পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা বলছেন, আগামী মাস থেকে রপ্তানি আয় কমবে। শনিবার পোশাকশিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছেন, সরকারের নীতিগত সহায়তা পেলে পণ্য বহুমুখীকরণেও বিশেষ করে নন-কটন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সফল হবেন তারা।
বর্তমানে বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যের ৫২ শতাংশ পণ্য নন-কটনের, সেখানে আমাদের রপ্তানির মাত্র ২৬ শতাংশ নন-কটন। বিশ্বে ভোক্তাদের ক্রমাগত জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নন-কটন পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং এ খাতে আমাদের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
আমাদের পোশাক খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ, কিন্তু সুযোগও কম নয়। বৈশ্বিক মহামারি কভিড, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ নেতৃত্ব দেয়া এ খাত প্রমাণ করেছে, যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টিকে থাকতে সক্ষম। রপ্তানি-পূর্ববর্তী বছরকে অতিক্রম করে চলেছে। পরিবেশবান্ধব গ্রিন কারখানায়ও এগিয়েছে বেশ। দেশের পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা প্রায়ই বলছেন, সরকারের নীতিসহায়তা পেলে তারা এগিয়ে যাবেন। আমরা মনে করি, এ কথা বারবার বলার প্রয়োজন নেই। কেননা সরকার এ খাতে যত সহায়তা, প্রণোদনা ছাড় পাচ্ছে; অন্য কোনো খাত তা পাচ্ছে না। তাহলে রপ্তানি বহুমুখীকরণ কীভাবে সম্ভব! কোনো একক খাতের ওপর নির্ভরতা দূরদর্শিতার পরিচায়ক নয়।
পোশাক রপ্তানি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে, যা আশাব্যঞ্জক। ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ছিল ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পোশাকশিল্পের ৪০ বছরের যাত্রাপথে ৪০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ছাড়িয়ে যাওয়া শিল্পের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক। আমাদের প্রধান দুটি রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই দুই বাজার ছাড়াও অপ্রচলিত বাজারগুলোয় রপ্তানি শেয়ার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এ ধারা ধরে রাখতে হবে।
আমাদের নতুন নতুন বাজার সন্ধান করতে হবে। পণ্য বহুমুখী করতে হবে। পোশাক ও রেমিট্যান্সের মতো বড় খাতগুলোয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব বেশিসংখ্যক দেশে বেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শুধু সম্ভাবনা নয়, বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে। যেমন স্থলবন্দরের সক্ষমতার অভাব ভারতে পোশাক রপ্তানিতে বড় বাধা। স্থলবন্দরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, নন-ট্যারিফ বাধাসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় রপ্তানিকারকদের। কোনো কারণে পণ্য ফেরত এলে রপ্তানিকারকদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এমন সমস্যার সমাধান জরুরি। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো, কর্মপরিবেশ ও মানসংক্রান্ত বিষয় প্রতিপালন করা, রপ্তানিকারকদের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা এবং বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোকে অধিকতর বাণিজ্যবান্ধব করে তোলা গেলে রপ্তানি বাড়ানো কঠিন নয়। এক-দুই মাসে রপ্তানির উল্লম্ফনে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে ধারাবাহিকতা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।