প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার পদ্ধতি জনবান্ধব করুন

ব্যবসার প্রথম এবং প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ট্রেড লাইসেন্স (ব্যবসার অনুমতিপত্র)। ট্রেড লাইসেন্স সরকার বা সরকারি সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতিপত্র, যার মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সরকারের আইনি এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত ভৌগোলিক এলাকায় ব্যবসা করার অনুমতি দেয়া হয়। সাধারণত স্থানীয় সরকার পরিষদ যেমন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ; পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন এ অনুমতি দিয়ে থাকে। ট্রেড লাইসেন্স থাকলেই সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের দেয়া সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসে।

মুদি ব্যবসা কিংবা কারখানাÑ যেকোনো ব্যবসায়ই ট্রেড লাইসেন্স অবশ্যই করতে হবে। তা না হলে ব্যবসাটির আইনগত বৈধতা থাকবে না। আইনগত বৈধতা ছাড়া ব্যবসা করা অর্থাৎ অনুমোদনহীন ব্যবসা পরিচালনার জন্য জরিমানা কিংবা দণ্ডের বিধান রয়েছে। ব্যবসায় যেহেতু এটি অপরিহার্য, নাগরিকদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজ ও সুলভ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কেননা সেবা প্রাপ্তি সহজ ও নিশ্চিত করা হলে এবং নাগরিকরা তা অগ্রাহ্য করলেই আইনের আওতায় আসবেন। সেবাদানে সীমাবদ্ধতার কারণে কেউ যদি অনুমতি গ্রহণে অপারগ হন; সেজন্য তাকে শাস্তি দেয়া নৈতিকতার পরিপন্থি। 

ব্যবসার অনুমতিপত্র নিতে গিয়ে নাগরিকরা কত ধরনের ভোগান্তিতে পড়েন; ভুক্তভোগীই জানেন। গতকাল শেয়ার বিজ পাঠকরাও জেনেছেন ‘ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ পাঁচ বছর: বেশিরভাগ সিটি-পৌরসভা-ইউনিয়ন জানে না’ শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে। আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ এখনও অভিন্ন ফরম্যাট পায়নি। ডিএনসিসি ছাড়া সব জায়গায় অ্যানালগ পদ্ধতিতে আবেদন করতে হয়। গত বছর ব্যবসা সহজীকরণের লক্ষ্যে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের মেয়াদ পাঁচ বছর করার দাবি জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। পরে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। তারা স্থানীয় সরকার বিভাগকে লিখিত আকারে জানায়। স্থানীয় সরকার বিভাগ বিষয়টি দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে অবহিত করে। কিন্তু, খোদ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কাউন্সিলররাই জানেন না পাঁচ বছরের জন্য ট্রেড লাইসেন্স দেয়া ও নবায়ন করা যাবে। একই চিত্র পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়েও।

বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে ট্রেড লাইসেন্স করা অত্যাবশ্যক। সেটি এমনিতেই পওয়া যায় না। নির্দিষ্ট নিয়মে আবেদন করতে হয় এবং তা প্রাপ্তিতে কিছু কাগজপত্রও দাখিল করতে হয়। যেমনÑব্যক্তিগত ব্যবসায় ভাড়ার রসিদ অথবা চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি এবং গৃহকর পরিশোধের রসিদের কপি এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এসব প্রমাণপত্রের সঙ্গে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র, প্রতিষ্ঠানের অবস্থান চিহ্নিত মানচিত্র, অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র; অনুমোদনদানকারী সংস্থার নিয়মকানুন মান্য করার শর্তে ১৫০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারপত্র প্রয়োজন।  প্রতিষ্ঠানের ধরনের ক্ষেত্রে আলাদা শর্ত পরিপালন করতে হয়। যেমনÑক্লিনিক অথবা ব্যক্তিগত হাসপাতাল; পিএলসি; ছাপাখানা ও আবাসিক হোটেল; রিক্রুট এজেন্সি; অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং ওষুধ ও মাদকদ্রব্য ব্যবসায় প্রভৃতি। যাচাই-বাছাই করেই লাইসেন্স দেয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার পরিষদের কর্তাব্যক্তিরাই জানেন না, ট্রেড লাইসেন্স প্রতি বছর নয়, পাঁচ বছর পরপর নবায়ন করতে  হয়।  ব্যবসা সহজ করতে ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেতে পারেন, সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগে নেবে বলেই আমাদের প্রত্যশা।