নারী-পুরুষ উভয়েরই চুল পড়ে। বংশগত সমস্যা, বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, কম সক্রিয় থাইরয়েড গ্ল্যান্ড, অপর্যাপ্ত পুষ্টি ও মাথার ত্বকে অপর্যাপ্ত রক্তসঞ্চালন চুল পড়ার অন্যতম কারণ। দৈনন্দিন জীবনের অনেক খাবার চুলের শক্তিশালী গড়ন ও সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত চুল পড়া রোধে যা করবেন নিয়মিত প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ খাবার খান। মাছে বিশেষত সামুদ্রিক মাছ ও শুঁটকিতে এই এসিড প্রচুর থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের কোলাজেন দ্রুত ভেঙে যায়, ফলে চুল হয়ে পড়ে ভঙ্গুর। এই কোলাজেন টিস্যু বাড়াতে ভিটামিন-সি গুরুত্বপূর্ণ। সব সাইট্রাস ফুড, যেমন আমলকী, লেবু, স্ট্রবেরি ও লাল মরিচ থেকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি।
বায়োটিন নতুন চুল গজানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উচ্চ মূল্যের বায়োটিন ক্যাপসুল কিনে খাওয়ার চেয়ে প্রতিদিন সামান্য বাদাম ও ঢেঁকিছাঁটা চাল শরীরে প্রচুর পরিমাণে বায়োটিনের জোগান দিতে পারে।
ক্যারোটিন প্রোটিন চুলের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। লতাপাতাযুক্ত সবজি, বাঁধাকপি ইত্যাদিতে এটি পাওয়া যায়।
চুলের বৃদ্ধি ও নতুন চুল গজানোর ক্ষেত্রে আয়রনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কম দামি সবুজ শাকসবজি, কলা, জাম ও কাজুবাদাম আয়রনসমৃদ্ধ খাবার। তবে খাবার থেকে আয়রন গ্রহণের জন্য শরীরে প্রচুর ভিটামিন সি প্রয়োজন। মিনারেল সিনিকা ও জিংক চুলের বৃদ্ধিতে অপরিহার্য। প্রতিদিন এক হাজার মিলিগ্রাম সিনিকা এবং ৩০ মিলিগ্রাম জিংক চুল গজানোয় ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়ক। শসা, আম, সবুজ শাকসবজি, শিমÑএগুলোয় প্রচুর সিনিকা পাওয়া যাবে। ডিম ও লাউয়ের বিচিতে উচ্চমাত্রায় জিংক পাওয়া যায়।
প্রতিদিন নিয়মিত ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (১০০ মিলিগ্রাম) গ্রহণ করলে এটি চুল পাতলা হওয়া প্রতিরোধ করার পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। ভিটামিন ই চুলের ভঙ্গুরতা কমিয়ে ক্যারোটিন প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে। শর্ষের তেল, জলপাই তেল ও পালংশাকে পর্যাপ্তভাবে এই ভিটামিন পাওয়া যায়। মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধিতে কুসুম গরম নারকেল তেল অথবা ‘রোজম্যারি অয়েল’ নিয়মিত সপ্তাহে অন্তত দুদিন ম্যাসাজ করা ভালো। ভিটামিন ডি চুলের বৃদ্ধি ও উজ্জ্বলতা তৈরিতে সাহায্য করে। থাইরয়েড গ্ল্যান্ড অনেকাংশেই চুল পাতলা হয়ে যাওয়া ও টাক পড়ার জন্য দায়ী। থাইরয়েড সমস্যার রোগী আমাদের দেশে প্রচুর। তাই অতিরিক্ত চুল পড়লে থাইরয়েড পরীক্ষা করে নিন। বংশগত চুল পড়া বা টাকের চিকিৎসায় ফাইনাস্টেরাইড মিনোক্সিডিল লোশন এবং স্থায়ী সমাধান হিসেবে চুল প্রতিস্থাপন করা কার্যকর।
ডা. জাহেদ পারভেজ
কনসালট্যান্ট, ডার্মাটোলজিস্ট ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল