নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারে বড় দরপতন ঘটে। দিনের লেনদেন শেষে কোম্পানিটি ছিল দরপতনের শীর্ষ তালিকায়। দর পড়ে যাওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী এই কোম্পানির শেয়ার কেনেন। ফলে বিপুল পরিমাণ শেয়ার লেনদেনের কারণে পুঁজিবাজারে লেনদেনের শীর্ষ তালিকায়ও স্থান দখল করে নেয় ওরিয়ন ইনফিউশন। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম চাঞ্চল্য তৈরি হয়।
এ বিষয়ে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের কোম্পানি সচিব নাজনীন নাহার রাখির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি।
এদিন শেয়ার লেনদেনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল খান ব্রাদার্স পি পি ওভেন ব্যাগ লি.। কোম্পানিটির ২৬ কোটি ১০ লাখ ১৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার লেনদেন হয় ১৬ কোটি ৪৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
গতকাল ডিএসইতে দরপতনের শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ছিল ফিনিক্স ফাইন্যান্স ১ম মিউচুয়াল ফান্ড (৪.০০%) এবং তৃতীয় স্থানে ছিল রিং শাইন টেক্সটাইল (৩.৭০%)। দরপতনের শীর্ষ দশে আরও ছিল ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড (৩.৪৫%), আইএফআইসি ১ম মিউচুয়াল ফান্ড (৩.৩৩%), এলআর গ্লোবাল মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান (৩.১৩%), বাংলাদেশ ফাইন্যান্স (২.৯৬%), ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমস (২.৬০%), আজিজ পাইপস (২.৩৯%) এবং নিউ লাইন ক্লোথিংস (২.৩৮%)।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার গতকাল বৃহস্পতিবার ৪.৪৮ শতাংশ বা ২২ টাকা ৭০ পয়সা দর হারিয়েছে এবং দিন শেষে এর সর্বশেষ লেনদেন মূল্য ছিল ৪৮৩ টাকা ৬০ পয়সা। এর বিপরীতে, গতকালের বাজারে কোম্পানিটির মোট ৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৩৫টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৩১ কোটি ৯৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। বাজারে যখন এই শেয়ারটির দরপতন ঘটছে, ঠিক তখনই বিপুল পরিমাণ লেনদেন হওয়াকে বিনিয়োগকারীরা ‘প্যানিক সেল’ হিসেবে দেখছেন।
আর্থিক সূচক বিবেচনায় এই পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ কোম্পানিটি সাধারণত অত্যন্ত উচ্চ মূল্যায়নে পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়ে থাকে। গতকাল পতন সত্ত্বেও এর মূল্য আয় অনুপাত (পিই) ছিল ২৫৮ দশমিক ৬১ গুণ, যা ইন্ডাস্ট্রি অ্যাভারেজের তুলনায় অনেক বেশি।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের মূল কারণ হলো, কোম্পানিটির ৩০ জুন অর্থবছর শেষ হয়েছে এবং যেকোনো দিন পরিচালনা পর্ষদ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে যখন বিনিয়োগকারীরা ভালো ডিভিডেন্ডের প্রত্যাশা করছিলেন, ঠিক তখনই শেয়ারটির বড় দরপতন ঘটল।
বাজারে গুঞ্জন রয়েছে, কোম্পানিটি মূলধন বাড়ানোর জন্য রাইট শেয়ার ঘোষণার একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে (বিএসইসি) জমা হয়েছে। অনেক দিন হয়ে গেলেও এ বিষয়ে বিএসইসির কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। গতকালের পড় পতনের এটিও একটি কারণ হতে পারে, যার আভাস পেয়ে কিছু বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি শুরু করেছেন।
অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শেয়ারটির গত এক বছরে মূল্য বেড়েছিল ১০৩ শতাংশ। অর্থাৎ এটি মূলত একটি স্পেকুলেটিভ শেয়ার, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি অন্যতম জনপ্রিয় শেয়ার হিসেবে বিবেচিত। গতকালের পতনকে কিছু বিনিয়োগকারী এই উচ্চ মুনাফা তুলে নেয়ার কৌশল বা ‘প্রফিট বুকিং’ হিসেবে দেখছেন।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকালের বাজারে ওরিয়ন ইনফিউশনের পারফরম্যান্স ছিল এক মিশ্র বার্তা। একদিকে এর বড় দরপতন এবং অন্যদিকে বিপুল লেনদেনÑএই দুই-ই প্রমাণ করে, কোম্পানিটিকে ঘিরে বাজারের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা এখন চরমে। বিনিয়োগকারীদের তাই ডিভিডেন্ড ঘোষণা এবং আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত অত্যন্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানির মধ্যে ছিলÑসামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ডমিনেজ স্টিল, সোনালী পেপার, লাভেলো আইসক্রিম এবং রবি আজিয়াটা।
এইদিন লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস পিএলসি। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৭ টাকা ৭০ পয়সা বা ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে ছিল ফারইস্ট ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, যার শেয়ারদর ১০ শতাংশ বেড়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের শেয়ারদরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া দরবৃদ্ধির শীর্ষ দশে আরও ছিল ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স (৯.৯৬%), আনোয়ার গ্যালভানাইজিং (৯.৯৫%), গোল্ডেন সন (৯.৯০%), তিলিল (৯.৮৯%), ফু-ওয়াং ফুডস (৯.০৯%), দি পেনিনসুলা চিটাগং (৭.৮০%) এবং শাইনপুকুর সিরামিকস (৭.৬৪%)।
প্রিন্ট করুন





Discussion about this post