দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্র যশোরে ৭.৮
নষ্ট হচ্ছে বোরোর বীজতলা ও শীতকালীন সবজি,
হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
মীর কামরুজ্জামান, যশোর : কনকনে ঠাণ্ডা আর কুয়াশার দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যশোরসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন। হাঁড় কাপানো শীতে হার মেনে যাচ্ছে শীতের পোষাক। আজ রবিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েকদিন এ তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া অনেকে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। সকালেও সড়কে আলো জ্বলে চলছে যানবাহন। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে নষ্ট হচ্ছে বোরোর বীজতলা ও সবজি ক্ষেত। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। চরম দুর্ভোগে সব শ্রেণির মানুষ।
যশোর বিমানবাহিনীর আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, যশোরে শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে। গত এক সপ্তাহ ধরে যশোরের তাপমাত্রা নিম্নমুখী। রবিবার তাপমাত্রা আরও নেমে এসেছে। সকালে যশোরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এখানে রেকর্ড করা হয়েছে ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশাচ্ছন্ন পুরো এলাকা; দৃষ্টিসীমা ১০০ মিটারের মতো। এ কারণে দিনে গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে শীত আরও বাড়ছে। আগামী কয়েক দিন এ ধরনের তাপমাত্রা বিরাজ করতে পারে।
শীতের কারণে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। যত ঠান্ডাই অনুভূত হোক না কেন, জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন ভোরে তাদের রাস্তায় বেরুতে হচ্ছে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা গরম পোশাক গায়ে চাপিয়ে শীত ঠেকাতে পারছে। কিন্তু নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূলদের কষ্টের সীমা নেই। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্টসহ বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি উদ্যোগে সামান্য কিছু কম্বলসহ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
আজ সকালে যশোর পালবাড়ি এলাকায় কথা হয় আব্দুর রহমান নামে এক ইজিবাইক চালকের সাথে। তিনি বলেন, শীত পড়লেও কিছু করার নেই জীবিকার তাগিদে বের হতে হয়েছে। শহরে লোকজনের সংখ্যা কম হওয়ায় ভাড়া নেই বললেই চলে।

পাশেই কথা আনোয়ার আলী নামে আরেক রিকশা চালকের সাথে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে এই সময়ে শহরে বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ হলেও এবার তেমন কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা গরীব মানুষ এই শীতে প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছি। তিনি বলেন, শীতের কারণে মোটেও বের হওয়া যাচ্ছেনা। তার পরও সংসার চালাতে রিকশা নিয়ে বের হতে হয়েছে।
সকালের দিকে ঘনকুয়াশার কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়। দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কে হেডলাইট চালিয়ে যান চলাচল করতে দেখা যায়।
তীব্র ঠাণ্ডা ও ঘন কুয়াশায় যখন বিপর্যস্ত এ অঞ্চলের জনজীবন তখনি এ অঞ্চলের মাঠে মাঠে কৃষক বোরোর চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠে ৮৫১৩ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা রয়েছে। এসব বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সাথে আলুসহ বিভিন্ন সবজিও হুমকিতে পড়েছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক বলেন, শীতের কারণে বীজতলা হুমকিতে থাকলেও এই মূহুর্তে বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার সমস্যা নেই। কারণ যশোরাঞ্চলে যে বীজতলা রয়েছে তা অনেক বড় হয়ে গেছে। এগুলো ঘন কুয়াশার কারণে রঙ বদলালেও নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। তারপরও আমরা কৃষকদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে রাতে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। এর বাইরে দিনের বেলায় ক্ষেত থেকে ঠান্ডা পানি বের করে দিয়ে সেচ দেয়ার কথা বলছি।
তিনি বলেন, শীত ও কুয়াশার কারণে আলুসহ কিছু সবজির সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এটি সহসা কেটে গেলে কৃষক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে, তীব্র ঠাণ্ডায় হাসপাতালগুলো বেড়েছে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাবুবুর রহমান জানান, ‘প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে আসছেন। এ অবস্থায় শিশুদের গরম কাপড়ে ঢেকে রাখা ও গরম খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাকিব রাসেল বলেন, ‘ঠান্ডায় শিশুরা ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। এ সময় বাইরে বের না হওয়ায় ভালো। জরুরি প্রয়োজনে বের হলে গরম কাপড় ও মাস্ক পরতে হবে। বাসি খাবার মোটেই খাওয়া যাবে না। কুসুম গরম পানি পান ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে।’