মো. জিল্লুর রহমান: সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) খুব ভোরে তুরস্কের ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গেছে। প্রথম ভূমিকম্প আঘাত হানার পর দ্বিতীয় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং পরদিন তুরস্কের মধ্যাঞ্চলে আবারও ভূমিকম্প আঘাত হানে। মাত্র এক মিনিটের ভূকম্পন! মুহূর্তে লণ্ডভণ্ড তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহর। ভূমিকম্প নয় যেন মৃত্যুপুরী এবং চারদিকে হাজারও মানুষের আর্তনাদ! সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ার সীমান্ত শহরগুলোও। ভূকম্পনপ্রবণ অঞ্চল তুরস্কে ভূমিকম্প নতুন কিছু নয়, নিয়মিত ঘটনা। ভূমিকম্পে তুরস্কের অন্তত ১০টি শহর তছনছ হয়ে গেছে, মাইলের পর মাইল ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। প্রায় সাড়ে ১০ হাজারের মতো ভবন ধসে পড়েছে। ভূমিকম্পে তুরস্কের ঐতিহাসিক গাজিয়ানতেপ দুর্গ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একই ভূমিকম্পে প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ায় বেশ কিছু প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তুরস্ক ১৯৩৯ সালের পর ৮৪ বছরে এমন ভূমিকম্প আর দেখেনি। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) বলছে, ১৯৩৯ সালেও তুরস্কের পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। সে সময় অন্তত ৩৩ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। দক্ষিণ তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়ায় বিধ্বংসী এ ভূমিকম্পে ইতোমধ্যে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, এ সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে হুহু করে বাড়ছে এবং ধারণা করা হচ্ছে এ ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক এবং সিরিয়ার আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়ে নানাভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুটি দেশেই হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের বাঁচাতে উদ্ধার কর্মীরা প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, উত্তর সিরিয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া লোকজন সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি করছেন কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া দেয়ার মতো পর্যাপ্ত লোক বেঁচে নেই, খুবই মর্মান্তিক ও হƒদয়বিদারক ঘটনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্ধার অভিযানে এগিয়ে এসেছে।
পৃথিবীর অভ্যন্তরে ভূ-আন্দোলনের ফলে উৎপন্ন আকস্মিক শক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভূমিকম্প। এটি এমন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যা পৃথিবীর আকস্মিক কম্পন হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে, যা মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়। এটি পৃথিবীর ভূত্বকের গভীরে ব্যাঘাতের ফলে বা ভূত্বকের মধ্যে গোলযোগের ফলে ঘটে। ভূমিকম্প প্রায়ই পৃথিবীর গভীরে ঘটলেও ভূপৃষ্ঠ থেকে দেখা যায় না। যেকোনো মুহূর্তে পৃথিবীর পৃষ্ঠে বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটতে পারে এবং সেগুলো বিধ্বংসী হতে পারে। ভূমিকম্পের ফলে ভূমিরূপের পরিবর্তন সাধিত হয়, সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয় ও মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আসলে সারা পৃথিবীব্যাপী প্রতিদিনই প্রায় অসংখ্য ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে, যার মধ্যে আমরা সামান্য কিছু অনুধাবন করতে সক্ষম হই।
