মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এখনও ক্রয়যোগ্য। অংশগ্রহণ বাড়ছে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। দীর্ঘদিন থেকে নেই বাজারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন। সব মিলে বাজার এখন অনেকটা স্থিতিশীল। এর প্রভাব পড়েছে বাজার মূলধনেও। এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি। বছর শেষে একে ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ১৫ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা, গতকাল সোমবার পর্যন্ত এটা বেড়ে দঁাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৩৭ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজার মূলধন বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ। বছরের প্রথম থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। চলতি মাসের মোট লেনদেনে ৫৪ শতাংশের ওপরে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অবদান, যা নভেম্বরে ৫২ শতাংশ, অক্টোবর ও সেপ্টেম্বরে ৫৫ শতাংশ, আগস্টে ৫৪ শতাংশ, জুলাই ও জুনে ৫৬ শতাংশ, মে ও এপ্রিলে ৫৪ শতাংশ, মার্চ-জানুয়ারিতে ৫৩ শতাংশের ওপরে ছিল। বছর শেষে যার প্রভাব পড়েছে বাজার মূলধনে।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘বছরের শুরু থেকেই পুঁজিবাজার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। সেই সঙ্গে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণও ছিল সন্তোষজনক। যে কারণে বছর শেষে পুঁজিবাজারের একটি ইতিবাচক চিত্র দেখা যাচ্ছে।’
একই প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমরা একটি স্থিতিশীল বাজার দেখতে পাচ্ছি। এটা ভালো লক্ষণ। তাছাড়া বাজারে কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিক উত্থান বা পতন দেখা যাচ্ছে না। যার ফলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।’
এদিকে বাজার মূলধন বাড়ার আরেকটি কারণ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। চলতি বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার লেনদেন এবং কেনাবেচার ব্যবধান উভয়ই বেড়েছে। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন আগের বছরের তুলনায় এক হাজার ২৫ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ১৫ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের ১১ মাসে ডিএসইতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাত হাজার ৭৯৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন করেছেন, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ছয় হাজার ৭৭২ কোটি ২১ লাখ টাকা। তাছাড়া চলতি বছর বিদেশিরা বিক্রির চেয়ে বেশি পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন। এ বছর এ সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চার হাজার ৩৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট ক্রয় এবং তিন হাজার ৪২১ কোটি দুই লাখ টাকার বিক্রি করেন।
বাজার মূলধন বাড়ার প্রভাব পড়েছে সূচকেও। বছরের শুরুতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৪ হাজার ৬২৪ পয়েন্টে। লেনদেন ছিল ৩৬৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এরপর মে মাসের উত্থানের পর জুন মাসে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দেওয়ায় সূচক ও লেনদেন উভয়ই কমে যায়। জুলাইয়ের শুরুতে ডিএসইএক্স সূচক কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪৯৫ পয়েন্টে এবং লেনদেন নেমে আসে ২০৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকায়। ছোট ছোট উত্থানে ১৮ ডিসেম্বর শেষে ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৯৩৮ পয়েন্ট এবং লেনদেন ৯৭৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
অন্যদিকে গত কয়েক বছর পুঁজিবাজারে ব্যাংকিং খাতের অবদান কম থাকলেও এবার সার্বিক বাজারে ব্যাংকের অবদান ছিল সন্তোষজনক। আস্থা সংকটের কারণে মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের অবদান ৬ শতাংশের নিচে নেমে গেলেও, এ বছর সে অবস্থা থেকে কিছুটা উত্তরণ ঘটেছে। মোট লেনদেনে ব্যাংকের অবদান ১০ শতাংশে উঠে এসেছে।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতে, এ বছর পুঁজিবাজার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। এরপরও তারা ২০১০ সালের ধসের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সে জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা, যা এক বছরে সম্ভব নয়। আগামী বছরটিও যেন এমন হয়Ñএ প্রত্যাশা সবার। তারা জানান, ২০১০ সালের ধসে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগেরই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। এখনও তারা সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। সেই জন্য ভবিষ্যতে স্থিতিশীল বাজারই কাম্য বিনিয়োগকারীদের। এজন্য তারা সরকারসহ সবার কাছে প্রত্যাশা করে যেন সিদ্ধান্তগুলো পুঁজিবাজারবান্ধব হয়। কারণ আগে পুঁজিবাজারবান্ধব সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের অনেক লোকসানে পড়তে হয়েছে।