শেয়ার বিজ ডেস্ক: দুর্বৃত্তদের গুলিতে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন মারা গেছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বাসায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। খবর বিডিনিউজ ও বাসস
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিমল চন্দ্র রায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সংসদ সদস্য মনজুরুলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাড়ে ৭টার দিকে তিনি মারা যান।
ঘটনার বিষয়ে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, সংসদ সদস্যের স্ত্রী ফোন করে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি পুলিশকে জানান।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের শাহাবাজ এলাকায় নিজের বাড়িতে তার ওপর হামলা হয় বলে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিউর রহমান জানান।
লিটনের বুকের বাঁ দিকে দুটি এবং বাঁ হাতে একটি গুলি লেগেছিল বলে এ চিকিৎসক জানান।
সংসদ সদস্যের স্ত্রী খোরশেদ জাহান বলেন, ‘মাগরিবের নামাজের পর পর মোটরসাইকেলে অজ্ঞাতপরিচয় তিন যুবক বাড়িতে ঢুকে গুলি করে পালিয়ে যায়।’ বামনডাঙ্গার স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার দিকে নিজ বাসার অভ্যর্থনা কক্ষে বসে ছিলেন এমপি লিটন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে পাঁচজন যুবক এসে তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তার স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি ওপরের তলায় ছিলেন। গুলির শব্দ শুনে তিনি নিচে নেমে এলে তাকেও গুলি করে দুর্বৃত্তরা।
ঘটনার পর গাইবান্ধা সার্কেল-১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে পাঁচজন লোক এসে এমপির বাসার খোঁজ নেয় স্থানীয় মানুষের কাছে। পরে তারা এমপির বাসায় ঢুকে তাকে (এমপি লিটন) গুলি করে পালিয়ে যায়। দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
সংসদ সদস্যের কর্মচারী জুয়েল বলেন, ‘সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে পাঁচ যুবক স্যারের কাছে আসেন। এদের মধ্যে তিনজন ঘরে ঢুকে স্যারের সঙ্গে কথা বলতে না বলতেই এলোপাতাড়ি গুলি করে চলে যায়।’
ঘটনার পর লিটন সমর্থকরা বামনডাঙ্গা-নলডাঙ্গা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছে।
শিশু সৌরভকে গুলি করে গত বছর দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছিলেন লিটন। ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোপালচরণ গ্রামের শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করেন তিনি।
সৌরভের বাবা সাজু মিয়ার করা মামলায় ওই বছরের ১৪ অক্টোবর রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে লিটনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান।
এমপি লিটন হত্যাকারীদের গ্রেফতারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মনজরুল ইসলাম লিটন হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্বৃত্তদের গুলিতে এমপি লিটনের নিহতের ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে দেওয়া এক শোক বাণীতে এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
অল্প সময়ের মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করব: আইজিপি
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেছেন, গাইবান্ধার সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের অল্প সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে। শহীদুল হক বলেন, সংসদ সদস্য বাসায় ফেরার পর টহল পুলিশকে বিদায় করে দেন। এরপর এ খুনের ঘটনাটি ঘটেছে।
একনজরে সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের জš§ ১৯৬৮ সালে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আততায়ীর গুলিতে সদ্য নিহত সংসদ সদস্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। তার পেশা কৃষি ও ব্যবসা। তিনি আনন্দ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানেরও পরিচালক। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ায়। জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য নেওয়া হয়েছে।