শেয়ার বিজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন বছরের প্রথম দিনই দাম বৃদ্ধি দিয়ে লেনদেন শুরু করেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক এবং ওপেকবহির্ভূত দেশগুলো উৎপাদন কমাচ্ছে এমন আশায় পণ্যটির বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। খবর রয়টার্স।
নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটে (ডব্লিউটিআই) ব্যারেলে দাম বেড়ছে দুই দশমিক ৪১ শতাংশ। এদিন পণ্যটির দাম প্রতি ব্যারেল ৫৪ ডলার ৫৬ সেন্টে বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে লন্ডনের ইন্টার কন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার ব্রেন্টের দাম বেড়েছে ব্যারেলে দুই দশমিক ২২ শতাংশ। এদিন পণ্যটি ৫৮ ডলার শূণ্য ৮ সেন্টে বিক্রি হয়। ২০১৫ সালের জুলাইয়ের পর এটাই সর্বোচ্চ মূল্য।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমাতে ওপেকবহির্ভূত ১১টি উৎপাদনকারী দেশ উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্তে মত দেয়। রাশিয়াসহ এসব দেশ শনিবার ঘোষণা দিয়েছে, প্রতিদিন তারা পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন কমাবে। এর আগে গত মাসে ওপেক সদস্য দেশগুলো উত্তোলন কমানোর বিষয়ে একমত হয়। ২০০১ সালের পর এই প্রথম ওপেক ও নন-ওপেক দেশগুলো একসঙ্গে জ্বালানি তেল উৎপাদন কমাতে চুক্তিবদ্ধ হয়।
২০১৬ সালের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে। বছরের শুরুতে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৫৫ দশমিক ০৫ মার্কিন ডলার। তবে গত শুক্রবার বছরের শেষদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম দেখানো হয়েছিল ৫৩ দশমিক ৭২ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বহুল ব্যবহৃত এ পণ্যের দাম প্রায় দুই দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও সাত বছরে এ খাতে বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে। এরপরও তেলের দাম বাড়াতে আগামীতে এর উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক এবং তাদের সহযোগী দেশগুলো।
২০১৬ সালে তেলবাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ৪৫ শতাংশ এবং ব্রিটেনের ব্রেন্ট ৫২ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে। ২০০৯ সালের পর এটিই সর্বোচ্চ।
এতে আরও জানানো হয়েছে, ২০০৯ সালে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের ৭১ শতাংশ থেকে ৭৮ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা হয়েছিল। এরপর আন্তর্জাতিক তেলবাণিজ্যে মুনাফা কমতে থাকে। তবে ২০১৬ সালে সে মুনাফা আবারও বেড়ে যায়।
ওয়াশিংটনের জ্বালানি পণ্যদ্রব্যের বিশেষায়িত ব্রোকার পাওয়ার হাউজের প্রেসিডেন্ট এলাইন লেভিন বলেন, ২০১৬ সালে অল্প বাণিজ্যে ভালো মুনাফা করেছে জ্বালানি তেলবাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এমনকি ২০১৭ সালের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে তারা।
তিনি বলেন, সাত বছরের মধ্যে ২০১৬ সালেই বিশ্ববাজারে রেকর্ড পরিমাণ লাভ হয়েছে তেলবাণিজ্যে। আগামী দুবছরে তেল উৎপাদন কমিয়ে এর দাম আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওপেকভুক্ত দেশগুলো।
এদিকে বছরের বেশিরভাগ সময় তেলের দাম নি¤œমুখী থাকার জন্য বাজারে ডলার শক্তিশালী হওয়াকেই দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, তেলের অতিরিক্ত উৎপাদন কোনোভাবেই এর দাম কমার জন্য দায়ী নয়।
অপেক বর্হিভূত দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া ছাড়াও আজারবাইজান, ওমান, মেক্সিকো, মালয়েশিয়া, সুদান, দক্ষিণ সুদান ও বাহরাইন শনিবার ভিয়েনার বৈঠকে অংশ নেয়। এ চুক্তির বাস্থাবায়নের লক্ষ্যে আগামী বছর ২৫ মে আবার ওপেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৪ সালের জুনে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি হয় ১১৫ ডলারে। কিন্তু অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে তা ব্যারেল প্রতি ২৭ ডলারের নিচে নেমে আসে। অন্যদিকে বিশ্বে তেলের চাহিদাও কমে যায়। বিশ্বের দ্বিতীয় বড় অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে যাওয়া এর একটি বড় কারণ। সেসময় চীনে তেলের চাহিদাও কমে যায়। এ পরস্থিতিতে বেশিরভাগ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমতে থাকে ব্যাপক হারে। নতুন বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। জ্বালানি তেলের দাম কমায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশেগুলোর মধ্যে রাশিয়া অন্যতম।