প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

চলতি মাসে নিন্মমুখী ধারায় আমদানি

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস

সাইদুর রহমান, চট্টগ্রাম: ডলারের সংকট কাটাতে গত মে মাসে আমদানিতে কঠোরতা আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে নগদ মার্জিন হার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা হয়েছিল। অর্থাৎ কম প্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি বা নিরুসাহিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে গত ছয় মাসের তুলনায় চলতি মাসে আমদানির পরিমাণ কমে গেছে।

চট্টগ্রাম শুল্কস্টেশনে চলতি মাসে ২১ আগস্ট পর্যন্ত বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়েছে ১৩ হাজার ৪১১টি। যদিও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গত ছয় মাসে গড় বিল অব এন্ট্রির সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ২২ হাজার। কিন্তু চলতি মাসে আগের ছয় মাসের তুলনায় কম বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়েছে। অর্থাৎ আমদানির পরিমাণ আগের তুলনায় কমেছে। তবে মাস শেষে এই ব্যবধান আরও কমে আসবে বলে জানান কাস্টমস কর্তারা। সূত্র জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয় ২১ হাজার ১৯৯টি, তারপর মার্চ মাসে ২৩ হাজার ৬২টি, এপ্রিল মাসে ২২ হাজার ৬০৩টি, মে মাসে ২১ হাজার ২২৬টি, জুন মাসে ২৫ হাজার ৫৪৫টি এবং জুলাই মাসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয় ২১ হাজার ৩৬২টি।

এদিকে গত কয়েক মাসে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি খোলাবাজারেও দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১২১ টাকা পর্যন্ত ডলারের দাম উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকা ২০ পয়সা; যা মাস শেষে অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। তারপর ঈদের ছুটি শেষে একই দাম থাকলেও ১০ মে ৭০ পয়সা হয়ে যায়, তারপর ১৭ মে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা এবং ৩১ মে বেড়ে দাঁড়ায় ৮৯ টাকা। মূলত জুন মাসের শুরু থেকে ক্রমান্বয়ে ডলারের দাম বাড়তে থাকে অর্থাৎ জুন মাসের শুরুতে ৮৯ টাকা থাকলেও মাস শেষ হয় ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সায়। তারপর জুলাই মাস শেষ হয় ৯৪ টাকা ৭০ পয়সায়। সর্বশেষ গতকাল (২২ আগস্ট) আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের দর ছিল ৯৫ টাকা। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ১০৫ থেকে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সায় ঋণপত্র নিষ্পত্তি করতে দেখা গেছে। আর খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ১১২ থেকে ১১৩ টাকা পর্যন্ত।

একাধিক আমদানিকারক জানান, ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানি কমেছে। তবে বর্তমানে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের মূল্য ৯৫ টাকা হলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণপত্র পরিশোধের হার ১০০ টাকার বেশি। এ বিষয়ে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের এক আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্য ৯৫ টাকা হলেও কিছুক্ষণ আগে খাতুনগঞ্জ গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে এলসির পেমেন্ট দিয়ে আসছি। যদিও অন্য আরও একটি বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে আমি লেনদেন করি। ওই ব্যাংকে ১০২ টাকায় পেমেন্ট দিতে পারতাম। কিন্তু এখানে কোনো তদারকি নেই। ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছে মতো ডলারের মূল্য নির্ধারণ করছে।’ তিনি আরও বলেন, এলসি নগদ মার্জিন ৭৫ শতাংশ করার কারণে আমদানির পরিমাণ কমেছে। আগে সমপরিমাণ মার্জিন দিয়ে যে পরিমাণ এলসি খুলতে পারতাম এখন তার চার ভাগের এক ভাগও হচ্ছে না।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পদক্ষেপে বিদেশ থেকে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, এসির মতো বিলাস পণ্য আমদানিতে এলসির মার্জিন হার তিনগুণ বাড়ানো হয়। তবে জরুরি ও নিত্যপণ্য আমদানিতে মার্জিন ঋণ-সংক্রান্ত আগের নির্দেশনা বহাল থাকবে বলে সার্কুলারে বলা হয়েছিল। যদিও তার আগে গত ১১ এপ্রিলে জরুরি ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে একদফা কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন এলসি খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়। তার আগে এ হার ব্যাংক তার গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে ঠিক করত। অর্থাৎ আগে যেখানে সামান্য টাকা মার্জিন রেখে এলসি খুলতে পারতেন ব্যবসায়ীরা, বর্তমানে সে সুযোগ না থাকায় আমদানির পরিমাণ কমেছে। এতে ডলারের সংকট কিছুটা কমলেও রাজস্ব হারাচ্ছে কাস্টমস। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, আমদানি কমার ফলে রাজস্ব আয় কমবে। তবে আমরা আমাদের নিয়ম অনুসরণ করে যাব এবং আমাদের কর্মকর্তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করব। যেহেতু আমদানি কমার ক্ষেত্রে আমাদের হাত নেই। আমরা চাইব দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে রাজস্ব আয়ের প্রবাহ ঠিক রাখতে।