নজরুল ইসলাম: দায়িত্ব গ্রহণের পর ইভ্যালির বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির। তিনি বলেন, ‘এখনও তো দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। গেজেটও হয়নি। সরকারি অর্ডার হোক। তারপর করণীয় ঠিক করা হবে।’
মাহবুব কবির বলেন, ‘এখনও আমাদের বোর্ড মিটিং হয়নি। বৈঠক হোক। বোর্ডে কথা বলতে হবে। সময় লাগবে তো। টার্মস অব রেফারেন্স তৈরি হবে। তারপর কাজ হবে। ইনশাআল্লাহ একটা রাস্তা বের হবে এবং ভালো কিছু করা যাবে। সরকারি অর্ডার হোক। তিন-চার দিন সময় তো লাগবে গেজেট হতে। গেজেটটা হোক। অর্ডার তো প্রধানমন্ত্রীর কাছেও যাবে।’
গতকাল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্ধারণ করে দেয়া কমিটিতে থাকা অন্য সদস্যরা হলেনÑস্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ ও ওএসডিতে থাকা আলোচিত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির।
এর আগে পাঁচ সদস্যের কমিটিতে তাকে রাখার বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারকও বলেছেন, মাহবুব কবিরের সঙ্গে কথা হয়েছে। কাজের প্রতি তার আগ্রহ দেখে খুব ভালো লেগেছে।
রিটকারীর আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন জানিয়েছেন, সরকারি বেতনে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে থাকবেন অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির।
মাহবুব কবির সর্বশেষ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। রেল বিভাগের নানা অনিয়ম দূর করতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। গত বছর ৬ আগস্ট তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। মাহবুব কবির এর আগে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন; ছিলেন কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও। এ সময় তিনি খাদ্যে ভেজাল ও নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে আলোচিত হন।
গত ১৩ অক্টোবর আদালতে তিন সাবেক সচিবের নাম জমা দেয়ার পরে হাইকোর্ট বলেছিলেন, অতীত কর্মকাণ্ড দেখে ইভ্যালির বোর্ড সদস্য করা হবে। ইভ্যালির পরিচালনা পর্ষদ গঠনে যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের অতীতের কর্মকাণ্ডসহ সব বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে বোর্ডে পাঠানো হবে বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
প্রতারণার অভিযোগে ইভ্যালির সিইও ও চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হওয়ায় চার সদস্যের বোর্ড গঠন এবং নথি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠনে হাইকোর্টের আদেশের নির্ধারিত দিন ১৩ অক্টোবর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
আদালতে গতকাল আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এএম মাছুম ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী একেএম বদরুদ্দোজা।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ ইভ্যালি পরিচালনার জন্য কমিটি করে দেয়ার কথা বলেন। এ বিষয়ে বুধবার (১৩ অক্টোবর) হাইকোর্টের আদেশ দেয়ার কথা ছিল। পরে আদেশের দিন পেছানো হয়।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সব নথি তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। ১২ অক্টোবরের মধ্যে ইভ্যালির নথিপত্র দাখিল করতে রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসকে নির্দেশ দেয়া হয়। সে আদেশের ধারাবাহিকতায় গত ১১ অক্টোবর ইভ্যালির সব নথি হাইকোর্টে দাখিল করে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ।
তারও আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না, তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরপর একই ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নথিও তলব করে আদেশ দেন আদালত। নথি আসার পর গত ১২ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানিতে ইভ্যালি লিমিটেড পরিচালনার জন্য চার সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠনের পক্ষে মতামত দেন হাইকোর্ট। এরপর গতকাল শুনানির নির্ধারিত দিনে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়।