ভূতাত্ত্বিকদের মতে, জাপান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো তুরস্ক বিশ্বের সবচেয়ে ভূকম্পনপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে একটি এবং দেশটির অবস্থান সেখানে, যেখানে সক্রিয়ভাবে গতিশীল বেশ কয়েকটি টেকটোনিক প্লেট একত্রিত হয়েছে। আরবীয়, ইউরেশিয়ান ও আফ্রিকান প্লেট দ্বারা বেষ্টিত আনাতোলিয়ান টেকটোনিক প্লেটে তুরস্ক অবস্থিত। তুরস্কের সিসমিক ম্যাপ অনুযায়ী, এই প্লেটগুলোর গতিবিধি এখন পর্যন্ত সক্রিয় হওয়ায় দেশে প্রায়ই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে একটি বড় ভূমিকম্প ইস্তাম্বুলে আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করে আসছিলেন। কান্দিরি অবজারভেটরি গবেষকদের মতে, ১৯৯৯ সালের পর এটি তুরস্কের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।
ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের যেমন নানা রূপ পরিবর্তন সাধিত হয়, তেমনি বহু প্রাণহানি ও জনপদ ধ্বংস হয়। প্রথমত, ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠে অসংখ্য ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি হয়। এসব ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভস্থ গরম জল ও বাষ্প বাইরে বেরিয়ে আসে। আবার চ্যুতির সৃষ্টি হলে ভূভাগ উপরে উঠে বা নিচে নেমে স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, ভূমিকম্পের ফলে ধ্বসজনিত কারণে নদীর গতিপথ রুদ্ধ হলে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। যেমন-১৯৫০ সালের ভূমিকম্পে আসামের দিবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছিল। তৃতীয়ত, অনেক সময় সমুদ্র নিচে প্রবল ভূমিকম্প হলে সমুদ্র তলদেশের কোনো অংশ উত্থিত হয়ে সামুদ্রিক দ্বীপ আবার অনেক সময় সমুদ্র মধ্যবর্তী অনেক দ্বীপ সমুদ্র তলদেশে অবনমিত হয়ে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। চতুর্থত, সমুদ্র তলদেশে প্রবল ভূমিকম্প সংঘটিত হলে সমুদ্রের জল ব্যাপক ও বিধবংসী তরঙ্গের আকারে উপকূলের দিকে এগিয়ে এসে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়। এই সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসকে সুনামি বলে। যেমন-২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে এই রূপ সুনামি সংঘটিত হয়েছিল। পঞ্চমত, ভূমিকম্প যেহেতু আকস্মিক ঘটনা, তাই হঠাৎ করে প্রবল ভূমিকম্প হলে শহর ও নগর নিমেষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। অসংখ্য মানুষ, জীবজন্তু মৃত্যু মুখে পতিত হয়। রাস্তাঘাট, রেল, বাঁধ, সেতু ধ্বংস হয়ে যায়, যা তুরস্কের ভূমিকম্পে দৃশ্যমান।
ভূমিকম্পের কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রধানত প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট বা কৃত্রিম কারণে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে-প্রথমত, পৃথিবীর ভূত্বক কতগুলো ছোট বড় চলনশীল পাতের সমন্বয়ে গঠিত। এই রকম দুটি পাতের পরস্পরের দিকে বা পরস্পরের বিপরীত দিকে চলনের ফলে পাত সীমান্ত বরাবর ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এ পাত চলনজনিত কারণেই পৃথিবীব্যাপী ভূমিকম্পের প্রধান কারণ। যেমন-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বরাবর, আল্পস-হিমালয় ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে, মধ্য মহাসাগরীয় শৈলশিরা প্রভৃতি অংশে প্রবল ভূমিকম্পের প্রধান কারণ হলো পাতের চলন। দ্বিতীয়ত, পৃথিবীর ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পগুলোর কারণ হিসেবে এইচ এফ রিড স্থিতিস্থাপক প্রত্যাঘাত মতবাদ প্রকাশ করেন। তার মতে ভূ-আন্দোলনের ফলে শিলাস্তরে প্রবল পীড়নের ফলে চ্যুতিতল বরাবর শিলার ভাঙন ও স্খলন ঘটলে আকস্মিক ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। তৃতীয়ত, আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সাধারণত যেসব আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ সহকারে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়, তার আশপাশের অঞ্চলগুলোতে প্রবল ভূমিকম্প অনুভূত হয়। চতুর্থত, ভূগর্ভের মধ্যে সঞ্চিত বাষ্পপুঞ্জের পরিমাণ যখন অত্যধিক হয়ে যায়, তখন তা প্রবল বেগে শিলাস্তরে ধাক্কা দেয়। এর ফলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের সন্নিহিত অংশে প্রচুর ফাটল থাকায় অভ্যন্তরীণ বাষ্পজনিত ভূমিকম্প প্রায়ই দেখা যায়। পঞ্চমত, সৃষ্টির পর থেকে উত্তপ্ত পৃথিবী ক্রমশ তাপ বিকিরণের মাধ্যমে শীতল হচ্ছে। পৃথিবীর উপরিভাগ শীতল ও কঠিন হলেও অভ্যন্তরভাগ এখনও অত্যধিক উত্তপ্ত রয়েছে। ফলে উপরের ও নিচের স্তরের মধ্যে আয়তনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, তাই ভারসাম্য রক্ষার জন্য ভূপৃষ্ঠের কিছু অংশ অবনমিত হয়ে ভাঁজের সৃষ্টি করে। এরূপ পুনর্বিন্যাসের সময় মাঝে মাঝে ভূমিকম্প হতে পারে। ষষ্ঠত, ভূপৃষ্ঠের উপরভাগে, বিশেষত পার্বত্য অঞ্চলে যখন ধস নামে এবং তার ফলে খাড়া ঢাল বরাবর বিশাল পাথরের স্তূপ প্রবলবেগে নিচে পতিত হয়, তখন তার প্রভাবে ভূকম্পন অনুভূত হয়। সপ্তমত, সুউচ্চ পর্বতমালার বরফাচ্ছন্ন শিখর থেকে বিশাল বরফের স্তূপ বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবল বেগে নিচে পতিত হয়, যাকে হিমানি সম্প্রপাত বলে। এর ফলে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। অন্যদিকে, ভূমিকম্পের মনুষ্য সৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে- প্রথমত, বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশগুলো প্রায় ভূগর্ভে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে থাকে। যার ফলে সেই বিস্ফোরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তীব্র ভূকম্পন অনুভূত হয়। দ্বিতীয়ত, নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম জলাধার নির্মাণ করলে জলাধারে সঞ্চিত জলের প্রচণ্ড চাপে এবং সেই স্থানের ভূ গঠন সুস্থিত না হলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হতে পারে। যেমন-১৯৬৭ মহারাষ্ট্রের কয়না নগরের কয়না বাঁধে সঞ্চিত জল রাশির চাপে ভূমিকম্প হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে, এগুলো হলো বগুড়া চ্যুতি এলাকা, রাজশাহীর তানোর চ্যুতি এলাকা, ত্রিপুরা চ্যুতি এলাকা, সীতাকুণ্ড টেকনাফ চ্যুতি এলাকা, হালুয়াঘাট চ্যুতির ডাওকী চ্যুতি এলাকা, ডুবরি চ্যুতি এলাকা, চট্টগ্রাম চ্যুতি এলাকা, সিলেটের শাহজীবাজার চ্যুতি এলাকা (আংশিক-ডাওকি চ্যুতি) এবং রাঙামাটির বরকলে রাঙামাটি চ্যুতি এলাকা। এছাড়া, বাংলাদেশ, ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মার (মায়ানমারের) টেকটনিক প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয় এবং ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এমনকি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানমন্দিরে ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের মে পর্যন্ত ৪ বছরে রিখটার স্কেলে ৪ মাত্রার ৮৬টি ভূ-কম্পন নথিভুক্ত করা হয় এবং একই সময়ের মধ্যে ৫ মাত্রার চারটি ভূ-কম্পনও ধরা পড়ে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানমন্দিরে ২০০৭ সালের মে থেকে ২০০৮ সালের জুলাই পর্যন্ত কমপক্ষে ৯০টি ভূ-কম্পন নথিভুক্ত করা হয়, তন্মধ্যে ৯টিরই রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিলো ৫-এর উপরে, এবং সেগুলোর ৯৫% এরই উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা শহরের ৬০০ কিলোমিটারের মধ্যে। অতীতের এসব রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ভূমিকম্পের মাত্রা না বাড়লেও ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ভূমিকম্প সংঘটনের হার বেড়েছে, অর্থাৎ ঘন ঘন স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে। মতানৈক্য থাকলেও অনেক ভূতাত্ত্বিক ছোট ছোট ভূমিকম্প সংঘটন বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে উল্লেখ করেন। অতীতের এসব রেকর্ডকে প্রাধান্য দিয়ে গবেষকরা বলছেন, যেকোনো সময় বাংলাদেশে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে এবং এজন্য এখন থেকেই আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশকে ভূমিকম্পের তীব্রতার ভিত্তিতে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। বুয়েটের গবেষকদের প্রস্তুতকৃত ভূ-কম্পন এলাকাভিত্তিক মানচিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৪৩ শতাংশ এলাকা ভূমিকম্পের উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে (জোন-১), ৪১ শতাংশ এলাকা মধ্যম (জোন-২) এবং ১৬ শতাংশ এলাকা নিন্ম ঝুঁকিতে (জোন-৩) রয়েছে। যেখানে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ভূ-কম্পন মানচিত্রে ২৬ শতাংশ উচ্চ, ৩৮ শতাংশ মধ্যম এবং ৩৬ শতাংশ নিন্ম ঝুঁকিতে ছিল।
ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে হলে আগে থেকেই কিছু পূর্ব প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় বিল্ডিং এমনভাবে ডিজাইন করা উচিত যাতে তারা বড় কম্পন সহ্য করতে পারে। একটি নতুন কাঠামো নির্মাণের আগে, মানুষের সর্বদা স্থপতি এবং প্রকৌশলীদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। ভবনের ছাদ উজ্জ্বল রাখা দরকার। বিল্ডিং নির্মাণে শক্তিশালী উপকরণ ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে বেশি; পরিবর্তে, কাঠ বা মাটির কাদা ব্যবহার করা উচিত। ছবির ফ্রেম, গিজার, ঘড়ি এবং অন্যান্য দেয়াল এমন জায়গায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে যেখানে পড়ে গেলে কারো ক্ষতি হবে না। যেহেতু ভূমিকম্প আগুনের কারণ হতে পারে, ভবনগুলোকে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা উচিত। যদি বাড়িতে অবস্থান করে, যত দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং সম্ভব না হলে ঝামেলা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত টেবিলের নিচে লুকাতে হবে। লম্বা বা ভারী জিনিসের আশপাশে দাঁড়ানো বা বসা এড়িয়ে চলতে হবে। আপনি যদি বিছানায় থাকেন তবে এটি থেকে বের না হওয়াই শ্রেয় এবং আপনার পিঠ কুশন করার জন্য একটি বালিশ ব্যবহার করুন। আপনি যদি বাইরে থাকতে যাচ্ছেন বিল্ডিং, গাছ এবং পাওয়ার লাইন থেকে দূরে ড্রপডাউন. আপনি যদি একটি গাড়ি বা বাসে থাকেন, তবে ধীরে ধীরে নিরাপদ স্থানে যান এবং ভূমিকম্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভেতরে থাকুন।
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানানো খুবই জটিল। গবেষকরা কোনো নির্দিষ্ট ভূমিকম্পকে সরাসরি নির্ণয় করতে পারে না, কিন্তু মাইক্রোসিসমিসিটি গবেষণা, ফোকাল ম্যাকানিজম গবেষণার মাধ্যমে সম্ভাব্য পূর্বাভাস এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থান, হাইসিসমিসিটি, লোসিসমিসিটি নির্ণয় করতে পারে, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ জীবন ও সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি রোধে অত্যন্ত সহায়ক। বিশেষজ্ঞদের মতে ভূমিকম্প বিষয়ক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সরকারের একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা জরুরি প্রয়োজন। বাংলাদেশ প্লেট বাউন্ডারির অন্তর্ভুক্ত না হয়েও দুর্বল অবকাঠামো, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, প্রয়োজনীয় বিল্ডিং কোড মেনে না চলার কারণে এবং যত্রতত্র ভবন ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি অন্যতম ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। যেহেতু ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, একে থামিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সেহেতু ভূমিকম্প পূর্বপ্রস্তুতি ও ক্ষয়ক্ষতি রোধে ভূমিকম্প-পরবর্তী শক্তিশালী এবং কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এই দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব। তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্প থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এখনই সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।
ব্যাংকার ও মুক্ত লেখক