শেয়ার বিজ ডেস্ক : নোট বাতিলের বিষয়ে কিছুতেই বিস্তারিতভাবে মুখ খুলছিলেন না রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) গভর্নর উরজিত প্যাটেল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। দেশটির সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি) তলব করলো গভর্নরকে। তার কাছে পাঠানো হয়েছে একগুচ্ছ প্রশ্নও। প্রশ্নগুলোর জবাব সঙ্গে নিয়ে ২০ জানুয়ারি পিএসি’র সামনে হাজির হতে হবে উরজিতকে। খবর রয়টার্স ।
আরবিআই গভর্নরকে তলব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিএসি চেয়ারম্যান প্রবীণ কংগ্রেস সংসদ সদস্য কেভি টমাস। নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয়েছিল এবং এর ফলে দেশের অর্থব্যবস্থার ওপর কী প্রভাব পড়লো, তা বিস্তারিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে উরজিতকে।
নোট বাতিলের পর থেকে এ পর্যন্ত ঠিক কত টাকা ব্যাংকে ফিরলো, কতটা কালো টাকা উদ্ধার করা গেল এবং এখনও পর্যন্ত কত মূল্যের বিকল্প নোট বাজারে ছাড়া হলো, এসব প্রশ্নেরও উত্তর চাওয়া হয়েছে তার কাছে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বারবার যে ক্যাশলেস অর্থনীতির কথা বলছেন, সে ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ভারত কতটা প্রস্তুত, এ বিষয়ও গভর্নরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
পিএসি চেয়ারম্যান কেভি টমাস বলেছেন, ‘আমরা প্রথমে স্থির করেছিলাম, রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নরকে ডিসেম্বর মাসের কোনও একসময়ে তলব করবো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ৫০ দিন সময় চেয়েছিলেন বলে আমরা সেটা পিছিয়ে দিই এবং স্থির করি জানুয়ারিতেই তাকে তলব করা হবে।’ বিষয়টিতে তারা কোনও রাজনৈতিক রং দিতে চান না বলেও টমাস মন্তব্য করেছেন।
এদিকে নোট বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত আরবিআই’র দূরত্ব তথা মতানৈক্য চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে রিজার্ভ ব্যাংক ও সরকারের মধ্যে মতানৈক্য একটি দুটি নয়, অনেকগুলো। জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর রিজার্ভ ব্যাংক ও সরকারের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল নোট বাতিল নিয়ে। এক হাজার ও ৫০০ টাকার নোট ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে জনগণকে না জানিয়েই বাজার থেকে তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তারপর বর্তমানে যেমন ২০০৫ সালের আগের নোট ব্যাংকে জমা নেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল সেই প্রক্রিয়াই সব ১০০০ ও ৫০০ টাকার নোটকে বাজার থেকে কোনও আতঙ্ক ছাড়াই তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ প্রস্তাব ছিল সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজনের। কিন্তু সেই প্রস্তাব তখন সরকার গ্রহণ বা বর্জন করেনি।
এছাড়া রাতারাতি নোট বাতিল করে দেওয়ার পর কোনওভাবেই ওই সাড়ে ১৪ লাখ কোটি টাকা আবার ছেপে দ্রুত ফেরার সম্ভাবনা নেই জানিয়ে ৫০০০ ও ১০০০০ টাকার নোটও প্রয়োজনে ছেপে অর্থনীতিতে নগদ অর্থের শূন্যতার সমস্যা কিছুটা সমাধানের সুপারিশ করেছিল আরবিআই। সেই প্রস্তাবও মানা হয়নি।
আর তাই সংসদীয় কমিটির কাছে রিজার্ভ ব্যাংক শেষ পর্যন্ত কী কী বলে বসবে বা রিপোর্ট জমা দেবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে।