মেহেদী হাসান, রাজশাহী: মাত্র তিন দিনের ছুটি নিয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবুরেজা তালুকদার। এরপর আর খোঁজ নেই। ফোনে মেলে না খবর। তাকে দফায় দফায় লিখিত তলব করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, তারপরও হদিস মেলেনি। প্রায় ৭ মাসে একদিনও কর্মস্থলে উপস্থিত হননি তিনি। এমনকি তিন দিনের ছুটি তিন মাস গড়ানোর মধ্যেই বদলির আদেশ দেয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর। নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করে অনুপস্থিত থাকেন তিনি। অদ্যাবধি ২১৭ দিন ফাঁকা চেয়ার কর্মকর্তার অপেক্ষায়!
বিভাগীয় ও জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ডা. মো. আবুরেজা তালুকদার গত বছরের আগস্টের ১৫ থেকে ১৭ তারিখ মোট তিন দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। পারিবারিক জরুরি কাজ জানিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে একই অফিসের এলএইও ডা. শামীমা নাসরিনকে সাধারণ দায়িত্ব পালন করতে বলেন। ১৭ দিন পেরিয়ে গেলে সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখে গণকর্মচারী শৃঙ্খলা (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ অনুযায়ী কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান। একইসঙ্গে বিভাগীয় ও প্রাণিসম্পদ মহাপরিচালক বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি। কিন্তু কোনো সদুত্তর মেলেনি।
এলএইও ডা. শামীমা নাসরিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘স্যার গত বছরের আগস্টে তিন দিনের ছুটি নিয়ে এখন পর্যন্ত একদিনও অফিস করেননি। প্রকল্পের কাজ যখন আটকে গিয়েছিল তখন ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আখতারুজ্জামান স্যারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি কাজগুলো করিয়ে নেন। আমরা এভাবেই কাজ করে যাচ্ছি সমস্যার মধ্য দিয়ে। স্যার কোথায় আছেন আমরা জানি না।’
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবুরেজা তালুকদার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি কয়েকদিনের ছুটি নিয়েছি। তারপর বেশ কিছুদিন অফিসে যাইনি। আবার অফিসে যোগদান করেছি। আমি নিয়মিত অফিস করি।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ডা. মো. আবুরেজার বিষয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের আগস্টের ১৫ থেকে ১৭ তারিখ মোট তিন দিনের ছুটি নিয়ে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত ছিলেন। চলতি মার্চ মাসের ১৩ তারিখে যোগদান করে আবার ছুটি নিয়েছেন। দীর্ঘ সময়ে একদিনের জন্যও চেয়ারে বসেননি। বারবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। শাস্তির বিষয়ে চাকরি থাকবে কি না, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. নজরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ডা. মো. আবুরেজার বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত আছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান একাধিকবার নোটিশ ও কৈফিয়ত তলব করেছেন তাতে কোনো কাজ হয়নি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত হওয়ার কোনো নিয়ম নেই। এ জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। অনুপস্থিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা দেবে। যদি সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দিতে না পারে তাহলে দপ্তরের নিয়মানুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে।