জনাব আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে সমধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন অর্থমন্ত্রী। সফলতার দিক দিয়েও তিনি অন্যতম। তার ব্যক্তিত্ব, পাণ্ডিত্য ও পেশাদারিত্ব, অকপট বক্তব্য এবং সামাজিক জীবনের নানাবিধ বিষয়ে সম্পৃক্ত থাকায় তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে আমি তাঁর মন্ত্রণালয়ের ইআরডির (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের) প্রতিনিধি হিসেবে ২০০৯-২০১২ মেয়াদে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশস্থায়ী মিশনে কাজ করি। ছাত্রজীবন থেকেই আমি তাঁর বিষয়ে আগ্রহী ছিলাম। ১৯৭৬-৭৮ সালে সিলেটে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশুনার সময় তাঁর সম্পর্কে বিশেষভাবে জানতে পারি। এমসি কলেজ থেকে সিলেট বন্দর বাজারে যাতায়াতের সময় তাঁর পৈত্রিক বাড়িটি আমাদের কৌতুহলের বিষয় ছিল। তাঁর পিতা জনাব আব্দুল হাফিজ সিলেট আইন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর সবচেয়ে ছোটবোন মিসেস রিও আজিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে আমাদের সমসাময়িক ছিলেন। তার ছোট ভাই ও বর্তমানে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে আমি নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ মিশনে ইকনোমিক মিনিস্টার হিসেবে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করি।
জনাব মুহিত প্রথম মেয়াদে অর্থমন্ত্রী থাকাকালেতাঁর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাতের সুযোগ হয় এক অনুষ্ঠানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জালালাবাদ ছাত্রকল্যাণ সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সিলেট অঞ্চলের (সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ) ছাত্রছাত্রীদের একটি মেধাবৃত্তি প্রদানের প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। উক্ত সমিতি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কৃতি ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদানের জন্য ১৯৮২ সালের শেষের দিকে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে শাহাবাগস্থ ডায়াবেটিক হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে। প্রধান অতিথি ছিলেন এরশাদ সরকারের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী জনাব এএমএ মুহিত। আমি সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স পরীক্ষায় প্রথমস্থান অধিকার করায় তাঁর হাত থেকে বৃত্তির চেক গ্রহণ করি। মনেপড়ে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আমার প্রিয় শিক্ষক ডঃ রঙলাল সেন । অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মোফাজ্জল করিমওবক্তব্য দিয়েছিলেন। সভায় বিভিন্ন বক্তারা সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য মাননীয় প্রধান অতিথির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে জনাব মুহিত স্পষ্টভাবে জানিয়েদেন যে, তিনি কোন সভা-সমাবেশে এসে কোন প্রতিশ্রুতি দেন না। তবে তিনি কৃতি ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ প্রদান করে খুবই আকর্ষণীয় একটি বক্তৃতাপ্রদান করেন। তাঁর হাত থেকে সরাসরি বৃত্তির চেক গ্রহণ করে এবং তাঁর মূল্যবান বক্তৃতাশুনে আমরা বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হই।
১৯৮২ সালের বিসিএস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমি প্রশাসন ক্যাডার এ যোগদান করি। আমার প্রথম পোস্টিং হয় কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখানে কর্মরত থাকাকালে সিনিয়র সহকর্মীদের সাথে আলোচনায় ও সিএসপি অফিসারদের গ্রেডেশন তালিকা পর্যালোচনার সময় আমি অন্যান্য কৃতি কর্মকর্তাদের সাথে জনাব মুহিত সম্পর্কে জানতে পারি। এ সময় তাঁর “The Deputy Commissioner in East Pakistan” নামক গ্রন্থটি আমার হাতে পড়ে। জেলা প্রশাসন বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভের জন্য এই গ্রন্থটি আমাকে বিশেষভাবে সহায়তা করে। ঢাকা গেলে বুক সিন্ডিকেট থেকে নিজের জন্য একটি কপি সংগ্রহ করি, যা এখনও আমার কাছে আছে।পরবর্তী বিভিন্ন সময় তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি গ্রন্থ সংগ্রহ করি। বইগুলো খুবই তথ্যবহুল ও সুখপাঠ্য।
The Deputy Commissioner in East Pakistan গ্রন্থটি ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয় এবং প্রকাশক ছিল National Institute of Public Administration (NIPA) যা জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসন আমলে বিলুপ্ত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির বর্তমান পরিসরেই আগে NIPA স্থাপিত হয়েছিল। অনার্সে পড়ার সময় নিয়মিতভাবে NIPA লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়াশুনা করতাম। আমার অন্যতম প্রিয় লাইব্রেরী ছিল এটি।
