প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড চট্টগ্রামে অনুমোদন ঢাকায়

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় আমদানিকৃত পুরোনো জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। কিন্তু শ্রেণি জটিলতায় জাহাজ ভাঙার অনুমতি পেতে কখনও হয়রানি বেড়েছে, আবার কখনও কমেছে। এর মধ্যে নতুন আইনে এ শিল্পটিকে আবারও লাল শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। আর  লাল শ্রেণি হওয়ায় পরিবেশ ছাড়পত্র পেতে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা নেই, যা ঢাকা থেকে অনুমোদন আনতে দু-এক মাস লাগছে। এতে ব্যবসায়ীদের অর্থ ও সময় অপচয় হচ্ছে।

বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পের মালিকদের সংগঠনের (বিএসবিআরএ) সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন ইয়ার্ডে পুরোনো জাহাজ ভেঙে আট লাখ ৭৫ হাজার ৫৬০ টন পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে চার লাখ ৩২ হাজার ১৯৩ টন স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছে। আর গত ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৪ টন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১১ হাজার ১৭৪ টন বেশি। এছাড়া অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছিল ৬৬টি। কিন্তু নতুন পরিবেশ আইনে এ শিল্পটিকে আবারও লাল শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। আর  লাল শ্রেণি হওয়ায় কয়েক ধরনের ছাড়পত্র পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অফিসের অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা নেই। ঢাকা থেকে অনুমোদন আনতে দু-এক মাস লাগছে। এ কারণে বর্তমানে ৩৭টি আমদানিকৃত পুরোনো জাহাজ ভাঙার অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এসব জাহাজের প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। কিন্তু কাটার অনুমতি পেতে দেরি হওয়ার কারণে প্রতিদিন জাহাজপ্রতি গড়ে পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংক সুদ গুনতে হচ্ছে। 

পুরোনো জাহাজ ভাঙা ব্যবসায়ীদের মতে, ডলার সংকট ও এলসি জটিলতার কারণে চট্টগ্রামের জাহাজ ভাঙা শিল্প প্রায় থমকে গিয়েছিল। তবে গত বছরের শেষ ছয় মাসের তুলনায় নতুন বছরের প্রথম চার মাসেই আমদানি বেড়েছে। নতুন করে এলসি দেয়া ও সীমিত পরিসরে ডলার সরবরাহের কারণে বছরের প্রথম চার মাসে আমদানি কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে স্ক্র্যাপ জাহাজের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল। সংকট থাকলেও পরিস্থিতি এখন কিছুটা ভালো। দেশের আর্থিক পরিস্থিতির সংকট ক্রমেই কাটতে শুরু করেছে। তবে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০২৩’-এর কারণে জাহাজ সৈকতায়ন করার পরও ছাড়পত্র বা জাহাজ ভাঙার অনুমোদন পেতে দেড় থেকে দুই মাস চলে যাচ্ছে। এতে অনেক সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। মূলত আইনে জাহাজ ভাঙা শিল্পকে ‘লাল তালিকায়’ আনার কারণে এ জটিলতার হচ্ছে।

জাহাজ ভাঙার সংগঠন বিএসবিআরএর নেতারা বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০২৩’ আইনে জাহাজ ভাঙা শিল্পটিকে আবার লাল তালিকায় ফিরিয়ে আনার আগে শিপ রিসাইক্লিং বোর্ড, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা এবং প্রধান স্টেকহোল্ডার বিএসবিআরএর কোনো মতামত নেয়া হয়নি। যেহেতু এ শিল্পটি আন্তর্জাতিক

ব্যবসার অধিভুক্ত, সেজন্য নতুন আইনের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়। এতে দেশের ইস্পাতশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিএসবিআরএর একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না থাকার শর্তে বলেন, ‘আমাদের বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা গ্রিন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে রূপান্তরের জন্য কাজ করছে। চলতি বছরে বেশ কয়েকটি ইয়ার্ডের কাজ শেষ হবে। অথচ ইয়ার্ডগুলো যখন অনুন্নত ছিল, তখন জাহাজ ভাঙা শিল্প পরিবেশ অধিদপ্তরের কমলা শ্রেণিভুক্ত ছিল। নতুন আইনে এ শিল্পটিকে আবারও লাল শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। অনেক অর্থ ব্যয় করে ইয়ার্ডগুলো গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তর করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। লাল শ্রেণি হওয়ায় অনেক ধরনের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অফিসের ছাড়পত্র অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা নেই। ঢাকা থেকে অনুমোদন আনতে হলে দু-এক মাস লেগে যাচ্ছে। এলসি করে এত দিন বসে থাকলে ব্যবসায়ীরা টিকতে পারবেন না। তাই আমরা জাহাজ আমদানি বন্ধ করে দেব। এমনকি এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপও করেনি। আবার এক মাসে একবার মিটিংয়ে জাহাজ কাটার অনুমতি দেবে। এভাবে কি শিল্প চলবে? 

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (জেলা) ফেরদৌস আনোয়ার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পরিবেশ আইনে লাল তালিকায় অবস্থান করা মানে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আইন অনুযায়ীই ঢাকা থেকেই অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে। আমার কাছে এ পর্যন্ত ৩৮টি জাহাজ কাটার আবেদন এসেছে। এর মধ্যে আমরা ৩০টির অনুমোদন ঢাকায় পাঠিয়েছি। আইন নতুন বলে হয়তো কিছুটা সময় লাগছে। তবে আমরা এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক। আগে আমরা চট্টগ্রাম থেকে অনুমতি দিতাম। এখন লাল শ্রেণি হওয়ায় তা ঢাকা থেকে নিতে হচ্ছে। তবে বিষয়টি সহজ করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩’-এ শিল্পটিকে লাল শ্রেণিভুক্ত করার পর ব্যবসায়ীরা তা প্রত্যাহারে তৎপর হন। এরই অংশ হিসেবে জাহাজ ভাঙা শিল্পকে ‘কমলা-খ’ শ্রেণিতে রাখার নিদের্শনা দেয়া হয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়া অধিশাখা থেকে। ১৫ মে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মোমিনুর রশীদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে এই নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।