প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিন

দেশে ডেঙ্গু-পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু-বিষয়ক বিবৃতিতে জানানো হয়, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৭০ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৩৯ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ভর্তি হয়েছেন ৩১ জন। এ নিয়ে গত ১ জানুয়ারি থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ২২ হাজার সাত।

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আড়াল করার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে রাজধানীর জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে। একজন মেয়র একবার ডেঙ্গুর প্রকোপকে ‘ছেলেধরার মতো গুজব’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধি পাওয়া মানে জনপ্রতিনিধিরা এর বাহক এডিস মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেননি। মেয়রদের কাছ থেকে এমন বক্তব্য অপ্রত্যাশিত। অবশ্য পরে দুই মেয়রই স্বীকার করেছেন ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কেবল জনপ্রতিনিধি নয়, সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ রোধে এগিয়ে আসতে হবে।

সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়ে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। কিন্তু জানুয়ারিতেও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা গেছে। এডিস মশার বৈশিষ্ট্যে হয়তো পরিবর্তন এসেছে। তাই সব সময়ই বসতঘরের আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে ওঠে। তবে রাতে উজ্জ্বল আলোয়ও কামড়াতে পারে। তাই এডিসের কামড় থেকে বেঁচে থাকতে জনসচেতনতা প্রয়োজন।

সরকারি হাসপাতাল বিনা মূল্যে ডেঙ্গু শনাক্ত করলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ফি নিচ্ছিল। এ অবস্থায় সরকার ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএসওয়ানের জন্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নেয়া যাবে। অন্যদিকে আইজিজি ও আইজিএমÑএই দুটি পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এছাড়া সিবিসি পরীক্ষার মূল্য হবে ৪০০ টাকা। রাজধানীর সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কভিড ও ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ প্রায় একই। কোনটি কভিড কোনটি ডেঙ্গু, তা বোঝার অবকাশ নেই। অনেক সময় দেখা যায়, নানা কারণ দেখিয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো ডেঙ্গু পরীক্ষায় অনীহা প্রকাশ করে। সরকারের নির্দেশনা পরিপালিত হচ্ছে কি না, তা নজরদারি করতে হবে।

রাজধানীসহ দেশের স্থানীয় সব সিটি, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে মশক নিধনের জন্য ব্যবস্থা নেয়া উচিত। নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। বৃষ্টির পানি জমতে পারে এমন ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, কনটেইনার, মটকা, ব্যাটারির শেল, পলিথিন, বিস্কুট ও চিপসের প্যাকেট প্রভৃতি বিনষ্ট করে ফেলতে হবে। জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার পরিষদকেও পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার করতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে নয়, সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো সম্ভব।