কুমিল্লা থেকে বদলী হয়ে ১৯৮৪ সালের জুন মাসে আমি সিলেটে আসি। সহকারী কমিশনার হিসেবে সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে স্যারের সবচেয়ে ছোটভাই, ফুয়াদ ভাই এর সাথে পরিচিত হই। ফুয়াদ ভাইয়ের স্ত্রী ছোটন (ফাহমিদা) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানে আমাদের সহপাঠি ছিলেন। তাদের বাসা থেকে বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানেরদাওয়াত আসতো। আমি তাদের ছেলে রুমিন এর প্রথম জন্মদিনের অনুষ্ঠানসহ আরো কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগদান করি।পরিবারের অনেকের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তবে সেসময় মুহিত স্যারের সাথে এসব অনুষ্ঠানে বা সিলেটে কোথাও সাক্ষাৎ হয়নি। সে সময় স্যারদের পুরনো বাড়ী ছিল ধোপাদিঘির পূর্ব পাড়ে। পরবর্তীতে সেটি ভেংগে তাঁরা নূতন বাড়ী করেন।
আমি ১৯৮৪-১৯৮৭ মেয়াদে সিলেটে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে ঢাকায় চলে আসি। প্রায় এক বছর রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করার পর ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মাননীয় মন্ত্রীর কার্যালয়ে বদলী হই।তখন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কূটনীতিবিদ হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।তাঁর সাথে আমার আনুষ্ঠানিক পরিচয় ঘটে ১৯৮৫ সালে সিলেটে। তখন আমি তাঁর প্রটোকলের দায়িত্ব পালন করি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের জন্য অনেকেই আসতেন। মুহিত স্যারের ব্যাচমেট ও প্রিয়বন্ধু প্রাক্তন সচিব এবং রাষ্ট্রদূত হেদায়েত আহমদ আসতেন,আরো আসতেন রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল হারুন আহমদ চৌধুরী প্রমুখ। মুহিত স্যার সম্পর্কে মাঝে মাঝে আলোচনা শুনেছি। তবে তিনি কখনো ঐ সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেননি। পরে জেনেছিলাম তিনি জেনারেল এরশাদের বিরাগভাজন হওয়ায় দেশেই আসতে পারতেন না।বিভিন্ন বিষয়ে মতান্তর হওয়ায় মুহিত স্যার জেনারেল এরশাদের মন্ত্রিসভা থেকে হঠাৎ পদত্যাগ করেছিলেন। দেশ ছেড়েও চলে যান তিনি। বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘে বিভিন্ন কনসালটেন্সী করেন। এসব বিষয়ে তাঁর মুখ থেকে পরবর্তীতে অনেক গল্প শুনেছিনিউইয়র্কে আমি ইকনোমিক মিনিস্টার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে। সে বিষয়ে পরে অবতারণা করব।
তিনি দেশে ফিরে আসেন ১৯৯০ এর গণ অভ্যুথানেজেনারেল এরশাদ সরকারের পতনের পর।সম্ভবত ১৯৯১ সালে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন সমাবেশে দেখেছি। ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কাধে ঝুলছে কাপড়ের ব্যাগ। মুখে তাঁরব্রান্ড হাসি। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে একটি হলে ঢুকতে গেলে ছাত্ররা তাঁকে বাধা দেয়। ছাত্রদের অভিযোগ ছিল তিনি স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। আমরা শুনে ব্যথিত হয়েছিলাম কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন কৃতি ছাত্রকে হলে ঢুকতে দেয়া হল না?
আমি ১৯৯৫-৯৬ ও ২০০১-২০০৩ সালে অর্থনৈতিক সম্পর্কবিভাগে (ইআরডিতে) যথাক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব ও উপসচিব হিসেবে কর্মরত থাকাকালে মুহিত স্যারের কার্যক্রম ও কর্মদক্ষতা সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত হই। মুহিত স্যার অত্যন্ত সুনামের সাথে ইআরডির সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সময়ে ইআরডির কার্যাবলীর উপর বিভিন্ন নীতিমালা প্রণীত হয়।

তবে মুহিত স্যারের সাথে আমার প্রথম প্রফেশনালসাক্ষাতের সুযোগ হয় ১৯৯৬ সালে। আমি তখন সপ্তম জাতীয় সংসদ (১৯৯৬-২০০১) এর মাননীয় স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর একান্ত সচিব (পিএস)। সংসদ অধিবেশন চলাকালে মাননীয় স্পীকার একদিন বললেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব সংসদের প্রসিডিং দেখার জন্য আসবেন। তাঁর জন্য ভিআইপি গ্যালারী-১ (স্পীকারের ডান দিকের গ্যালারি ) পাস দিও। এভাবে মুহিত স্যার দু তিন বার এসেছেন। আমি সার্জেন্ট এট্ আর্মসের নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে তাঁকে বিশেষভাবে অভ্যর্থনা জানিয়ে আনার ব্যবস্থা করতাম। তিনি সরাসরি আমার অফিস কক্ষে এসে ধন্যবাদ দিয়ে ভিআইপি পাস নিয়ে যেতেন। তিনি পায়জামা পাঞ্জাবী পরিহিত অবস্থায় আসতেন। কাধে থাকত ভাজ করা চাদর। সম্ভবত শীতকালিন অধিবেশন দেখতে এসেছিলেন।
