সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে চীনা আদার অর্ধেক দামে। দেশি আদার এ মৌসুমে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে পণ্যটি বাজারে আসছে। কিন্তু চীনা আদার চেয়ে দেশি আদার চাহিদা ও দাম কম থাকায় লোকসানের মুখে পাইকাররা।
খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার কয়েকটি আড়ত ও দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল পাইকারিতে চীনা আদা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৭০-৭২ টাকায়। আর একই বাজারে দেশি আদা ২৮-৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ পাইকারিতে দেশি আদার চেয়ে চীনা আদা কেজিতে ৪০-৪২ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে গত এক মাস ধরে দেশি আদা বাজারে আসছে। প্রথমদিকে পণ্যটি কেজিপ্রতি ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও চাহিদা মন্দা থাকায় প্রতিনিয়ত দাম কমছে। ভরা এ মৌসুমে পণ্যটির সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা মন্দার কারণে দাম কমেছে বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি ব্যবসায়ী এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, দেশি আদার ঝাঁজ বেশি এবং মানেও ভালো। কিন্তু আকারে ছোট হওয়ায় ক্রেতারা এ আদা কিনতে আগ্রহ দেখান না। এছাড়া দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। ফলে বাজারে চীনা আদার চাহিদা বেশি। তাই দামে এ পার্থক্য।
এদিকে ১৫ দিনের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে চীনা আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ৮-১০ টাকা। বর্তমানে চীনা আদা প্রতি কেজি ৭০-৭২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, দুই সপ্তাহ আগে তা ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অন্যদিকে একই সময়ের ব্যবধানে দেশি আদার দাম কমেছে কেজিতে প্রায় সাত টাকা। দুই সপ্তাহ আগে দেশি আদা প্রতি কেজি ৩২-৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ২৮-৩০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘এ বাজারে মশলাজাতীয় পণ্য পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের বাজার এখনও আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে দেশে আদা ও রসুনের উৎপাদন বছর বছর বৃদ্ধি পেলেও মৌসুমের সময় পণ্য দুটির দাম পাওয়া যায় না।
আরেক আমদানিকারক শাহাদাত হোসেন বলেন, বর্তমানে বাজারে দেশি আদার যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখন যেসব আদা আসছে, সেগুলো চীনা আদার তুলনায় অনেক ভালো। কিন্তু চীনা আদার চেয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে। চীনা আদা দেখতে সুন্দর ও কিছুদিন সংরক্ষণ করা যায়। তাই ভোক্তাদের কাছে চীনা আদার চাহিদা বেশি।
এ বাজারের অধিকাংশ পাইকার বলেন, বছর বছর দেশে আদা ও রসুন উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু মৌসুমের সময় পণ্য দুটির দাম থাকে খুবই কম। এভাবে কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেলে উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। তাই কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও দেশি পণ্যের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ বাড়াতে মৌসুমের সময় চীনা আদার আমদানি কমাতে হবে। অতিমাত্রায় আমদানিনির্ভর বাজার হয়ে পড়লে কৃষক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি আমদানি ব্যয়ও বাড়বে।
উল্লেখ্য, দেশে বছরে আদার চাহিদা প্রায় তিন লাখ টন। আর উৎপাদন হয় দুই লাখ ২০ হাজার টন। পাশাপাশি বছরে গড়ে এক লাখ টন আদা আমদানি করতে হয় (চাহিদার ২৭ শতাংশ)। এর মধ্যে আমদানি করা আদার ৫০ শতাংশ ভারত, ৩০ শতাংশ চীন আর ২০ শতাংশ ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে।