জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন অনুসারে শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। তবে সচেতনতার অভাবে অভিভাবকদের বড় অংশই সন্তানের জন্মনিবন্ধন করে না। গ্রামাঞ্চলে এ নিবন্ধন না করানোর প্রবণতা বেশি। অথচ জাতীয়তা, বয়স, স্থায়ী ঠিকানা, পিতা-মাতার নাম প্রভৃতি মৌলিক বিষয়ের দলিল হিসেবে কাজ করে জন্মনিবন্ধন সনদ। এছাড়া পাসপোর্ট করা, বিয়ে নিবন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়া, জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ, জমি নিবন্ধন প্রভৃতি কাজে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদর্শন আইন দ্বারা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সময়মতো জন্মনিবন্ধন সনদ গ্রহণ না করায় এ ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা লাভে ভোগান্তির শিকার হতে হয় অনেক নাগরিককে।
গতকাল শেয়ার বিজের খবরে বলা হয়, ডিএনসিসির সার্ভারে ত্রুটির কারণে জন্মনিবন্ধন সনদ দেয়া বন্ধ রয়েছে। রাজধানীর মগবাজার এলাকার একজন অভিভাবকের জবানিতে বোঝা যায়, কতটা বিড়ম্বনায় আছেন তারা। তিনি আমাদের প্রতিবেদককে বলেন, ‘তিন দিন ধরে জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য কাউন্সিলরের কার্যালয়, কম্পিউটারের দোকান ও সিটি করপোরেশনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। জন্মনিবন্ধন ছাড়া স্কুলে ভর্তি নিচ্ছে না। সব জায়গা থেকে বলা হচ্ছে, সার্ভার ডাউন।’ জন্মনিবন্ধন ছাড়াই দিন চলে যাবে, অনেকে এ ধারণা পোষণ করেন। ফলে ভবিষ্যতে অসুবিধায় পড়ে সদ্য জš§ নেয়া শিশু। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে গেলেই জন্মনিবন্ধন সনদের প্রয়োজন হয়। তখনই বিপত্তি দেখা দেয়! জাতীয় পরিচয়পত্র ১৮ বছর বয়সের আগে পাওয়া যায় না, তাই ওই পর্যন্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা লাভে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সনদ হলো জন্মনিবন্ধন। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন প্রণীত হয় ২০০৪ সালে, তা ২০১৩ সালে তা সংশোধন করা হয়। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিধিমালা, ২০১৮-এর মাধ্যমে দেশে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়। এ আইনে জš§-মৃত্যু নিবন্ধনকে সর্বজনীন ঘোষণা করে জাতি, ধর্ম-বর্ণ, গোষ্ঠী, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার জন্য মৃত্যুনিবন্ধন নিবন্ধকের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জš§ ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রমে অধিকতর গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে বিদ্যমান নির্দেশিকা রহিত করে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন নির্দেশিকা, ২০২১ প্রণয়ন করা হয়। আইন অনুযায়ী জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের মূল দায়িত্ব নিবন্ধকের। কিন্তু পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ এবং বাস্তবেও প্রমাণিত যে, নিবন্ধক কার্যালয়ে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয় না। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির অন্ত নেই। এ অবস্থা নিরসনে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনকে নিবন্ধক কার্যালয়ের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কাজ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সর্বশেষ নির্দেশনায় স্পষ্ট করা হয়েছে যে, জন্ম ও মৃত্যু-সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কর্মচারী সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও সবার জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে নিবন্ধককে। তাই নাগরিকদের দুর্ভোগ কমাতে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের সব কর্মী যথারীতি দায়িত্বশীল হতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মূল দায়িত্ব নিতে হবে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে।