প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

টিউশন মিডিয়া ব্যবসা বন্ধে ব্যবস্থা নিন

পাঠকের চিঠি

দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষার বিকাশে  শিক্ষাপদ্ধতি ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে বড় বাধা হচ্ছে দারিদ্র্য। অনেক শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনার ব্যায়ভার বহন করতে না পেরে কিংবা পারিবারিক আর্থিক দৈন্যদশায় ছিটকে যায় জ্ঞানার্জন থেকে। বিশ্বের অনেক দেশে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর নিজেদের খরচ নিজেরা বহন করার রীতি প্রচলন থাকলেও আমাদের দেশে তার প্রকাশ খুবই কম। এ দেশে খণ্ডকালীন চাকরিকে ছোট মনে করা হয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, শিক্ষাজীবনে অর্থ উপার্জনের অন্যতম সম্মানযোগ্য, উপযোগী মাধ্যম হচ্ছে টিউশন। এতে যেমন জ্ঞানার্জনের সঙ্গে যুক্ত থাকা যায় ঠিক তেমনি অর্থ উপার্জনও হয়। শিক্ষাজীবনে টিউশনের গুরুত্বকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এ টিউশনের ওপর নির্ভর করে অনেক শিক্ষার্থী নিজের চাহিদা মেটায় আবার অনেকে পরিবার চালায়। ছাত্রজীবনে টিউশন করিয়ে অর্থ আয়ের কারণ ও যথেষ্ট বৈচিত্র্যময়। যেমন কেউ নিজের চলার খরচ জোগাতে বাধ্য হয় টিউশন করতে, কেউবা শখ পূরণের প্রত্যাশায় আবার কেউ কেউ তো এ দিয়ে পরিবারের হাল ধরে।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও কলেজের বেশিরভাগ নিন্মবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ওঠে আসে। তাদের পড়াশোনার ব্যয় নিজেদের বহন করা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। দেশের শহরে টিউশন খুঁজে পাওয়া যে বড়ই দুষ্কর। একটা টিউশন খুঁজতে গিয়ে কত বেগ পোহাতে হয় তা ভুক্তভোগীই অনুভব করতে পারেন।

শতচেষ্টার পরও টিউশন পাওয়া পাচ্ছে না। শহরের সব টিউশন এখন টিউশন মিডিয়ার কব্জায়। শহরের অলিগলিতে, নামে-বেনামে শত শত টিউশন মিডিয়া গড়ে উঠেছে। আবার অনেক মিডিয়া তো সরাসরি  প্রতারকদের নিয়ন্ত্রণে।

গ্রাম থেকে শহরে আসা শিক্ষার্থীরা নিজের খরচ জোগাতে হন্যে হন্যে হয়ে যখন টিউশন খুঁজে, তখন এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে টিউশন মিডিয়াগুলো  প্রতারণা করছে। দেখা যায়, মিডিয়াগুলো টিউশনের প্রচারে লিফলেট, পোস্টার এবং সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ব্যবহার করছে ফাঁদ হিসেবে। টিউশন দেয়ার আগেই অগ্রিম টিউশনের প্রথম মাসের ৫০-৭০ শতাংশ টাকা দিতে হয় মিডিয়াকে। আবার অভিনব কৌশল অনুসরণে ও পিছিয়ে নেই সেই কথিত মিডিয়া দালালরা। যেমন গৃহশিক্ষক দেয়ার এক-দুই মাস পরে অভিভাবকদের বলা হয় ‘আমাদের কাছে আরও অভিজ্ঞ শিক্ষক আছেন, তার চেয়ে ভালো পড়াবেন আশা করি’। এমন নানা কথাবার্তা বলে অভিভাবকদের মনে দক্ষ শিক্ষকের লোভ জাগিয়ে তোলেন। পুনরায় উভয় পক্ষ থেকে টাকা নেয়া হয়। মাঝখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই শিক্ষার্থী যে টিউশনকে খড়ের মতো আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছিল। প্রশ্ন হতে পারে, যাদের টিউশন প্রয়োজন তারা পোস্টার, লিফলেট দিয়ে প্রচারণা করলেই তো পারে। অনেকেই সেভাবে টিউশন পেয়েছে, পাচ্ছে। কিন্তু তা নেহাতই কম। কেননা এখানেও রয়েছে মিডিয়া চক্রের কারসাজি; যা ভেস্তে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রচারণা। 

বর্তমানে টিউশন অনেকটা দুষ্টচক্রের আবর্তনে। এ নিয়ে প্রশাসনেরও তেমন নজরদারি লক্ষ করা যায় না। প্রায়ই দেখা যায়, টিউশন মিডিয়ার প্রতারণায় অনেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত। তখন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসে।

টিউশন মিডিয়া সেবার নামে বাণিজ্য গড়ে তুলেছে। তবে এর সুবিধা নেই, তা বলা যাবে না। যেমন অভিভাবকরা চাহিদামতো গৃহশিক্ষক পাচ্ছেন। সহজে ভালো গৃহশিক্ষক পাচ্ছেন। তেমনি অনেক টিউশন খুঁজতে থাকা শিক্ষার্থীর যেমন প্রতারিত হচ্ছেন অনুরূপ অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা খবর বেড়েই চলেছে।

এখন সময় এসেছে পরিবর্তনের। নামে-বেনামে গড়ে ওঠা টিউশন মিডিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং টিউশনের মতো শিক্ষা সহযোগী অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনা অতীব জরুরি। প্রত্যাশা, কোনো শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক যাতে নতুন করে প্রতারণার শিকার না হন হয়। কথিত মিডিয়ার লাগাম টানতে প্রশাসনের সদিচ্ছা প্রয়োজন।

গিরেন্দ্র চক্রবর্তী

শিক্ষার্থী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পাঠকের চিঠি