নিজস্ব প্রতিবেদক : পতনের পর ঊর্ধ্বমুখী ছিল দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল আগের কার্যদিবসের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেনও অনেকটাই বেড়েছে। তবে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর কমেছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৪ দশমিক ২০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৮৯ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ০ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৭৯ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১২ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ১০১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর কমেছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৪০০টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১৯০টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ২৬টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটেগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ২২০টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১২৮টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৭৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটেগরির ৮৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি ফান্ড ও কোম্পানির দরদাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ৩৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
‘জেড’ ক্যাটেগরির ৯৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৭৬টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৬টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও বেশির ভাগ ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে। লেনদেন হওয়া ৩৫টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র ২টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে ২৩টি ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১০টি ফান্ডের ইউনিট দর।
ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৭ কোটি ৩৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৯টি শেয়ার ও ইউনিট তিন লাখ ২৪ হাজার ১৩১ বার হাতবদল হয়েছে। এর জেরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭৬৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
চলতি বছরে প্রথমবার ডিএসইতে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মিলেছে। এর মাধ্যমে ২০২৪ সালের ১৪ আগস্টের পর সর্বোচ্চ লেনদেনের ঘটনা ঘটল।
এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে মালেক স্পিনিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি ২৭ লাখ টাকার। ৩১ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑবিচ হ্যাচারি, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, সোনালী পেপার এবং সিটি ব্যাংক।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরে ধীরে উন্নতি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে বাজার আরও চাঙ্গা হতে পারে। গতকাল পুঁজিবাজারের এই তেজিভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। আগামী দিনগুলোয় বাজারের এই ইতিবাচক ধারা বজায় থাকে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূচক বাড়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেনেরও পরিমাণ বেড়েছে। এটি বাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, আগামী দিনগুলোতেও এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকবে।

Discussion about this post