নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীসহ দেশজুড়ে দুই দফায় ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। গতকাল মঙ্গলবারের এ ভূমিকম্পে সুনামগঞ্জে একজন নিহত ও দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সে সঙ্গে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটে ফাটল দেখা দিয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় জনমনে আতঙ্ক-উদ্বেগ লক্ষণীয় ছিল।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা ৯ মিনিটে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ভূকম্পন প্রায় ১০ থেকে ১২ সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল। ওই সময়ে সাধারণ নগরবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ভূমিকম্পে আতঙ্কিত অনেকেই বাসা-কর্মস্থল ছেড়ে তাড়াহুড়ো করে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা গেছে।
ভারতে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৩৮ মিনিট নাগাদ কেঁপে ওঠে ত্রিপুরা রাজ্য। সেখানে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল ছিল ওই রাজ্যের ধলাই জেলার ২৮ কিলোমিটার গভীরে। এর এক মিনিটের ব্যবধানে বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ত্রিপুরা সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও ফেনীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী গ্রামে হিরণ মিয়া নামের একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একই ঘটনায় নাজিউর নামে পাটলী দারুল উলুম এমদাদিয়া মাদরাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রসহ দুজন আহত হয়েছে বলেও তথ্য মিলেছে। অন্যদিকে, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ওই উপজেলায় একটি তিনতলা রেস্টুরেন্ট, শতাধিক ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মাঠ ও ফসলি জমিতে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানা গেছে। এর মধ্যে ওই উপজেলার নবনির্মিত অডিটরিয়াম ভবন দেবে গেছে, ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটলও দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পরিমাপক কেন্দ্রের সুপারভাইজার জহিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল রাজধানীর আগারগাঁও ভূমিকম্প পরিমাপক কেন্দ্র থেকে ১৬৭ কিলোমিটার পূর্বে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা পাঁচ দশমিক পাঁচ। মাটির ৩০ কিলোমিটার গভীরে ওই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে।’
এর আগে, গত বছরের ২৪ আগস্ট বিকাল ৪টা ৩৪ মিনিটে ছয় দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশ। কয়েক সেকেন্ডের এ ভূমিকম্পে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও জনমনে আতঙ্ক ছড়ায়। কারণ বাংলাদেশের আশপাশে নিয়মিতই ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটছে।
বিশ্বব্যাংক, গ্লোবাল ফ্যাসিলিটি ফর ডিজাসটার রিডাকশন (জিএফডিআরআর) ও আর্থকোয়াকস অ্যান্ড মেগাসিটিস ইনিশিয়েটিভ (ইএমআই) যৌথভাবে প্রণীত ‘আর্থকোয়াক রিস্ক ইন ঢাকা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশও ভূমিকম্প ঝুঁকির বাইরে নয়। আর ঢাকা বা আশপাশের কোনো জেলায় ভূমিকম্প সংঘটিত হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে রাজধানী।
২০১৫ সালে প্রত্যক্ষ সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধুপুরে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূকম্পন হলে ঢাকার প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর বেশিরভাগই উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। এতে ৫০ হাজার মানুষ নিহত ও দুই লাখ মানুষ আহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫৭০ কোটি ডলার বা ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
ওই প্রতিবেদনের তথ্যমতে, রাজধানীতে ভবন তিন লাখ ২৭ হাজার ৫০৩টি রয়েছে, যার ৮১ শতাংশই আবাসিক। আর ৬ শতাংশ রয়েছে বাণিজ্যিক ভবন। এ দুই ধরনের ভবনই ভূমিকম্পে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা রাজধানীর মোট ভবনের প্রায় ৫৫ শতাংশ। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, বর্তমানে ঢাকার ভবনগুলোর আর্থিক মূল্য দুই হাজার ৮২৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে ভূমিকম্পে ক্ষতির পরিমাণ ৫৭০ কোটি ডলার বা ২১ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনে ক্ষতি হবে ৩৪৩ কোটি ও দক্ষিণে ২২৭ কোটি ডলারে দাঁড়াবে।