শেয়ার বিজ ডেস্ক : নির্বিঘ্ন বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে কাতার সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন করেছে। আয়োজক দেশটি খেলোয়াড় ও দর্শকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েকটি দেশের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করেছে। খেলা চলাকালে অর্থাৎ গত ২০ নভেম্বর থেকে আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি ফুটবল ভক্তের কাতারে ভ্রমণের আশা করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। খবর: আল জাজিরা।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ১৩টি দেশের অংশীদারদের সঙ্গে পাঁচ দিনের সুরক্ষা মহড়া পরিচালনা করেছে। কাতারের সব এলাকায় এ মহড়া পরিচালনা করা হয়।
স্থানীয় গণমাধ্যম দ্য পেনিনসুলা কাতারের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, জরুরি সেবা দিতে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রস্তুতি ও তাৎক্ষণিক উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
টুর্নামেন্টের নিরাপত্তা কমিটির তথ্য অনুসারে, ‘ওয়াতান’ নামের এ মহড়ায় ৩২ হাজার সরকারি নিরাপত্তা কর্মী ও বেসরকারি নিরাপত্তা খাতের ১৭ হাজার যুক্ত ছিলেন। আরবি ওয়াতান শব্দটি দিয়ে জাতিকে বোঝানো হয়েছে।
কাতারের ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্ক আগে ঘোষণা করেছিল, কাতারের স্টেডিয়াম ও হোটেলগুলোকে সুরক্ষা দিতে তিন হাজারের বেশি রায়ট (দাঙ্গা) পুলিশ কর্মকর্তাকে পাঠানো হবে। তুরস্ক আরও বিশেষ ১০০ অপারেশন পুলিশ কর্মকর্তা, ৫০ বোমা বিশেষজ্ঞ ও ৮০টি স্নাইফার কুকুর পাঠাবে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেয়মান সোয়লু জানুয়ারিতে জানিয়েছিলেন, তার দেশ ৬৭৭ কাতারি নিরাপত্তা কর্মীকে ৩৮টি নানা পেশাগত ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ বিষয়ে আর বিস্তারিত জানাননি তিনি।
চলতি বছরের আগস্টে পাকিস্তান টুর্নামেন্ট চলাকালে সার্বিক নিরাপত্তা দিতে বিশেষ বাহিনী পাঠাতে রাজি হয়। এ বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা চলতি মাসের শুরুর দিকে দোহায় আসে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম রেডিও পাকিস্তান।
গত আগস্টে ফ্রান্সের সংসদও টুর্নামেন্টের জন্য উপসাগরীয় দেশটিতে ২২০ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েনের অনুমোদন করে। এ বাহিনী ভক্ত, বিশেষ করে ফ্রান্সের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে জানায় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত মাসে কাতার নিউজ এজেন্সি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মরক্কোর সঙ্গেও নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি করেছে কাতার। গত বছর মরক্কোর গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, রাবাত (মরক্কোর রাজধানী) টুর্নামেন্ট চলাকালে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের পাঠাবে।
গত মে মাসে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, কাতারে নিরাপদ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত করতে সহায়তা করা হবে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, কাতারের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে সন্ত্রাসবাদ ও ফুটবল খেলা ঘিরে যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা করা হবে। এ সহায়তার মধ্যে রয়েছে রাজকীয় নৌবাহিনী থেকে সামুদ্রিক সুরক্ষা প্রদান, ভেন্যুতে উন্নত অনুসন্ধান প্রশিক্ষণ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সেবা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও চুক্তি করেছে কাতার। টুর্নামেন্ট চলাকালে প্রযুক্তিগত সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রণালয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে এক বিবৃতিতে কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রযুক্তিগত সহায়তার লক্ষ্য হলো, দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা-সম্পর্কিত দায়িত্বগুলো চিহ্নিত করা এবং ফিফা ২০২২ বিশ্বকাপ পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর অবদান রাখা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল চলতি বছরের শুরুতে জানিয়েছিল, জর্ডানের সাবেক সেনারাও বিশ্বকাপে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। বিশ্বকাপ চলাকালে মাঠের বাইরেও নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম চোখে পড়বে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। আটটি স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যেমন কেন্দ্রীয় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে, তেমনি কাতারের সব সড়ককে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।