঁদানে ও টিয়ারশেল গ্যাস নিক্ষেপ করছে। ইতোমধ্যে ঢাকা কলেজের সামনের সড়ক, নূরজাহান মার্কেটের সামনের অংশ টিয়ার শেল ছুড়ে ফাঁকা করেছে পুলিশ।

টিয়ার শেলে টিকতে না পেরে দৌড়ে সরে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এতে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তখন থেমে থেমে গলি ও বিভিন্ন আবাসিক, একাডেমিক ও মার্কেটের ভবন থেকে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ, ব্যবসায়ী সমিতি কামরাঙ্গীরচর থেকে আনা টোকাইদের দিয়ে হামলা করাচ্ছে। শিক্ষকরা সমঝোতার জন্য গেলেও হামলা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছে।

এদিকে নিউ মার্কেট এলাকার বিভিন্ন দোকানের শিশু কর্মচারীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। তাদের অনেকেই আহত হয়েছে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে তারা জানতে পারেন, রাতে তাদের অনেকেই ব্যবসায়ীদের হামলায় আহত হয়েছেন। এরপর সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা নূরজাহান মার্কেটসহ ঢাকা কলেজের আশেপাশের মার্কেটগুলোতে লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে। এ সময় ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা তাদের ওপর হামলা করে। পরে ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থী নূরজাহান মার্কেটের ছাদে ওঠেন। সেখানেও তাদের ওপর হামলা করা হয়। শিক্ষার্থীদের অনেকেই গুরুতর জখম হয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে দুই পক্ষই ইটপাটকেল মারতে থাকে। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হামপাতালে নিতে দেখা যায়। নিউমার্কেট ফুটওভার ব্রিজের নিচে পুলিশ অবস্থান নেয়। তাদের পেছনে গাউছিয়া ও চাঁদনি চকের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা অবস্থান নেন। মার্কেটের ওপর দোকান কর্মচারীরা উঠে ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। অপরদিকে, শেখ রাসেল অ্যাকাডেমিক ভবনের ছাদে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। সেখান থেক তারাও মার্কেট লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন।

দুপুর ১টার দিকে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা মিরপুর সড়ক ছেড়ে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। নূরজাহান মার্কেটের নিচ তলায় এক দল শিক্ষার্থী অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করে। তবে কর্মচারীরা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে।

পুলিশ দফায় দফায় টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড মেরে ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কর্মচারীদের পরিচয় পেয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলা করে। এসব ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের মারধর করেন তারা। অনেকের মেমোরি কার্ড ও ক্যামেরা নিয়ে যায় কলেজ শিক্ষার্থীরা।

বেলা দেড়টার দিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য একটি কালো নোহা মাইক্রোবাসে ঢাকা কলেজে প্রবেশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা আরও উত্তেজিত হন। ঢাকা কলেজের পুকুরপাড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি আলোচনায় বসেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা লেখককে বলেন, ‘কেন কমিটি দেওয়া হলো না। কমিটি দিলে আজকে এই পরিস্থিতি হতো না।’লেখক শিক্ষার্থীদের জবাবে বলেন, ‌‘কমিটি দিলে কী হবে। এখন আবার বরখাস্ত করতে হতো।’ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের বর্তমানে কোনও কমিটি নেই। ছাত্রদের বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হামলা করতে দেখা গেছে।

এদিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সেও হামলা চালিয়েছে নিউমার্কেটসহ আশপাশের বিভিন্ন মার্কেটের দোকানের কর্মচারীরা। তবে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর রোগী ছিল কি না তা জানা যায়নি।

এর আগে সোমবার রাতের সংঘর্ষের জেরে সকাল থেকে নিউ মার্কেট এলাকা ও নীলক্ষেত মোড়ে জড়ো হয়ে রাস্তা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ফলে সাইন্স ল্যাবরেটরি থেকে আজিমপুর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চলতে থাকে থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এ ঘটনা শুরুতেই শেষ হয়ে যেত যদি পুলিশ ও ব্যবসায়ীরা মিলে হামলা-গুলি না ছুড়ে সমঝোতায় আসতেন।

সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ‘কথা-কাটাকাটির জেরে’ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী ও দুই ব্যবসায়ী আহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।