শেয়ার বিজ ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংশিত প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইয়ের সঙ্গে দুর্নীতিতে জড়িত সন্দেহে স্যামসাং গ্রুপের প্রধান লি জি ইয়ংকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বিশেষ কৌঁসুলিরা। এর আগে অভিশংসন প্রক্রিয়াকে ঘিরে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত স্যামসাংয়ের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। খবর বিবিসি।
বৃহস্পতিবার রাজধানী সিউলের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা দেন লি। এ সময় তিনি জাতির উদ্দেশে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার ফলে ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে আমি জনগণের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।’
স্যামসাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি থেকে বড় অঙ্কের ঘুষ দেওয়া হয় অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানকে, যা পরিচালনা করেন প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইয়ের ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন চোই সুন সিল। চোই’র ওপর বলপ্রয়োগ ও প্রতারণা চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চোই সুন সিল সরকারের বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণে মধ্যস্থতা করছেন এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
২০১৫ সালে ইলেকট্রনিক জায়ান্টটির অধীনস্থ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান শেইল ইন্ডাস্ট্রিজ একীভূত হয়। এটি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বহুসংখ্যক শেয়ারধারীর ভিন্নমত থাকলেও এই একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
তাদের দাবি ছিল, এই চুক্তির মাধ্যমে সংখ্যালঘু শেয়ারধারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে লাভবান হবে স্যামসাং গ্রুপের মালিক লি কুন হি’র পরিবার। দুই প্রতিষ্ঠানেই শেয়ার থাকা জাতীয় পেনশন তহবিল পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল পেনশন সার্ভিস (এনপিএস) এই চুক্তির পক্ষে ভোট দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, এই চুক্তিতে প্রেসিডেন্টের সমর্থন পাওয়ার জন্য চোই সুন সিল ও তার মেয়েকে ৩১ লাখ ডলার ঘুষ দেয় স্যামসাং। এ বিষয়ে গত মাসে এক শুনানিতে স্বীকারও করে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, চোই সুন সিলের মেয়ের কর্মজীবনে উন্নতির জন্য এ অর্থ দেওয়া হয়।
দুর্নীতির অভিযোগে গত মাসে দেশটির পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন হাই’র বিরুদ্ধে অভিশংসন করার পক্ষে ভোট দেন অধিকাংশ আইন প্রণেতা। পার্লামেন্টের এ সিদ্ধান্ত বহাল বা খারিজ করার ক্ষমতা রয়েছে সাংবিধানিক আদালতের। স্যামসাংয়ের ভাইস চেয়ারম্যান চৌই গি সাং ও চাং চুং কি’কে সন্দেহভাজন দোষী হিসেবে নয়, গত সোমবার আদালতের বিশেষ কৌঁসুলি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তার পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। পার্ক জিউন হাই ও চোই সুন সিল জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেও তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
লি এর আগে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু ২০১৪ সালে তার বাবা গ্রুপের প্রধান লি কুন হি’র হ্যর্ট অ্যাটাকের পর তিনিই স্যামসাং গ্রুপের প্রধান হিসেবে কার্যত দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগেও স্যামসাং গ্রুপের প্রধানকে পার্লামেন্ট সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। শুধু স্যামসাংই নয়, হুন্দাই মোটর, লোটেসহ দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় নয়টি কোম্পানির (কনগ্লোমারেটের) প্রধানদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দেশটির এমপিরা।