নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পরীক্ষা ছাড়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে জিপিএ-৫ পাওয়ায় এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। সব বোর্ডের মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এবারের পরীক্ষার ফলাফলের বিভিন্ন দিক গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিতে নিবন্ধন করা ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থীর সবাই পাস করেছেন। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। মহামারির আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ; আর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন মোট ৪৭ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, ঢাকা বোর্ডে ৫৭ হাজার ৯২৬, রাজশাহীতে ২৬ হাজার ৫৬৮, কুমিল্লায় ৯ হাজার ৩৬৪, যশোরে ১২ হাজার ৮৯২, চট্টগ্রামে ১২ হাজার ১৪৩, বরিশালে পাঁচ হাজার ৫৬৮, সিলেটে চার হাজার ২৪২, দিনাজপুরে ১৪ হাজার ৮৭১ এবং ময়মনসিংহ বোর্ডের ১০ হাজার ৪০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এছাড়া মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে চার হাজার ৪৮ এবং কারিগরি বোর্ড থেকে চার হাজার ১৪৫ জন শিক্ষার্থী পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পেয়েছেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
১১টি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৩ হাজার ৩৩৮ জন ছাত্রী এবং ছাত্র ৭৮ হাজার ৪৬৯ জন ছাত্র। সেই হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিকে ছাত্রদের থেকে চার হাজার ৮৬৯ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
অষ্টম শ্রেণির সমাপনী (জেএসসি) ও সমমানের এবং এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের গড় করে এইচএসসির ফল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ফলে জেএসসি-জেডিসির ফলকে ২৫ এবং এসএসসির ফলকে ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করা হয়।
এবারের এইচএসসি ও সমমানের মূল্যায়নে সবাইকে পাস করানো হয়েছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। পরীক্ষা না নিয়ে ফল প্রকাশে আইন সংশোধন করা হয়। সংশোধনের পর গতকাল একযোগে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়, যাতে পৌনে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান ঘটে।
এইচএসসি ও সমমানে গতবার পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তার আগের বছর ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থী। গতবার এই সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ২৮৬। তার আগের বছর ছিল ২৯ হাজার ২৬২। প্রসঙ্গত, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বছর এবং এবার মহামারির মধ্যে পরীক্ষা ছাড়া সব শিক্ষার্থীকে পাস করানো হলো।
অর্থ ফেরত পাবেন পরীক্ষার্থীরা
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা ফরম পূরণের সময় যে অর্থ জমা দিয়েছিলেন, পরীক্ষা না হওয়ায় তার কিছু অংশ ফেরত পাবেন তারা। পরীক্ষা ছাড়াই আগের পরীক্ষার ভিত্তিতে মূল্যায়নের মাধ্যমে এবারের এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে একথা জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ বাবদ আদায়কৃত অর্থের অব্যবহিত অংশ ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থীর এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ১ এপ্রিল থেকে।
কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। তার আগে এসএসসি পরীক্ষা হয়ে গেলেও আটকে যায় এইচএসসি পরীক্ষা। মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হওয়ায় অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসির ফলাফলের গড় করে ২০২০ সালের এইচএসসির ফল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু আইনে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশের বিধান থাকায় তা সংশোধনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেই আইন সংশোধনের পর গতকাল ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ফল প্রকাশ করেন।