২০০৫-২০০৭ সালএই তিন বছর লিয়েনে আমি ঢাকাস্থ ইউএনডিপি কার্যালয়ে সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি তথা সহকারী আবাসিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। এ সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল খুবই উত্তপ্ত ছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠভাবে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট বিশেষভাবে সন্দিহান ছিল। অন্যদিকে বিএনপি-জামাত জোটের সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোটের তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয়ে এক তরফা সিদ্ধান্ত নিলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে। বিশেষ করে ২০০৬ সালে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। এ সময় জাতিসংঘের উদ্য়োগে বিভিন্ন প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে। সফরকালে এসব প্রতিনিধি দল সরকারী ও বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করে। ইউএনডিপিতে আমার নেতৃত্বাধীন গভর্ন্যান্সটীম সে সময় গুরুত্বপূর্ণভূমিকা পালন করে। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি আমার সহকর্মীরা এসব সাক্ষাতের আয়োজন করে এবং আমি প্রতিনিধিদলকে নিয়ে নির্ধারিত কার্যালয়ে গমন করি। সে সময় তৎকালীন সরকারী দলেরপক্ষে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাৎ করতেন জনাব মোফাজ্জল করিম ও জনাব নজরুল ইসলাম খান। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকতেন জনাব এএমএ মুহিত, জনাব এইচ টি ইমাম, জনাব মোকাম্মেল হোসেন, ডঃ মসিউর রহমান ও জনাব সাবের হোসেন চৌধুরী প্রমুখ। তবে সফররত জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলকে ব্রীফ করতেন জনাব এএমএমুহিত। এজন্য তিনি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিনিধিদলকে ব্রিফিং দিতেন। আমি ঘনিষ্ঠভাবে তাঁর আন্তরিক প্রয়াস লক্ষ্য করতাম।

২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জনাব এ, এম, এ মুহিত দেশের ঐতিহ্যবাহী নির্বাচনী এলাকা সিলেট-১ থেকে নবম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। উক্ত সরকারে জনাব এএমএ মুহিত অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের জানুয়ারী মাসের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং অর্থমন্ত্রী পদে বহাল থাকেন। এই দু মেয়াদে তিনি মহান সংসদে ১০ (দশ) টি বাজেট পেশ করেন।
জনাব এ এম এ মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকাকালে আমি ২০০৯ সালে নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ইকনোমিক মিনিস্টার হিসেবে নিয়োজিত হই। নিউইয়র্ক যাবার আগে তাঁর সাথে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানান এবং আমার সাফল্য কামনা করেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে আমাকে মূল্যবান দিক্-নির্দেশনাও প্রদান করেন।
আমি নিউইয়র্কে কর্মরত থাকাকালে মুহিত স্যার বেশ কয়েকবার নিউইয়র্ক সফর করেন। কয়েকবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে চলাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে তিনি নিউইয়র্কে এসেছেন। এছাড়াও এসেছেন অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের(ECOSOC) এর বিভিন্ন সভায় যোগ দিতে।ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) এর বার্ষিক অধিবেশনে যোগদানের আগে অথবা পরেও তিনি নিউইয়র্ক সফর করতেন। তাঁর মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে সেসময় আমিই প্রটোকলের দায়িত্ব পালন করতাম।সাথেতাঁরসহধর্মিণী আমাদের শ্রদ্ধেয়া ভাবী মিসেস সাবিহা মুহিতথাকতেন। প্রতিবারেই তিনি ও ভাবী আমার এবং আমার স্ত্রী বেগম নাজমা রহমানের আমন্ত্রণে আমাদের সরকারী বাসভবনে নৈশভোজে যোগদান করতেন। তিনি আমার স্ত্রীর হাতের রান্না খুব পছন্দ করতেন এবং উচ্চসিত প্রশংসা করতেন। স্যারের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে খুব আগ্রহ ছিল। তিনি বিভিন্ন মুখরোচক খাবার অধিক পছন্দ করতেন। কোথাও কোন অনুষ্ঠানে আয়োজকরা তাঁর বয়সের কথা চিন্তা করে তাঁকে সাদাভাত পরিবেশন করতে চাইলে তিনি বলতেন, আমি সাদাভাত খাইনা। ঐ যে পোলাও দেখছি, সেটা দিন। চা পরিবেশিত হলে তিনি বাড়তি চিনি চেয়েনিতেন। আমাদের দিকে তাকিয়ে স্যার মৃদু হাসতেন।
নিউইয়র্কস্থ স্থায়ী মিশনে আমি যখন যোগদান করি তখন স্থায়ী প্রতিনিধি তথা রাষ্ট্রদূত ছিলেন আমারই ব্যাচমেট পররাষ্ট্র সার্ভিসের একজন কৃতি কর্মকর্তা মিজ্ ইসমত জাহান। কয়েক মাস পর তিনি নেদারল্যান্ডসে্ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বদলি হয়ে গেলে নতুন রাষ্ট্রদূত হয়ে আসেন ডঃ এ, কে আব্দুল মোমেন। তিনি মুহিত স্যারের সহোদর ছোট ভাই। দুজন রাষ্ট্রদূতের সাথেই আমি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করিএবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বার্থ-সুনাম রক্ষা ও বৃদ্ধিতে তৎপর থাকি। আমরা জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামেও নির্বাহীবোর্ডে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিই।
