শেয়ার বিজ ডেস্ক: তিন মাস পর দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প উৎপাদন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গাড়ি ও হ্যান্ডসেট উৎপাদন বৃদ্ধি এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। দেশটির সরকারি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। খবর সিনহুয়া।
কোরিয়ার পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছরের নভেম্বরে আগের মাসের তুলনায় শিল্প উৎপাদন বেড়েছে এক দশমিক ছয় শতাংশ। আগের দুই মাসে উৎপাদন হ্রাসের পর গত মাসে এটি আবার বাড়ালো। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দেশটির শিল্প উৎপাদন কমেছে যথাক্রমে দশমিক ৪৯ ও দশমিক ৪ শতাংশ।
শিল্প উৎপাদন ঘুরে দাঁড়াতে খনি ও ম্যানুফাকচারিং খাতের বড় ভূমিকা ছিল। গত মাসে এ খাতে উৎপাদন বেড়েছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরের পর এ উৎপাদন সর্বোচ্চ।
প্রধান গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানিগুলোতে শ্রমিক ধর্মঘট ও ব্যাটারি বিস্ফোরণের কারণে স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৭ স্মার্টফোন উৎপাদন বন্ধের পর গত দুই মাস উৎপাদন নি¤œমুখী ধারায় ছিল। এ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নভেম্বরে এ খাতে উৎপাদন বেড়েছে। ফলে গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প উৎপাদনে এ খাতই বড় ভূমিকা রেখেছে।
নভেম্বরে গাড়ি উৎপাদন আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। পাশাপাশি যোগাযোগ ও সম্প্রচার সরঞ্জাম উৎপাদন বেড়েছে ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি উৎপাদন ৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে পরিশোধিত জ্বালানি উৎপাদন কমেছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ।
অন্যদিকে সেবা খাতে শিল্প উৎপাদন আগের মাসের চেয়ে দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এ খাতে উৎপাদন কমে হয়েছিল দশমিক ৮ শতাংশ ও দশমিক ৩ শতাংশ।
এছাড়া গত মাসে রেস্টুরেন্ট ও বাসাবাড়ি খাতে উৎপাদন কমেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ভোক্তারা বাইরে খরচ কমিয়ে দেওয়ায় এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে ৯ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইকে দুই তৃতীয়াংশ ভোটে অভিসংশন করা হয়েছে। তবে সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে অভিসংশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী হোয়াং কিয়ো আন অভ্যন্তরীণ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ৯ বিচারপতির মধ্যে ৬ জনই পার্ককে প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে পরিত্যাগের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়। আর পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের কথাও বলা হয়।
এ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় দেশটির বেসরকারি খাতে খরচের অন্যতম মানদণ্ড খুচরা বিক্রি কমেছে দশমিক ২ শতাংশ। সাথে যোগ হয়েছে।
বকেয়া মজুরির দাবিতে সম্প্রতি বিখ্যাত মোটর নির্মাতা কোম্পানি হুন্দাই মোটর, কিয়া মোটর এবং জিএম কোরিয়ার শ্রমিকদের একটি অংশ চলতি বছরে বেশ কয়েকবার ধর্মঘট পালন করেছে। হুন্দাই মোটরের ইতিহাসে গত ১২ বছরে এমন শ্রমিক অসন্তোষ হয়নি। ওই সময় দেড় লাখ কর্মী কর্মবিরতি দিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। এ ধর্মঘটের কারণে উৎপাদন সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোম্পানির রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। কোরিয়াতেই সবচেয়ে বেশি গাড়ি উৎপাদন করে কোম্পানিটি। গত বছর তাদের মোট বিক্রির যানবাহনের প্রায় ৪০ শতাংশ উৎপাদন করেছে দেশে।
শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এসব কোম্পানিগুলোতে উৎপাদন কম ছিল। ফলে গাড়ি রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতায় গাড়ি রফতানি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির অর্থনীতির জন্য সামগ্রিকভাবে এ বছর ভালো যায়নি। একের পর এক কোরীয় কনগ্লোমারেট নানা কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বহুল আলোচিত নোট৭ স্মার্টফোন বিস্ফোরণের কারণে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসকে বিপুল পরিমাণ পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে হয়েছে। আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও স্যামসাংকে ইমেজ সংকটের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।