সুস্থ-সবল প্রজন্ম গঠনে প্রাণিজ আমিষের কোনো বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত হওয়ায় ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসেরও পরিবর্তন হয়েছে। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে দেশে মোট মাংসের চাহিদার ৪০-৪৫ শতাংশ আসে পোলট্রি থেকে। বর্তমানে মুরগির মাংসের অর্ধেকের বেশি আসে বাণিজ্যিক ব্রয়লার থেকে, যার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। কিন্তু বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব পোলট্রি শিল্পের ওপর দৃশ্যমান। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় দেশি আবহাওয়া-উপযোগী অধিক মাংস উৎপাদনকারী মুরগির জাত উদ্ভাবন করা জরুরি। দেশে মুরগির মাংস ও ডিমের স্বাভাবিক স্বাদ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) নতুন জাত উদ্ভাবন করে। গবেষণাদলের একজন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহ জামাল চাকরিশেষে নিজেই মুরগির খামার ব্যবসায় নামেন। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চোড়িয়া উজির গ্রামে গড়ে তোলেন রাশেদ পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি। সোনালি মুরগি উৎপাদন ও বাজারজাত করে সফল খামারি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন শাহ জামাল।
আমাদের প্রতিনিধিকে শাহ জামাল জানিয়েছেন, সোনালি মুরগি দেশের আবহাওয়ায় অত্যন্ত উপযোগী। রোগবালাই কম হয় বলে এ জাতের মুরগি পালনে ওষুধের ব্যবহার অনেক কম। ফলে মাংস অনেক বেশি সুস্বাদু ও নিরাপদ। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আরআইআর লাল রং মোরগ (দাদা) ও মিসর থেকে আনা কালো ও সাদা ফোঁটা ফোঁটা রং ফাউমি (দাদি) দিয়ে এই হ্যাচারিতে জš§ হচ্ছে সোনালি মুরগির।
প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস হওয়ায় মুরগির মাংসের প্রতি ঝুঁকছেন সাধারণ মানুষ। পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়া দেশীয় প্রজাতির মুরগি উৎপাদনে উৎসাহ বাড়াতে হবে। খামার ব্যবস্থাপনায় খামারিদের প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা দিতে হবে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে ঘরের ভেতর আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও দূষিত বাতাসের পরিমাণ বেড়ে গেলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দিতে পারে।
অন্যদিকে খাদ্য ব্যবস্থাপনাও গুরুত্বপূর্ণ সাধারণত মুরগি পালনে মোট ব্যয়ের ৬০-৭০ শতাংশই খরচ হয় খাদ্য বাবদ। পোলট্রি ফিডের দাম যেন খামারিদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। মুরগির খাদ্যের দাম বেশি হলে খামারি উৎপাদিত মুরগি ও ডিমের দামও বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হবেন।
সোনালি মুরগি অধিক রোগ প্রতিরোধক্ষম এবং দেশীয় আবহাওয়া-উপযোগী হওয়ায় সঠিক জীব-নিরাপত্তা এবং প্রতিপালন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে রোগবালাই হয় না বললেই চলে। তবুও খামারিদের রোগবালাই থেকে নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন টিকা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
কয়টি মুরগি পালন করলে কী পরিমাণ লাভ হবে, এটি জানানোর পাশাপাশি কী পদ্ধতিতে পালন করলে মুরগি নীরোগ ও সবল হবে, সে বিষয়েও খামারিদের সাহায়তা করা দরকার। মনে রাখতে হবে, বৈশ্বিক তাপমাত্রার ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার প্রথম দিকে। প্রতিনিয়ত পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাব কমবেশি সব খাতের ওপরই দৃশ্যমান। অন্য প্রাণিকুলের তুলনায় পোলট্রি প্রজাতি পরিবেশের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর প্রত্যাশিত উৎপাদনে যাতে নেতিবাচবক প্রভাব না পড়ে, সেজন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।