মুহিত স্যার যখন নিউইয়র্কে প্রথম আসার কর্মসূচি দেন তখন ডঃ মোমেন স্যারের সাথে কর্মসূচির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এক পর্যায়ে মোমেন স্যার জানালেন, নিউইয়র্কে মুহিত স্যারের একটি বিশেষ পছন্দ হল বিভিন্ন দেশের রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করা। নিউইয়র্কের ডাউন টাউনের তথা পুরনো এলাকার বাংলাদেশী এবং ভারতীয় রেস্টুরেন্টও তার বিশেষ পছন্দের। তাঁর বিভিন্ন সফরে সেটি সরাসরি লক্ষ্য করেছি। তবে সাবিহা ভাবীর পছন্দ ভিন্ন ছিল। নিউইয়র্ক তাঁর অতি পরিচিত শহর বিধায় তিনি নিজেই প্রয়োজনীয় কাজে যাতায়াত করতেন। আলাদা খাবারও খেয়ে নিতেন।
তবে আমাদের বাসায় দাওয়াতে সাবিহা ভাবীও মুহিত স্যারের সাথে আসতেন। কখনও মিস্ করেননি।আমরা দূতাবাসের সকল পরিবারও একত্রিত হতাম। মাঝে মাঝে নিউইয়র্কে অবস্থানরত স্যারের অন্যান্য ভাইরাও সপরিবারে যোগদান করতেন। স্যারের পুত্র-কন্যারাও যোগদান করতেন।
মনে পড়েছে একবার স্যারের সফরকালে আমাদের বাসার নৈশভোজে মাননীয় উপদেষ্টা ডঃ মসিউর রহমান, তৎকালীন মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রি ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরী (বর্তমান মাননীয় স্পীকার) ও ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদও একসাথে যোগদান করেছিলেন। এসব নৈশভোজে মুহিত স্যার জমিয়ে গল্প করতেন এবং তাঁর তথ্যবহুল কথা-বার্তা শুনার জন্য সবাই তাঁকে ঘিরে ধরতেন।
মুহিত স্যারের নিউইয়র্ক সফর কালে তাঁর সাথে বিভিন্ন সভায় যোগদান করেছি।কোনটি হয়তো হয়েছে আমাদের স্থায়ী মিশনে, আবার কোনোটি হয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন অফিসে।ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি Moody’s ও SAP সাধারণত আমাদের মিশনে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করত।
অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় তখন পর্যালোচনায় আসতো। প্রবাসীবাংলাদেশীরা বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। জাতিসংঘ কার্যালয় সমূহের সাথে বৈঠকে তিনি অসাধারণ পাণ্ডিত্য দেখাতেন।
নিউইয়র্ক সফরকালে মুহিত স্যার একবার নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের Professor Joseph Stiglitz এর সাথে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নেন। উল্লেখ্য, Professor Joseph Stiglitzএবং আরো কয়েকজন বিখ্যাত মার্কিন ব্যক্তিত্ব (যেমন Professor Jeffry Sachs)বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। আমরা Professor Joseph Stiglitzএর প্রিয় ছাত্রও বাংলাদেশ পররাষ্ট্র সার্ভিসের আরেকজন কৃতি কর্মকর্তা ডঃ হামিদ রশিদের সহায়তায় সাক্ষাৎকারের তারিখ ও সময় নির্ধারণ করি। ডঃ হামিদ রশিদ জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবেকর্মরত। মুহিত স্যারের সেবারে নিউইয়র্ক সফরের শেষদিনে অপরাহ্নে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। আমি ডেলিগেশনের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে জেএফকে বিমানবন্দরে যাই। স্যার সভা শেষে আমাদের সাথে বিমান বন্দরে যোগদেন। জিজ্ঞেস করলে জানান খুবই ভাল সভা হয়েছে। লাউঞ্জে বসেডঃ হামিদের প্রশংসা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে হাসতে হাসতে বললেন, ডঃ হামিদ রশিদের যাতায়াত Professor Joseph Stiglitz এর রান্নাঘর পর্যন্ত। আমি হামিদকে স্যারের সাধুবাদ জানাই। আর স্যারের পর্যবেক্ষণ নিয়ে আমরা বেশ হাসাহাসি করি।
ইউএনডিপি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তাঁর স্মৃতিশক্তি অসাধারণ কাজ করতো।তখন মনে পড় ছিল যে এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করে তিনি এ সব সংস্থায় বিভিন্ন কনসালটেন্সি করেছেন।এদের বিভিন্ন নীতিমালাও গাইডলাইন প্রণয়নে সহায়তা করেছেন।
২০১১ সালে আমরা জাতিসংঘের ৪র্থ এলডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রক্রিয়ায় ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলাম।জাতিসংঘের উন্নত, মধ্য আয়ও এলডিসি (স্বল্পোন্নত) গ্রুপ ভুক্ত সদস্যরাষ্ট্রের মিশনগুলো প্রস্তুতি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করেছিল।২০১১ সালের ৯-১১ মে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অনুষ্ঠিতব্য এলডিসি সম্মেলনের ঘোষণাপত্র ও কর্মপরিকল্পনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নেগোসিয়েশন চলছিল। প্রস্তুতি পর্যায়ের একটি সভা চলাকালে মুহিত স্যার নিউইয়র্কে এলে সদস্য রাষ্ট্রদের একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় তাঁকে আমরা প্যানালিস্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করি। প্যানেলের থিম ছিল- ইস্তাম্বুল সম্মেলনের ঘোষণা পত্র ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্রসমূহেরপ্রত্যাশা। প্যানেলিস্ট হিসেবে মুহিত স্যার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় এলডিসি সম্মেলন ও ব্রাসেলস কর্মপরিকল্পনার অভিজ্ঞতার কথা সুন্দরভাবে বর্ণনাকরেন। আগামী সম্মেলনের ঘোষণাপত্রও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বেশ কিছু যৌক্তিক প্রস্তাব তুলে ধরেন যা সকল প্রতিনিধিদল কর্তৃক প্রশংসিত হয়। নিউইয়র্কে অর্থনৈতিক বিষয়াবলী সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণSecond Committeeতেবিশ্বের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের রূপরেখা নিয়ে পরবর্তীতে তাঁরআরেকটিবক্তৃতাও বিশেষভাবে সমাদৃত হয়।
২০১১ সালের মে মাসে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত এলডিসি সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। উক্ত সম্মেলনের ঘোষণাপত্র ওপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং গ্রহণের ব্যাপারে বাংলাদেশের এই সক্রিয় ভূমিকাআয়োজক দেশ তুরস্ক ও জাতিসংঘ কর্তৃক বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়। মুহিত স্যার সেসময় কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে যোগদান করেন।বিশ্ব অর্থনীতির সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে অনুষ্ঠিত এরকমেৱ একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলে তার সাথে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেনMr.Meles Zenawi,ইথিওপিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ চতুর্থ এলডিসি সম্মেলনের ঘোষণাপত্র ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। যার ফলশ্রুতিতে২০১৮ সালে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ কমিটি CDP (Committee on Development Policy) বাংলাদেশ এলডিসি থেকে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হবার বা গ্র্যাজুয়েশনের সকল যোগ্যতা (মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সংবেদনশীলতা সূচক) অর্জন করেছে। সেজন্যে সারাদেশে যে উৎসব অনুষ্ঠিত হয় তাতে মুহিত স্যার খুবই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মুহিত স্যারের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কার্যক্রমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের জন্য অভিনন্দন জানানো।সেসময় জাতিসংঘের এলডিসি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এর উপস্থিতিতে হোটেল রেডিসনে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। মুহিত স্যার উক্ত আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন। অন্যান্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে আমিও একজন প্যানেলিস্ট ছিলাম।
২০১২ সালের অক্টোবরমাসেআমি নিউইয়র্কস্থস্থায়ী মিশনথেকে বদলি হয়ে ঢাকায় ফিরে আসি। জনপ্রশাসন সূত্র থেকে ধারণা দেয়া হয়েছিলআমাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব অথবা এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। ঢাকায় ফেরার পর স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাকে ‘ওয়েলকামব্যাক’ বলে স্বাগত জানান। কিন্তু পদায়নের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।এরমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়আমাকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ দিতেপ্রজ্ঞাপন জারি করে। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা চাচ্ছিলেন, আমি যেনঅর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডির) দায়িত্ব পাই। এসময় আমি একদিন অর্থ সচিব(পরবর্তীতে গভর্নর)ও আমার ব্যাচমেট ফজলে কবিরের সাথে সাক্ষাৎকরতে যাই। সেখানে থাকাকালে মাননীয় অর্থমন্ত্রী মুহিত স্যার ফোন করেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন আমি বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হিসাবে কাজ করতে আগ্রহী কিনা। আমি বিনীতভাবে জানাই পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নিয়োগটি আমার কাছে অধিকতর উপযোগী মনে হয়েছে।আমি স্যারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। জনপ্রশাসনের আদেশের ধারাবাহিকতায় আমি ১২-১২-২০১২ তারিখ থেকে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব হিসেবে কাজ শুরু করি।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে জানতে পারি যে মাননীয় অর্থমন্ত্রী মুহিত পরিসংখ্যান ব্যবস্থার একজন জোরালো সমর্থক। তাদের মতে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাহচ্ছেন পরিসংখ্যান ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সমর্থক। বিএনপি-জামাত সরকারেরগৃহীত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিসংখ্যান বিভাগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেনএবং এর সাথে তথ্য ব্যবস্থাপনা সংযুক্ত করে এটিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার পরপরেই জনাব মুহিত সকল ক্ষেত্রেবিবিএসের তথ্য ব্যবহার করে এবং বিবিএসের বিভিন্ন কাজে অর্থায়ন করে এর প্রতি দৃঢ় সমর্থন যুগিয়েছেন।
পরিসংখ্যান সচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পরআমার আমন্ত্রণেমুহিত স্যারঅনেকগুলো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান দেন। মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) এ কে খন্দকার সভাপতিত্ব করেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ছিল অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩ এর প্রস্তুতি কার্যক্রম সিলেটে এর পাইলট শুমারির উদ্বোধনও পরবর্তীতে মূল শুমারির উদ্বোধনইত্যাদি। মুহিত স্যারের অংশগ্রহণ এসব কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করাকে সহজ করেছে। মুহিত স্যারকে নিয়ে এসময় আরেকটি বড় কাজ সম্পাদন করা হয়। সেটিই ছিল বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ভিত্তি বছর পরিবর্তন। ২০১৩ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বরমাননীয় অর্থমন্ত্রী, মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী, মাননীয় কৃষি মন্ত্রী ও অন্যান্য মাননীয় মন্ত্রী এবং বিভিন্ন সচিবদের সমন্বয়ে গঠিত একটি ফোরামে জিডিপির ভিত্তি বছর ১৯৯৫-৯৬ থেকে পরিবর্তন করে ২০০৫-২০০৬ উন্নীত করা হয়। এর ফলে অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি পায়। ২০০৫-২০০৬ ভিত্তি বছর অনুযায়ী ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে সাময়িকভাবে জিডিপিরপ্রবৃদ্ধিরশতকরা ৬.১৮ ও মাথাপিছু জাতীয় আয় ১০৪৪ ইউএস ডলার এ উন্নীত হয়। মুহিত স্যার পরিসংখ্যান উন্নয়নে জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়নেও বিশেষ সমর্থন প্রদান করেন।
পরিসংখ্যান বিভাগে এলেই অথবা পরিসংখ্যান বিষয়ক আলোচনা কালে মুহিত স্যার তাঁর ব্যাচমেট ও অন্যতম প্রিয়বন্ধুসিএসপি অফিসার ডঃ এ, কে, এম গোলাম রব্বানীর ব্যাপারে স্মৃতিচারণ করতেন। ডঃরব্বানী চাকুরীজীবনের বেশির ভাগ সময় পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করেছেন এবং পরিসংখ্যান ব্যবস্থার উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে আমি ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে বদলী হইপরিবেশ, বন, ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের সচিব হিসেবে। এর আগে ২০০৯ সালে আমি পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও ছিলাম। মুহিত স্যার একজন পরিবেশবাদী হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সভাপতি ছিলেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করতেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় যোগদান করে মূল্যবান পরামর্শ দিতেন। এই মন্ত্রণালয়েরদায়িত্বপ্রাপ্ত মাননীয় মন্ত্রী জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সাথে তাঁর হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পর আমি বদলী হয়ে যাই অর্থমন্ত্রনালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)এর সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে। সরাসরি মুহিত স্যারের তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব পালন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি বলেন- পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তবে রাজস্ব আরও বেশী গুরুত্বপূর্ণ । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমি খুবই উৎসাহিত হই।
আইআরডি ও এনবিআরের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি রাজস্ব ব্যবস্থাকে করদাতাও ব্যবসা-বান্ধব করার উদ্যোগগ্রহণ করি। রাজস্ব ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য আমি ঘোষণা করি “Zero tolerance against corruption, harassment, Indiscipline and misconduct,” ব্যবসায়ীদের জন্য আমি গ্রহন করি-দুষ্টের দমন ও শিষ্ঠের পালন রীতি।মিডিয়া, জনপ্রতিনিধি ও সকল সরকারী-বেসরকারী কার্যালয়ের সাথে ঘনিষ্ঠপার্টনারশীপ প্রতিষ্ঠা করি। যার ফলে রাজস্ব আহরণে বিশেষ প্রবৃদ্ধি হয় এবং আমরা ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিনটি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণই নয় বরং রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করি। এ সময় মাননীয় অর্থমন্ত্রী মুহিত স্যারের সাথে সরাসরি কাজের অভিজ্ঞতা ছিল খুবই বিচিত্র। সেটি এখানে নয়, ভিন্ন পরিসরে আলোচনা করব।
মুহিত স্যারের সাথে সচিব হিসেবে সরাসরি তিন বছর কাজ করার সময় আমরা অন্যান্য বিষয়ের সাথে পর পর তিনটি অর্থবছরের (২০১৫-২০১৬, ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮) বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করি। সে সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরামর্শ দিতেন। পরবর্তীতে মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও লক্ষ্য করেছি বাজেট উপস্থাপনের দিন মন্ত্রিসভায় যে বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সেখানে এবংমাননীয় অর্থমন্ত্রীতাঁর বিখ্যাত কালো ব্রিফকেস নিয়ে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেম্বারে যান তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর (মুহিত স্যারের) প্রতি কি রকম যত্নশীল আচরণ করেন। বাজেট উপস্থাপনকালে যাতে গলা শুকিয়ে না যায় সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুহিত স্যারের হাতে লজেন্স তুলে দেন। পরবর্তীতে উপস্থাপিত বাজেট আলোচনাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্নভাবে মুহিত স্যারকে সহায়তা করেন।
