প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

চাহিদার আড়াই শতাংশ পূরণ করছে দেশি তুলা

 

জাকারিয়া পলাশ: গত আট বছরে দেশি তুলার উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। তবে তা দেশের বস্ত্রশিল্পের মোট চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য মাত্র আড়াই শতাংশ। চাহিদার তুলনায় সীমিত হলেও তুলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রায় এক লাখ লোকের জীবিকা। তুলার উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে থাকলেও লোকবলের অভাবে এ সংক্রান্ত গবেষণা এগিয়ে নিতে পারছে না তুলা উন্নয়ন বোর্ড।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মোট তুলা উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে এক লাখ ৫৩ হাজার বেল (১৮২ কেজিতে এক বেল) তুলার আঁশ এবং প্রায় ৭০ হাজার টন বীজ (আঁটি) উৎপন্ন হয়েছে। সমভূমি ও পাহাড়ি এলাকায় আলাদা রকমের তুলা হয়। এর মধ্যে সমতল ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, রাজশাহী কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ অঞ্চলের ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে ‘আপল্যান্ড কটন’ উৎপন্ন হয়। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ১৭ হাজার হেক্টর পাহাড়ি জমিতে ‘হিলকটন’ উৎপন্ন হয়।

আট বছর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশের পাহাড় ও সমতল মিলে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে ৭০ হাজার বেল  তুলার আঁশ এবং ৩২ হাজার টন বীজ উৎপাদন হয়েছিল। অর্থাৎ আট বছরে তুলার উৎপাদন ১১৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি বছরই ধারাবাহিকভাবে তুলার উৎপাদন বেড়েছে।

তবে বর্ধিত এই উৎপাদন দেশের পোশাক শিল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। দেশের পোশাক শিল্পে তুলার বর্তমান চাহিদা হচ্ছে প্রায় ৬০ লাখ বেল। সে হিসাবে দেশি তুলার মাধ্যমে শিল্পের মোট চাহিদার মাত্র আড়াই শতাংশ পূরণ হচ্ছে। এর মধ্যেও পাহাড়ে উৎপন্ন তুলার (হিলকটন) আঁশগুলো খাটো হয়ে থাকে। ফলে সেগুলো লুঙ্গি-গামছার জন্য ভালো হলেও রফতানিমুখী গার্মেন্ট শিল্পে ব্যবহার হয় না। পাহাড়ে উৎপাদিত ওই তুলা বাদ দিলে পোশাক খাতের মোট চাহিদার তুলনায় দেশি তুলার (আপল্যান্ড) অংশ হয় আরও কম।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, ২০০৬ সালে দেশের পোশাক শিল্পে মাত্র ১৬ লাখ বেল চাহিদা ছিল। এরপর থেকে তুলা উৎপাদন গাণিতিক হারে বাড়লেও পোশাক শিল্পের আকার বেড়েছে আরও বেশি। ফলে দেশে উৎপাদিত তুলার পক্ষে এ খাতের সব চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়।

তুলার চাহিদা মেটানো সম্ভব না হলেও তুলার বিশেষ অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। এ বিষয়ে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘তুলা খুবই লাভজনক পণ্য। উত্তরাঞ্চলের জমিতে গড়ে ছয় হাজার টাকা খরচে বিঘাপ্রতি ১০ মণ ধান হয়। একই পরিমাণ জমিতে আট হাজার টাকা খরচে তুলার উৎপাদনও হয় ১০ মণ। কিন্তু ধানের মণপ্রতি দাম সাতশ টাকা। অপরদিকে তুলার দাম মণপ্রতি দুই হাজার টাকারও ঊর্ধ্বে। চলতি বছর দেশি তুলার দাম নির্ধারিত হয়েছে প্রতি মণ দুই হাজার তিনশ টাকা। নভেম্বর থেকে তুলা সংগ্রহ শুরু হয়। মার্চ পর্যন্ত চলে সংগৃহীত তুলার বেচাকেনা।’

তিনি আরও জানান, তুলার বীজ ও আঁশ উভয়ই অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দেশে ৮৫ হাজার চাষি তুলা চাষ করে থাকেন। আঁশ দিয়ে সুতা তৈরির পাশাপাশি বীজের মাধ্যমে তৈরি হয় পশুখাদ্য খৈল ও তেল। এছাড়া কার্পাশ সংগ্রহের পর বীজ ও আঁশ আলাদা করার জন্য রয়েছে জিনিং মেশিন। অনেক লোক জিনিং শিল্পে কাজ করে। দেশে প্রায় ১৬টি জিনিং মেশিন রয়েছে। সাধারণত চাষিদের কাছ থেকে জিনাররাই তুলা কেনে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তুলা চাষ লাভজনক হলেও নানা কারণে চাষিরা এতে আগ্রহী হতে পারছেন না। সাধারণত অন্যান্য ফসল চাষে চার মাস লাগলেও তুলা চাষে ছয় মাস সময় লাগে। বাংলাদেশে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও ছয় মাসের কম সময়ে তুলা চাষ করা যায়নি।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অপর এক গবেষক জানান, অন্যান্য দেশে চার মাসেই তুলা গাছের চারা হওয়া থেকে ফসল আহরণ পর্যন্ত করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে আবহাওয়ায় এটা সম্ভব হয়নি। আমরা ব্রাজিল, পাকিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান থেকে তুলার বীজ এনে পরীক্ষা করেছি। চীন থেকেও বীজ আনা হয়েছে। গবেষকরা আরও জানান, তুলায় পোকার আক্রমণ দমন করা গেলে ফলন আরও বৃদ্ধি সম্ভব। এজন্য বিটি-কটন নামে বিশেষ প্রজাতির তুলা গাছ আমদানি করা হয়েছে, যা সহজে পোকায় আক্রমণ করে না। অচিরেই তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পাঁচটি খামারে পরীক্ষামূলকভাবে চাষের চেষ্টা চলছে ওই প্রজাতির। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে ওই খামারের তত্ত্বাবধান এগোচ্ছে না। সূত্র জানায়, ‘নিয়োগবিধির’ জটিলতায় তুলা উন্নয়ন বোর্ডে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়া এগোচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।