প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

দেড় বছর উৎপাদন বন্ধ জুট স্পিনার্সের

নাজমুল ইসলাম ফারুক: প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জুট স্পিনার্সের উৎপাদন। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারায় বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানির কার্যক্রম। এরপরও জুট স্পিনার্সের শেয়ারদর বেড়েই চলেছে। উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও শেয়ারদর বাড়ায় বিষয়টি কোম্পানি কর্তৃপক্ষকেও ভাবাচ্ছে। এর পেছনে কোনো চক্র না থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। এ সম্ভাবনাটি বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানিকে বারবার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের পরিবর্তে ‘দর বাড়ানোর পেছনে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া উচিত’ বলে মনে করছে জুট স্পিনার্স কর্তৃপক্ষ।

দর বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কোম্পানি সচিব এটিএম মোস্তফা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘গত প্রায় দেড় বছর ধরে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ। বর্তমানে অফিসে তেমন কেউ আসে না। অফিসের কার্যক্রমও অচল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জকে আমরা তা জানিয়েছি। তবুও আমাদের কাছে দর বাড়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। এতে আমরা অবাক হয়েছি। একটি কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ অথচ সেই কোম্পানির দর হু হু করে বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘উৎপাদন বন্ধ এটা নোটিশ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং সবাই জানেন যে, কোম্পানির কোনো উৎপাদন ও আয় নেই। তারপরও দর বাড়ছে, এতে ধারণা করা যায়, কোনো চক্র শেয়ারের দর বাড়াচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কোম্পানিকে বারবার নোটিশ না দিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তদন্ত করে চক্রটিকে খুঁজে বের করা উচিত’ বলে মনে করেন তিনি।

জুট স্পিনার্স সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটি দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল পরিশোধ করেনি। অন্যদিকে কোম্পানির মালিকানা নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও রয়েছে। এক সময় বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ফলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানিটির। পরে কোন্দল বৃহৎ আকার ধারণ করলে কর্মচারীদেরও বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ে যায়। এতে কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে। বর্তমানে কোম্পানির কার্যালয়ে তেমন কেউ আসে না।

জানা যায়, কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই অন্যান্য স্থানে চাকরি নিয়েছেন। কেউ কেউ চাকরি না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তবে মাঝে মধ্যে কেউ কেউ খোঁজ নিতে আসেন কোম্পানি চালু হবে কি-না।

সর্বশেষ দুই মাস আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে নোটিস দেওয়া হয়। তখন দর বাড়ার কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য কোম্পানির কাছে নেই বলে জানানো হয়।

এদিকে, কোম্পানিটির শেয়ারদর গতকাল রোববার ৭১ টাকা ৫০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে ছয় টাকা ৫০ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে। এদিন আগের দিনের চেয়ে দর বেড়ে সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে। গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৭১ টাকা ৫০ পয়সা।  চলতি মাসের বেশিরভাগ সময়ই কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। মাসের শুরুতে কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৬০ টাকা। গতকাল পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ১১ টাকা ৫০ পয়সা বা প্রায় ১৯ শতাংশ। গত এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৪৮ টাকা। গতকাল পর্যন্ত প্রায় তিন মাসে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ২৩ টাকা ৫০ পয়সা বা প্রায় ৪৯ শতাংশ।

এদিকে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ২৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তা ছাড়া লভ্যাংশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোম্পানিটি ২০১২ সালে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। পরের বছর থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানিটি।

পুঁজিবাজারে ১৯৮৪ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ১৭ লাখ। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৩৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৩ দশমিক ২০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।