শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাজশাহী ও নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় জেঁকে বসেছে শীত। নিম্ন আয়ের মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে পড়েছে দুর্ভোগে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
রাজশাহী : রাজশাহীতে জেঁকে বসছে শীত। এর সঙ্গে কয়েক দিন ধরেই হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দিন শুরু হলেও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চারদিক। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবীরা। কাজের সন্ধানে আসা এসব মানুষ মহানগরীতে কাজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহীতে এ মৌসুমে তীব্র শীত পড়ে গত সোমবার। ওইদিন রাজশাহীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গতকাল বুধবার নগরীতে তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। নগরীর রেলগেট এলাকায় পবা উপজেলা থেকে কাজ করতে আসা শ্রমিক আবদুর রহমান জানান, দুপুর ১২টার আগে সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশা থাকায় দুদিন ধরে কোনো কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা। নগরীর বিনোদপুর এলাকার ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আমিনুর রশীদ জানান, শীত লাগছে বেশি, ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমেল হাওয়া। কয়েকদিন ধরেই শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জাহিদ হাসান জানান, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকায় ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
নীলফামারী : সনীলফামারীতে পৌষের প্রথম দিনেই শীত জেঁকে বসেছে। বিশেষ করে ডোমার উপজেলায় শীতের দাপট বেশি। নি¤œ আয়ের মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছে। জেলায় সন্ধ্যা নামতে না নামতেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় চারপাশ। সন্ধ্যা নামলে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলো চলাচল করছে। বিপাকে পড়ে যায় হাঁটুরে লোকজন। বিশেষ করে সমস্যায় পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। ডিমলার চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ খড়কুঁটো জ্বালিয়ে শীতের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা লেপ তোশক ক্রয় করে শীত নিবারণ করছে। কিন্তু নি¤œ আয়ের মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রচণ্ড শীতে শিশুসহ বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়া, শিশু ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি, বমি যেন লেগেই আছে। বৃদ্বদের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, বাত ব্যথাসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। নীলফামারী পুলিশ লাইন্স একাডেমির সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তাইয়্যেবা সরকার শ্যামা জানায়, প্রতিদিন সকাল ৭টায় প্রাইভেট পড়তে যেতে হয় প্রায় ৩ কি.মি. দূরে। ঘন কুয়াশায় সকাল বেলা রাস্তা দেখা যায় না। কুয়াসার কারণে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক শিক্ষার্থী শীতের কারণে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। ডোমার উপজেলার গোমনাতী ইউনিয়নের উত্তর আমবাড়ী গ্রামের আলেফা বেগম জানান, গতবার একখান কম্বল দিছিলো। পাতলা কম্বলখান ছিঁড়ে গেইছে। এবার আশায় আছো, কাহো যদি একনা কম্বল দেয়। তাহলে এবার শীতখান কোনরকমে কাটেবার পাইম। নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মনিরুজ্জামান জানান, শিশু ও বৃদ্বদের অবশ্যই ঠাণ্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। গরম পানি ও গরম খাবার খাওয়াতে হবে। গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে, বাসি খাবার পরিহার করতে হবে। কোনো রোগ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এনামুল হক জানান, শীতে শিশুদের ঠাণ্ডা থেকে বিরত রাখতে হবে। গরম কাপড় ও গরম খাবার খাওয়াতে হবে। সামান্যতম সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় হাসপাতাল অথবা কমিউনিটি ক্লিনিকে পরামর্শ নিতে হবে। কোনোভাবেই অবহেলা না করে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুফল চন্দ্র গোলদার জানান, মোট ৩৫ হাজার ৪৩৯টি শীতবস্ত্র বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জেলা ত্রাণ ভাণ্ডারে এসে পৌঁছেছে ২২ হাজার ৬৩৯টি। বাকিগুলো দ্রুত এসে যাবে। সেগুলো সরাসরি উপজেলাগুলোয় বণ্টন করা হবে। জেলায় শীতের প্রকোপ দেখা দিলেও আশা করছি, শীতবস্ত্রের অভাবে গরিব দুঃখী মানুষ কষ্ট পাবে না।