প্রতিনিধি, গাজীপুর : কারাগারে পাঠানোর সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর মাহিয়া মাহিকে জামিন দিয়েছেন আদালত। গতকাল শনিবার বিকালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫-এর বিচারক ইকবাল হোসেন জামিনের আদেশ দেন। এর আগে পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে।
প্রেগন্যান্সি ও সেলিব্রেটি বিবেচনায় আদালত এ আদেশ দেন বলে জানান মাহির আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার শাহাদাত সরকার। তিনি বলেন, তার মক্কেল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই মামলা হওয়ার পরও দেশে চলে এসেছেন।
মাহিকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেছেন, আগের দিন ফেসবুক লাইভে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ করেছিলেন এ চিত্রনায়িকা।
এক দিন আগে মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে গাজীপুরের বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ। পাশাপাশি জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আরেকটি মামলা করেন মাহির স্বামী রকিবের প্রতিপক্ষরা।
গাজীপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রকিব ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য। রকিবকে বিয়ে করার পর রাজনীতিতে আসা মাহি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমও কিনেছিলেন তিনি।
গত শুক্রবার ভোরে গাজীপুরে রকিবের গাড়ির বিক্রয় কেন্দ্র সনিরাজ কার প্যালেসে ভাঙচুর হয়েছিল। ওই জমি নিয়ে রাকিবের সঙ্গে স্থানীয় আরেক পক্ষের বিরোধ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে থাকা মাহি ও রকিব ওই ঘটনার পর ফেসবুকে লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগও আনেন তারা। তারপর পুলিশের মামলা হয়। আর গতকাল সকালে মাহি একাই সৌদি আরব থেকে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাহি গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মোল্যা নজরুল বলেন, ‘‘জমিসংক্রান্ত ঘটনায় পুলিশ বিভাগ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ব্যাপারে ফেসবুক লাইভে ‘মিথ্যা মন্তব্য’ করেন মাহিয়া মাহি। তিনি প্রতিপক্ষের ব্যাপারেও মন্তব্য করেছেন। এভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করার অধিকার রাখেন না। তার বিরুদ্ধে পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে। তার প্রতিপক্ষের লোকজন জমিসংক্রান্ত ঘটনায় অইনশৃঙ্খলা অবনতি-সংক্রান্ত মামলা করেছেন।’’
মাহি ও রকিবের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন বাসন থানার এসআই মোহাম্মদ রোকন মিয়া। আর ইসমাইল হোসেন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি মাহি ও রকিবসহ ২৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় মারধর, ভাঙচুর, চাঁদাদাবি ও জমি দখলের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
মোল্যা নজরুল জানান, সেই মামলার আসামি সাজ্জাদ হোসেন সোহাগ (৩৮), আশিকুর রহমান (৩২), ফাহিম হোসেন হƒদয় (২২), জুয়েল রহমান (২৫), জমশের আলী (৪৪), মোস্তাক আহমেদ (২২), খালিদ সাইফুল্লাহ জুলহাস (৩০), সুজন মন্ডল (৩৪) ও মাহবুব হাসান সাব্বিরকে (১৮) গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘মাহিয়া মাহির স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র, হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে পুরোনো তিনটি মামলা রয়েছে। ওই মামলাগুলোতে কেউ সাক্ষী দেননি, কিন্তু ঘটনা সত্য ছিল। তবে এখন মামলাগুলো পুনরায় তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনের পর পুলিশ মাহিকে গাজীপুর মহানগর হাকিম আদালতে পাঠান। মহিলা পুলিশের পাহারার মধ্যে কালো রঙের বোরকা পরিহিত মাহিকে তোলা হয় মহানগর হাকিম মো. ইকবাল হোসেনের আদালতে।
আদালত পুলিশের কর্মকর্তা উপকমিশনার আহসানুল হক জানান, মাহিয়া মাহিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। রিমান্ডের কোনো আবেদন ছিল না, তার পক্ষে কেউ জামিনও চাননি।