প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

নভেম্বরে চীনের আমদানি রফতানি বেড়েছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক : চলতি বছরের নভেম্বরে চীনের রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। ওই সময়ে দেশটির আমদানিও বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এদিকে নভেম্বরে চীনের ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) আগের বছরের তুলনায় দুই দশমিক তিন শতাংশ বেড়েছে। খবর সিনহুয়া।

চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমের (জিএসি) তথ্যমতে, গত মাসে দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য ২ দশমিক ৩৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ৩৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ওই সময়ে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কমে ২৯৮ বিলিয়ন ইউয়ান হয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে ২১ দশমিক আট ট্রিলিয়ন ইউয়ান হয়েছে। ওই সময়ে বাণিজ্য উদ্বৃত্তও ৫ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ৩ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান হয়েছে।

প্রথম ১১ মাসে চীনের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অঞ্চল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য বেড়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ।

ওই মাসে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। তৃতীয় বৃহত্তম অঞ্চল আসিয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য বেড়েছে দশমিক ৮ শতাংশ।

প্রথম ১১ মাসে যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিক পণ্য বিশেষ করে পোশাক ও পুতুল রফতানি আগের বছরের তুলনায় কমেছে। বেসরকারি খাত দেশটির রফতানিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

এদিকে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর সময়ে আকরিক লোহা ও অপরিশোধিত জ্বালানিসহ পণ্যসামগ্রী আমদানির হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে।

প্রতিবেদনমতে, আগামী মাসেও চীনের রফতানি-আমদানির এ চিত্র প্রবৃদ্ধির ধারায় থাকবে। চলতি মাসেও এটি ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চীনের ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস ব্যুরোর (এনবিএস) প্রতিবেদনমতে, মূল্যস্ফীতির পরিমাপের প্রধান মানদণ্ড ভোক্তা মূল্যসূচক কমে (সিপিআই) নভেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে দশমিক ১ শতাংশ।

এনবিএসের পরিসংখ্যানবিদ সেং গুয়োকিং বলেন, গত মাসে সিপিআই বৃদ্ধিতে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বড় ভূমিকা রেখেছে।

আগের মাসের তুলনায় নভেম্বরে চীনে সবজির দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা সিপিআই বৃদ্ধিতে দশমিক ১৪ শতাংশ অবদান রেখেছে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে সবজি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় দাম বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে সবজির দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক আট শতাংশ, অক্টোবরে যা বেড়েছিল ১৩ শতাংশ।

ঠাণ্ডা আবহাওয়ার জন্য গত মাসে পেট্রল, ডিজেল, গ্যাস, কয়লা, পানি ও বিদ্যুতের দামও বেড়েছে।

তবে ফল ও শূকরের দাম গত দুই মাসে কমেছে দেশটিতে। আগের মাসের চেয়ে নভেম্বরে ফলের দাম কমেছে ২ দশমিক ২ শতাংশ এবং শূকরের দাম কমেছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া পর্যটন খাতেও সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম কমেছে গত মাসে।

আরেক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নভেম্বরে চীনে ম্যানুফ্যাকচারিং প্রবৃদ্ধি দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে বেড়েছে। সস্তা ঋণ ও চাহিদা বৃদ্ধি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির শিল্প খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে ভূমিকা রাখছে।

চীনের প্রবৃদ্ধি দীর্ঘ সময় ধরে শ্লথগতিতে রয়েছে। গত মাসের পারচেজিং ম্যানেজার ইনডেক্সে (পিএমআই) প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পয়েন্ট দেশটির প্রবৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক বার্তা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের (এনবিএস) তথ্যমতে, কারখানা ও খনির বর্তমান পরিস্থিতি নির্ণায়ক পিএমআই নভেম্বরে বেড়ে ৫১ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছে।

২০১৪ সালের জুলাইয়ের পর সূচকের এ পয়েন্টই সর্বোচ্চ। ব্লমবার্গ নিউজের জরিপের পূর্বাভাস ৫১ পয়েন্টের চেয়েও এ সূচক বেশি। অক্টোবরে পিএমআই ছিল ৫১ দশমিক ২ পয়েন্টে।

নভেম্বরে চীনে রফতানি আমদানি প্রত্যাশিত হলেও এটি স্থায়ী হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক বাজারে নিম্ন চাহিদার কারণে দেশটির বাণিজ্যের এ প্রবৃদ্ধি স্থায়ী হওয়াটা অনেক কঠিন বলে মনে করছেন তারা।

বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম শক্তি চীন। কিন্তু গত বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যা প্রায় ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। চলতি বছরেও দেশটির প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি বজায় থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এর আগে অক্টোবরে টানা চতুর্থ মাসের মতো চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে পতন ঘটেছিল। ওই সময় দেশটির রিজার্ভ কমেছে ৪৫ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার। ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির রিজার্ভ ২০১১ সালের পর সর্বনিম্ন পৌঁছায়।

সাম্প্রতিক সময়ে চীনা অর্থনীতিতে শ্লথগতি দেখা  দেওয়ার পর থেকে দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ কমেই চলেছে।

গত বছরের মে মাস নাগাদ রিজার্ভ হ্রাসের পরিমাণ ছিল ৫১৩ বিলিয়ন ডলার। চীনের ইতিহাসে রিজার্ভে সবচেয়ে বড় বার্ষিক পতন ছিল সেটা।