বাজারে বিদেশি কোম্পানির যেসব ল্যাপটপ পাওয়া যায়, সেগুলোর দাম কম নয়। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের নাগালে ছিল দেশি কোম্পানির ল্যাপটপ ‘দোয়েল’। টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) ২০১১ সালের অক্টোবরে দোয়েল ল্যাপটপ উৎপাদনে যায়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন এ কার্যক্রমের। সাধারণ মানুষ যাতে সহজে ল্যাপটপ কিনতে পারে, সেজন্য এর দাম ধরা হয়েছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে চার ধরনের ল্যাপটপ তৈরি করা হয়েছিল। দাম ছিল সর্বনিম্ন ১০ হাজার ও সর্বোচ্চ ২৬ হাজার টাকা। দোয়েল ল্যাপটপ কেনার জন্য আগ্রহও দেখা গিয়েছিল তখন। শুরুর দিককার চাহিদা মেটাতে টেশিসকে সে সময় হিমশিম খেতে হয়েছিল। সে অবস্থা আর নেই। বাজারে নেই দোয়েল ল্যাপটপ। সম্প্র্রতি ঢাকায় ল্যাপটপ মেলার উদ্বোধনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দোয়েল ল্যাপটপ বাজারে না থাকায় আক্ষেপ করেছেন। গত সরকারের আমলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ল্যাপটপটি বাজারে আসার সময় এ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বর্তমান তথ্যমন্ত্রী। তার আক্ষেপ হওয়ারই কথা।
আমরা মনে করি, তথ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ যথাযথ এবং দোয়েল ল্যাপটপ বাজারে না থাকার কারণ দ্রুত বের করা দরকার। তথ্যপ্রযুক্তির বাজারে বাংলাদেশ এখন সম্ভাবনাময় দেশ। বিদেশি কোম্পানিগুলো এদেশে প্রচুর ব্যবসা করছে। প্রতিবছর তাদের ল্যাপটপ বিক্রির বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। অথচ এর একাংশ দেশেই থাকতো, যদি দোয়েল ল্যাপটপ বাজারে চালু রাখা যেত। এর চেয়েও বড় কথা, বিদেশি কোম্পানির বিভিন্ন মডেলের ল্যাপটপের দাম এত বেশি যে তা নিম্ন-মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। এখন প্রযুক্তির যুগ। বিশেষত শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপ দিন দিন অপরিহার্য হয়ে উঠছে। আমরা যদি কমমূল্যের দোয়েল ল্যাপটপ শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারি, এর ফল পেতে খুব বেশি দেরি হবে না। ভারতসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ১০০ ডলার মূল্যের ল্যাপটপ বা এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ ও বড় স্ক্রিনের ট্যাব প্রদান করছে। ফলে তারা ছোটকাল থেকেই প্রোগ্রামিং করছে, নিজেদের জন্য প্রজেক্ট তৈরি কিংবা মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের সাহায্যে পড়াশোনা করছে। দোয়েল ল্যাপটপের মাধ্যমে এ সুবিধাটি নিশ্চিত করা আমাদের জন্য সহজ ছিল। কিন্তু কেন প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়লো, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
দোয়েল ল্যাপটপের ত্রুটি যে ছিল না, তা অবশ্য নয়। বলা হয়েছিল, প্রথম পর্যায়ের উৎপাদনের ত্রুটিগুলো দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ে থাকবে না। টেশিস এর আগে টেলিফোন সেট উৎপাদন করে বাহবা কুড়িয়েছিল। আমরা আশা করবো, দোয়েল ল্যাপটপ প্রজেক্টটি আবার ফিরিয়ে এনে টেকসই ও উন্নত প্রযুক্তির ল্যাপটপ তৈরি করা হবে এবং কম মুনাফায় তা জনগণের কাছে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হবে।