বিশেষ করে ২৯ জুন তারিখে অর্থ বিল বিবেচনাকালে মাননীয় সংসদ সদস্যরা যে ছাটাই প্রস্তাব দেন তা যথাযথ ভাবে গ্রহণ করার প্রক্রিয়া খুবই জটিল হয়। মাননীয় অর্থমন্ত্রী সে সময় সংসদসদস্যদের সাথে সরাসরি মত-বিনিময় ও বিতর্কে ব্যস্ত থাকেন বিধায় তাঁর পক্ষে সকল ছাটাই প্রস্তাব গ্রহণ বা বর্জন করার বিষয় স্থির করা কষ্টের হয়ে পড়ে। সে প্রক্রিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ মনোযোগ দেন এবং প্রয়োজনবোধে সংসদ নেতার লবিতে বসে এনবিআর চেয়ারম্যান ও বোর্ডের সদস্যদের স্বয়ং দিক্-নির্দেশনা দিয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর ছাটাই প্রস্তাব গ্রহণ ও বর্জনের সঠিক তালিকা প্রণয়নে মূল্যবান সহায়তা দেন। আমি এনবিআর চেয়ারম্যান থাকাকালে বাজেট পাশ প্রক্রিয়ায় তিনটিবারই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই অসাধারণ সহযোগিতার প্রয়াস লক্ষ্য করেছি।
বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন অর্থাৎ ৩০ শে জুন সংসদে বাজেট পাশ হবার পর সন্ধায় মাননীয় অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সংসদ সদস্যদের সম্মানে একটি বাজেটোত্তর নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। আমি মাননীয় স্পীকারের পিএস থাকার সুবাদে ১৯৯৬ সাল থেকে এই নৈশভোজের সাথে পরিচিত। সেসময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন জনাব শাহ এএমএস কিবরিয়া। তাঁর সময়ে সংসদভবনের এলডি হল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নৈশভোজটি হত। তবে মুহিত স্যারের সময় বিস্তৃত পরিসরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (BICC) নৈশ ভোজটি আয়োজিত হয়। আমি পর পর তিনটি নৈশ ভোজ আয়োজনের বিষয় তত্ত্বাবধানকরি। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর পক্ষে এনবিআর তথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অত্যন্ত যত্নসহকারে নৈশ ভোজটি আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে।
নৈশভোজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণএতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্পীকার ও মাননীয় প্রধান বিচারপতিসহ রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন। নৈশভোজটি নিয়ে মুহিত স্যারের অনেক মুন্সিয়ানা ছিল। আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা তিনি নিজে চুড়ান্ত করতেন। এর মধ্যে তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিলেটের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও কর্মী বাহিনীর প্রতিনিধিদের তালিকাও থাকতো। নির্বাচনী এলাকার ঐসব আমন্ত্রিতরা সগর্বে নৈশভোজে অংশ নিতেন। তারা প্রতিবছর ঐদিনটির জন্য অপেক্ষা করতেন। নৈশ ভোজের আগের দিন সন্ধ্যায় মুহিত স্যারের সরকারী বাসভবনে খাবার খেয়ে মেন্যু যাচাই করা হত। সেখানে এনবিআরের চেয়ারম্যান,অর্থবিভাগের সচিব, আইআরডির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও এনবিআরের সদস্যরা,যারা বাজেট প্রণয়নে জড়িত তারা থাকতেন। আমিএনবিআর চেয়ারম্যান হবার পর এই ঘরোয়া সমাবেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও ইআরডির সচিবদের আমন্ত্রন জানালে পুরো অর্থমন্ত্রণালয় পরিবার সংশ্লিষ্ট থাকবে বলে মতামত দিলে মুহিত স্যার সেটি গ্রহণ করেন। এর পর থেকে মন্ত্রণালয়ের চারটি বিভাগের সচিবরাই উপস্থিত থাকতেন।
নৈশভোজের জন্য খুবই মানসম্পন্ন বনেদি মিষ্টি আসতো। রাজবাড়ী থেকেদুজন মাননীয় সংসদ সদস্য সর্বজনাবমোঃ জিল্লুল হাকিম ও কেরামত আলী মুহিত স্যারের অনুমতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মিষ্টি সরবরাহ অব্যাহত রাখেন।
আইআরডি ও এনবিআরে তিন বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেরশেষ দিকে আমাকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়। আমি মাননীয় অর্থমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি আমাকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানান। পরবর্তীতে একটিঅনুষ্ঠানে ১০০টি লাল গোলাপ দিয়ে তিনি আমাকে বিদায় জানান। আমি মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে স্যারের সাথে আমার সরকারী ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের জন্য এবং তাঁর সর্বশেষ বাজেট প্রণয়নকালে বিভিন্ন পরামর্শমূলক সভায় আমি যোগদান করি। মন্ত্রিসভার যে বৈঠকে বাজেটটি অনুমোদিত হয় সেখানেও আমি উপস্থিত ছিলাম। অত্যন্ত সফলভাবেএকনাগাড়ে দশটি বাজেট উপস্থাপন করে এবং বাজেটের পরিধি ও ব্যাপ্তি বহুগুণে বাড়িয়ে ছিলেনমুহিত স্যার। দেশ ও জাতির জন্য এটি ছিল তাঁর এক বিশাল অবদান।