জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : দেশের অর্থনীতি নিয়ে সরকার আত্মবিশ্বাসী। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বস্তিতে আছি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তবে অর্থনীতির অন্যান্য দিক নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে তিনি বলেন, বাকি বিষয়গুলো নিয়ে এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
দেশের মূল্যস্ফীতি আগের তুলনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্র্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতির চাপ অনেকটা কমেছে তবে নন-ফুড খাত এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। তার মতে, আমাদের বেসটাই খারাপ ছিল। মূল্যস্ফীতির হার ১১ থেকে ১৪ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৮ শতাংশে এনেছি। যদি ৪-এ নামানো যেত, তাহলে মহানন্দ হতো। কিন্তু আমাদের জন্য এটি সহজ ছিল না।
তিনি আরও বলেন, খাদ্য ও নন-ফুড দুই ক্ষেত্রেই আমরা কাজ করছি। তবে নন-ফুড খাতে চাপ বেশি কারণ বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন সবকিছুই এর সঙ্গে জড়িত।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, শুল্ক কার্যকর হয়েছে, তবে এর প্রভাব বড় কিছু নয়। আমরা ইতোমধ্যে প্রায় চার বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সেটা পরে একসময় দেখব। যাওয়ার আগে বলে যাব তবে এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ৪২০ কোটি টাকায় বডি ক্যামেরা কেনা বিষয়ে সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য না করে সংক্ষিপ্তভাবে বলেন, আপনারা সেটা পরে বুঝতে পারবেন।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমি তাত্ত্বিক আলোচনায় যেতে চাই না। দারিদ্র্য আছে, চ্যালেঞ্জও আছে তা আমি স্বীকার করছি। কিন্তু ৫ হাজার মানুষের টেলিফোন ইন্টারভিউ নিয়ে বলা হচ্ছে দারিদ্র্য বেড়েছে এটা কতটা নির্ভরযোগ্য? তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, আমাকে কেউ বলেছিলেন স্যার, আপনি একটা পেপার লিখে দিন, কালকের মধ্যেই তারা ২০ হাজার রিপ্লাই এনে দেবে। তাহলে বোঝেন, নির্ভরযোগ্যতা কতটা? এ প্রসঙ্গে তিনি প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন-এর উদ্ধৃতি টেনে বলেন, দারিদ্র্য মাপার জন্য জটিল সমীকরণ দরকার নেই; দরিদ্র মানুষ তার চেহারা ও আচরণ দেখলেই বোঝা যায়।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির সর্বশেষ জরিপে বলা হয়েছে, দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যেখানে ২০২২ সালে সরকারি হিসাবে ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের চীন থেকে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২০টি যুদ্ধজাহাজ কেনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা হাস্যোজ্জ্বলভাবে বলেন, সবকিছু জানলেই কি বলে দিতে হয়?
তিনি আরও বলেন, এটা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তারা মূল্যায়ন করে যা করছে, আমরা তাতে সরাসরি যুক্ত নই।
আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর প্রসঙ্গে তিনি জানান, আইএমএফ, এডিবি, এআইআইবি ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের বেশ কিছু চলমান প্রকল্প রয়েছে। এবার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুটি চুক্তি সই হবে। এগুলো মূলত ফলোআপ মিটিং, কোনো নতুন দর কষাকষি নয়।
তিনি আরও বলেন, নতুন সরকার আসার পর বড় ধরনের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা আপাতত বিদ্যমান পরিকল্পনাগুলো এগিয়ে নিচ্ছি।
অর্থ উপদেষ্টা স্পষ্ট করেন সরকার এখন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখাকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে দেখছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছু অগ্রগতি এলেও নন-ফুড খাতের চাপ ও দারিদ্র্য পরিস্থিতি নিয়ে তিনি সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
বৈদেশিক বাণিজ্যে সীমিত প্রভাব ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও ওঠে এসেছে তার বক্তব্যে।
তিনি উল্লেখ করেন, আগামী ওয়াশিংটন বৈঠকে বাংলাদেশের আলোচনার কেন্দ বিন্দু হবে বিনিয়োগ স্থিতিশীলতা, অর্থায়নের ধারাবাহিকতা ও সামাজিক সুরক্ষার বাস্তবায়ন।
প্রিন্ট করুন







Discussion about this post