প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

তালিকাভুক্তির পাঁচ বছর আয়-ব্যয়ে ভারসাম্যহীনতায়: মুনাফা কমেছে বীকন ফার্মার

পলাশ শরিফ: আয় বাড়লেও আয়-ব্যয়ে ভারসাম্যহীনতায় কর-পরবর্তী মুনাফা কমেছে বীকন ফার্মার। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পাঁচ বছর পর চলতি অর্থবছরের জুনে এসে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিটির আয় প্রায় ১৫১ কোটি ২৪ লাখ টাকা বেড়েছে। তবে আয় বাড়লেও মুনাফা বাড়েনি। উল্টো এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা কমেছে। দুই দশমিক ৫৪ শতাংশ আয় বাড়ার বিপরীতে ব্যয় প্রায় পাঁচগুণ বাড়ার কারণে পাঁচ বছরেই কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা এক দশমিক ২২ শতাংশ কমেছে।

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, তালিকাভুক্তির দুই বছর পর ২০১২ সালে বীকন ফার্মা আয় করেছিল প্রায় ৯৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে প্রায় সাত কোটি ৫২ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল বীকন। এদিকে পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালের জুনে সর্বশেষ অর্থবছরে প্রায় ২৪৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা আয় করেছে কোম্পানিটি। অর্থাৎ পাঁচ বছরে কোম্পানিটির আয় দুই দশমিক ৫৪ শতাংশ বা প্রায় ১৫১ কোটি ২৪ লাখ টাকা বেড়েছে। কিন্তু আয় বাড়লেও কর-পরবর্তী মুনাফা বাড়েনি। বরং সর্বশেষ অর্থবছরে পাঁচ বছর আগের তুলনায় এক দশমিক ২২ শতাংশ বা এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা কমে ছয় কোটি ১৪ লাখ টাকায় নেমেছে।

ব্যয় বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে কোম্পানিটির কোম্পানি সচিব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের ক্রমাগত আয় বাড়ছে। তবে আয়ের তুলনায় ব্যয়ের হার একটু বেশি। নতুন প্রকল্প ও বাজার তৈরিতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের কারণেই ব্যয় বাড়ছে। তাই আয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর-পরবর্তী মুনাফা বাড়ছে না। তবে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের কারণে অদূর ভবিষ্যতে ব্যয় কমে আসবে। আর বিনিয়োগের সুফল হিসেবে আয় বাড়বে।’

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের বাড়তি ব্যয় মেটাতে গিয়ে কোম্পানিটির আয়-ব্যয়ে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। যে কারণে আয় একটানা বাড়লেও মুনাফা ক্রমশও কমছে। তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালে বীকনের পরিচালন ব্যয় ছিল প্রায় ১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে ওই ব্যয় প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বীকনের কর-পরবর্তী মুনাফার সঙ্গে কমেছে শেয়ারপ্রতি আয়ও।

এদিকে গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৩ সালে সবচেয়ে কম মুনাফা হয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় ওই অর্থবছরে এক দশমিক ২৫ গুণ বা প্রায় ২৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা আয় বাড়ার বিপরীতে পরিচালন ব্যয় ২ দশমিক ১৮ গুণ বাড়ার কারণেই ওই অর্থবছরে বীকনের মুনাফা প্রায় ৯১ লাখ টাকা কমেছিল। অন্যদিকে মুনাফা সন্তোষজনক না হওয়ায় তালিকাভুক্তির সাত বছরে মাত্র দু’বছর (২০১২ ও ২০১৬ সালে) পাঁচ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও ব্যয় বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে বীকনের আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বেড়েছে। এর বিপরীতে পরিচালন ব্যয় হয়েছে ৩৩  কোটি ২২ টাকা। ওই প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা ১৮ লাখ টাকা বেড়ে এক কোটি ১৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

সন্তোষজনক মুনাফা না হওয়ায় গত পাঁচ বছরের মধ্যে চার বছরই ডিভিডেন্ড দেয়নি বীকন ফার্মা। যে কারণে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে কোম্পানিটি। তবে সর্বশেষ অর্থবছরে ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে উঠে আসছে কোম্পানিটি। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা ও লভ্যাংশ না দেওয়ায় ২০১১ সাল থেকে সর্বশেষ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে এক টাকা ৮০ পয়সা দর হারিয়েছে কোম্পানিটি। তবে লভ্যাংশ ঘোষণার পর দাম কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে তালিকাভুক্তির পর থেকেই বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে বীকন ফার্মা। ২০১১ সালে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ছিল ৬২ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট, যা গত পাঁচ বছরে আরও বেড়েছে। কোম্পানিটির পিই রেশিও সর্বশেষ ১১৩ দশমিক ৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।