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুহিত স্যার আর অংশগ্রহণ করেননি।তাঁর আসনে অর্থাৎ সিলেট-১ নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনীত হন তাঁরই সহোদর ছোট ভাই ডঃ এ কে আব্দুল মোমেন। নির্বাচিত হয়ে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন। অন্যদিকে মুহিত স্যার লেখালেখির কাজে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীর (মুজিব বর্ষ) বিভিন্ন কমিটিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে নতুন সরকারের যাত্রার অল্প দিন পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মুহিত স্যারের ব্যাপারে খোজখবর নিতে সদয় নির্দেশ দেন। মুহিত স্যারের ব্যক্তিগত বাসভবন নিয়ে কিছু জটিলতা হয়েছে তাই তিনি সরকারী বাসা ছেড়ে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউস্থ নিজ বাসভবনে উঠতে পারছেন না বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তথ্য এসেছে বলে আমাকে জানান। আমি সাথে সাথেই মুহিত স্যারকে টেলিফোন করি। তিনি তাঁর স্নেহমাখা কন্ঠে জিজ্ঞেস করেনঃ কি হে কেমন আছো? আমি কুশলাদি বিনিময় করে তাঁর বাসভবনের কি পরিস্থিতি জানতে চাই। স্যার বললেন, আমিএকটি এপার্টমেন্ট খুজছি। পেলেই সরকারী বাসভবন ছেড়ে দিব।
আমি তাঁকে বললাম যে, আমরা সরকারী বাসভবন নয় বরং ব্যক্তিগত বাসভবনের অবস্থা জানতে চাচ্ছি।তাঁকে আরও জানালাম যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চান স্যার যেন নির্বিঘ্নে নিজের বাসভবনে উঠেন। আমার কথা শুনে স্যারস্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন বলে মনে হল। তিনি একটু শব্দ করে হাসলেন। স্বস্তির ও ভরসার হাসি যেন। আমি সাথে সাথে তাঁকে বললাম, স্যার আমি ডিএমপির কমিশনার আসাদুজ্জামানকে দায়িত্ব দিচ্ছি। আসাদ আপনাকে যাবতীয় সহযোগিতা করবে। স্যার আমাকে ধন্যবাদ দিলেন। আমি স্যারকে সালাম দিয়ে মোবাইল টেলিফোনের আলাপ শেষ করলাম।
অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই কমিশনার আসাদুজ্জামান আমাকে বললেন- স্যার, মিশন একমপ্লিসকরেছি। মাননীয় মুহিত স্যারকে তার নিজ বাসভবনে তুলেছি। তিনি আমাদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমিও সাথেসাথেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট করলাম। তিনিও বেশ স্বস্তি বোধ করলেন বলে মনে হল। মুহিত স্যারের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতির আরেকটি উদাহরণ আমি প্রত্যক্ষ করলাম।
২০২০ ও ২০২১ সালে কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে মুহিত স্যারের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি। মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁর শারীরিক অবস্থা, সিলেট সফর ইত্যাদি জানতাম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর বঙ্গবন্ধু উপরবক্তৃতাপ্রদানকালে তাঁকে ভার্চুয়ালি দেখি। পরবর্তীতে বিশিষ্ট ব্যাংকার ও আমাদের বন্ধু আনিস এ খানের একটি অনুষ্ঠানে মুহিত স্যারের জীবনী ভিত্তিক সরাসরি সাক্ষাৎ অনলাইনে দেখতে পাই। বেশ পরে পূর্বাচলে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর আরো দুই সহোদর ভাই ডঃ মবিন স্যার ও সুজন ভাই এর কাছ থেকে স্যারের খবর জানতে পারি। সেখানেডঃ ফরাস উদ্দিনস্যারের সাথে আলোচনায়ও মুহিত স্যারের প্রসংগ আসে। আরো পরে মুহিত স্যার অসুস্থ হয়ে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে এক সময় ভর্তি হয়েছিলেন বলে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি। আমার ছোট ছেলে ফারাবী রহমান এসব খবর সংগ্রহ করে আমাকে নিয়মিত জানাত। ৩০ শে এপ্রিল ২০২২ তারিখে অপ্রত্যাশিত সংবাদটি পাই, স্যার রাত ১২:৫৬ মিনিটে ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ঐদিন সকাল বেলা ফারাবীসহ গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশগ্রহণ করি। জানাজা শেষে লাইনে দাঁড়িয়ে স্যারকে শেষবারের মতো দেখি এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করি। কয়েকদিন পর একই মসজিদে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলেও আমার ছেলে ফারাবীসহ যোগদান করে স্যারের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। স্যারের গুণগ্রাহী এবং তাঁর সাথে কর্মরত প্রাক্তন সহকর্মী অনেকের সাথে দুদিনই দেখা হয়। দোয়া মাহফিলের বিভিন্ন বক্তাদের স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্যে আপ্লুতহই। মুহিত স্যার কর্মের মাধ্যমেই বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে। পরম করুনাময় আল্লাহ তা’আলা তাঁকে জান্নাতবাসি করুন। আমীন।
মোঃ নজিবুর রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান, বর্তমানে চেয়ারম্যান, সিএমএসএফ