শেয়ার বিজ ডেস্ক : চলতি বছরের মার্চে শেষ হচ্ছে ভারতের অর্থবছর। এ অর্থবছরে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় এ প্রবৃদ্ধি কম। ব্যবসায়িক কার্যক্রমে শ্লথগতি থাকায় দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমবে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। তবে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট প্রত্যাহারের প্রভাবেই প্রবৃদ্ধি কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর এএফপি
ভারতের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের প্রাক্কলিত জিডিডি ৭ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
নভেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির ৮৬ শতাংশ মুদ্রা প্রত্যাহার করার পরই বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছিল জিডিপিতে এর প্রভাব নিয়ে। তাদের সতর্কতার পর সরকারিভাবে প্রাক্কলিত জিডিপির হ্রাসের এ ঘোষণা আসলো। তবে প্রধান পরিসংখ্যানবিদ টিসিএ অনন্ত বলেন, প্রাক্কলিত জিডিপিতে নভেম্বর ও ডিসেম্বরের ডেটা বিবেচনা করা হয়নি।
তিনি বলেন, নোট প্রত্যাহারের কারণে প্রাক্কলিত জিডিপি কম হয়েছে এটা মনে করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এ প্রাক্কলনে নভেম্বরের চিত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি মতে, ম্যানুফ্যাকচারিং ও নিমার্ণ খাতের কর্মকাণ্ডের শ্লথগতির কারণেই প্রাক্কলিত জিডিপি কমেছে।
অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদি লাভবান হবে এ যুক্তিতে ৯ নভেম্বর ভারত সরকার দেশটিতে পুরোনো ৫০০ ও ১০০০ রুপির সব ধরনের নোট প্রত্যাহার করে। এর পরই দেশটির বিভিন্ন সংস্থা ও অর্থনীতিবিদদের অনেকেই পূর্বাভাস দিয়েছেন এতে ভারতের জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দেশটির বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অ্যামবিট ক্যাপিটাল বলেছিলেন, রুপি বাতিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেড় শতাংশ কমে যেতে পারে। কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বলছিল, ভারতের জিডিপি ৪৫ শতাংশের জোগান আসে অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে। রুপি বাতিলের ধাক্কায় অনানুষ্ঠানিক খাত সংকটে পড়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাবে।
তবে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পরও নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার এ উদ্যোগ থেকে সরে আসেনি।
৮ নভেম্বর নোট বাতিলের ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) হিসাব অনুযায়ী, জমা পড়েছে প্রায় ১৩ লাখ কোটি রুপি, যা জমা হয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থার প্রায় ৬০ লাখ ব্যাংক হিসাবে। বাতিল হওয়া দুটি নোটে দেশটির মোট মুদ্রার ৮৬ শতাংশ ছিল। এ বাতিল রুপি ব্যাংক ও এটিএম বুথ থেকে বদলানোর জন্য ভারতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, কৃষকসহ সাধারণ জনগণকে এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাংক ও এটিএম বুথের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে গ্রাহকদের। গ্রামীণ অর্থনীতিসহ দেশটির সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এদিকে, নতুন এক সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৩১ মার্চের পর একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০টি বাতিল নোট রাখতে পারবেন। এর বেশি নোট কোনো ব্যক্তির কাছে পাওয়া গেলে চার বছর পর্যন্ত জেল অথবা আর্থিক জরিমানা হওয়ার কথা বলা হয়েছে সরকারি এ অধ্যাদেশে।
যত রুপির বাতিল নোট উদ্ধার হবে, তার পাঁচ গুণ অর্থ জরিমানা হিসাবে নেওয়া হতে পারে। দেশটির সরকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে, কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা সংস্থা যদি তাদের আয়ের সঠিক উৎস দেখাতে না পারে, তাহলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ব্যাংকে জমা করে দেওয়া মানেই কালো টাকা সাদা হয়ে যাবে না।