কোন দেশ পরপর দুইবার জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এর ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় তিনটি মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে, সেই দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের অর্থাৎ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য সুপারিশ করা হয়। প্রথম মানদণ্ডঃ মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১২২২ মার্কিন ডলার হতে হবে। দ্বিতীয় মানদণ্ডঃ মানব সম্পদ সূচকে কমপক্ষে ৬৬ বা তার বেশি পয়েন্ট থাকতে হবে। তৃতীয় মানদণ্ডঃ অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে একটি দেশের পয়েন্ট ৩২ বা তার কম থাকতে হবে।
জাতিসংঘের সিডিপি’র ২০১৮ সালের ত্রিবার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় (২০১৪-২০১৬ গড়) ১২৭৪ মার্কিন ডলার, মানব সম্পদ সূচকে ৭৩.২ পয়েন্ট এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচক ২৫.২ পয়েন্ট। অর্থাৎ ২০১৮ সালেই প্রথম তিনটির প্রত্যেকটি মানদণ্ড পূরণ করা হয়। শুরুতেই বলা হয়েছে, পরপর দুইটি ত্রি-বার্ষিক পর্যালোচনা সভায় উক্ত মানদণ্ড তিনটি পূরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই কারণে তিন বছর পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সিডিপি’র সভায় বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনা করা হয়। ২০২১ সালের ত্রিবার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় (২০১৭-২০১৯ গড়) ১৮২৭ মার্কিন ডলার, মানব সম্পদ সূচকে ৭৫.৪ পয়েন্ট এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচক ২৭.২ পয়েন্ট।
পরপর দুইবার ত্রিবার্ষিক সভায় তিনটি মানদন্ডই পূরণ হওয়ার ভিত্তিতে সিডিপি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বা LDC graduation এর সুপারিশ করে। কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এবং ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল ( ইকোসোক) এর সুপারিশের ভিত্তিতে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ছিয়াত্তরতম বৈঠকের চল্লিশতম প্লেনারি সভায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের অনুমোদন পায়।
সিডিপি’র সুপারিশ অনুযায়ী, এই উত্তরণের প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৬ সালের নভেম্বরে থেকে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ঋণে যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিল, প্রস্তুতিমূলক পাঁচ বছরেও তা অব্যাহত থাকবে। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক সংবাদ। তবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য, প্রস্তুতিমূলক এই পাঁচ বছরের মধ্যেই আমাদের ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা তৈরি রাখতে হবে।
লেখক-রিয়াজুল হক, অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক