শেয়ার বিজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টায় ইসরায়েলি সেনারা চুক্তি অনুযায়ী গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সরে যায়। এরপর দলে দলে মানুষ নিজ বাড়িতে ফেরা শুরু করেন। খবর: টাইমস অব ইসরায়েল।
গাজার সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, উপকূলবর্তী সড়কে মানুষের ঢল নেমেছে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রঘেঁষা আল-রশিদ সড়কে অপেক্ষা করছেন। গতকাল রাত থেকেই তারা এখানে ছিলেন। এরপর ইসরায়েলি সেনারা যখন সরে গেছে, তখন তারা গাজার উত্তরাঞ্চলে নিজেদের বাড়ির দিকে যাওয়া শুরু করেন।
গাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) একটি নির্দেশনা জারি করেছে। গাজার মানুষকে সতর্কতা দিয়ে আইডিএফ বলেছে, তাদের সেনারা যেখানে আছেন, সেখানে যেন কোনো বেসামরিক মানুষ না যান।
গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সরে যাওয়ায় পরও উপত্যকাটির ৫৩ শতাংশ অংশ এখনো ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কথিত বাফার জোন। গাজা ও ইসরায়েল সীমান্তে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে বাফার জোন তৈরি করেছে ইসরায়েল। সেখানে যত বাড়িঘর ছিল। তার সবই ধসিয়ে দিয়েছে দখলদাররা।
এছাড়া ইসরায়েলি সেনারা আছে গাজা-মিসর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডরে, উত্তরাঞ্চলের বেইত হানুন, বেইত লাহিয়া এবং রাফা ও দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসের বেশিরভাগ অংশে।
এসব এলাকায় গেলে চরম বিপদে পড়ার শঙ্কা আছে বলে জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন আইডিএফের আরবি ভাষার মুখপাত্র কর্নেল আভিচায় আদরি।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি ‘পর্যবেক্ষণ’ করার জন্য কয়েকটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ টাস্কফোর্সের অংশ হিসেবে ইসরায়েলে ২০০ মার্কিন সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই ২০০ মার্কিন সেনা এরই মধ্যে ইসরায়েলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
মিসরের শারম আল-শেখ শহরে তিন দিনের আলোচনার পর গত বুধবার রাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয় ইসরায়েল ও হামাস। মার্কিন তত্ত্বাবধানে তুর্কি, মিসর ও কাতারের প্রতিনিধিরা এই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ভোরে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল ও হামাস তার যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময় পরিকল্পনার ‘প্রথম ধাপে’ সম্মত হয়েছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি অনুমোদন করে ইসরায়েলি সরকার। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর এক্স হ্যান্ডেলে বিষয়টি জানানো হয়। গত কয়েক সপ্তাহের ভারী বোমাবর্ষণে গাজা উত্তরাঞ্চল এমন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, যা কল্পনাতীত। এরপরও সেখানকার বাসিন্দারা নিজেদের পুরোনো ঠিকানায় ফিরতে শুরু করেছেন। ইসরায়েলি গণমাধ্যম চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় উল্লেখিত এবং হামাস ও ইসরাইলের সম্মত হওয়া এলাকাগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি দেবে উভয়পক্ষ। বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় আগামী সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে জীবিত থাকা ২০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। যুদ্ধবিরতি কার্যকর ঘোষণার সময় থেকেই এই ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদরি বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রধান সড়ক ধরে উত্তরের দিকে চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে। তবে গাজার কয়েকটি এলাকায় ইসরায়েলি সেনার সক্রিয় থাকবে। বাসিন্দাদের সেদিকে যেতে দেয়া হবে না। কারণ এই এলাকাগুলো ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’।
গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইসরায়েলি সৈন্য ও সশস্ত্র যানগুলো গাজা সিটি এবং খান ইউনিস থেকে সরে যাচ্ছে। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা এখন নিজ বাড়িতে ফেরার আশায় আছেন।
গাজায় অবস্থানরত সাংবাদিকরা হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে গাজা উপকূলের পাশের রাস্তা ধরে হাঁটতে দেখেছেন। খান ইউনিসে আমির আবু (৩২) নামে এক ব্যক্তি বলেন, শোক নিয়েই আমরা নিজ এলাকার দিকে যাচ্ছি। যদিও সবকিছু এখন ধ্বংসস্তূপ। তবুও আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করেছে।
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post