প্রতিনিধি, সিলেট : দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা মেনে নিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হলেও এ নিয়ে চা শ্রমিকদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। শনিবার (২০ আগস্ট) বিকেলে শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠকের পর শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল।
কিন্তু এদিন বিকেলেই চা শ্রমিকদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। এই সিদ্ধান্ত অসন্তুষ্ট সিলেট ভ্যালির চা শ্রমিকরা। তারা কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখবেন বলে ঘোষণা দেন।
রাতে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে চা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা বলেন, আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক পর্যন্ত স্থগিত করেছি। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে ফিরে আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন। তার সম্মানেই ততদিন পর্যন্ত আমরা আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রাজু গোয়ালা আরও বলেন, মজুরি মাত্র ২৫ টাকা বাড়ানোয় আমরা কেউই সন্তুষ্ট নই। তারপরও প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে আমাদের সঙ্গে বসবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান জানিয়ে ধর্মঘট আপাতত স্থগিত রেখে রোববার (২১ আগস্ট) থেকে কাজে যোগ দেবো।
তিনি বলেন, আমাদের সিলেট ভ্যালির ২৩ বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলন স্থগিত করতে সম্মত হয়েছি, সারাদেশের কথা জানি না। এ নিয়ে আমরা সব বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সঙ্গে বসবো এবং রোববার থেকে শ্রমিকরা যথারীতি কাজে যোগ দেবে।
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা উন্নীত করার দাবিতে গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে ছিলেন চা শ্রমিকরা।
উদ্ভূ পরিস্থিতিতে শনিবার ( ২০ আগস্ট) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দফতরের কার্যালয়ে শ্রম অধিফতর ও সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক নেতারা। ওই বৈঠকে চা শ্রমিকদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার প্রস্তার দেয়া হয়। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি জানানো হয়। এই আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারে রাজি হয়ে কাজে যোগ দেয়ার কথা জানান শ্রমিক নেতারা।
বৈঠকে চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করার বিষয়টি জানিয়ে বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে তাদের সঙ্গে বসবেন বলেও জানান।
এদিকে, নেতাদের এই সিদ্ধান্তের পরপরই বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ শ্রমিকরা। তারা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ারও কথা ঘোষণা দেন।
চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সভাপতি রিতেশ মোদী বলেন, সাধারণ শ্রমিকরা এ সমঝোতা মানছে না। তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যেতে চায়। তাই রোববার থেকেশ্রমিকরা কাজে যোগ দেবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।