পৃথিবী মানুষের আবাসস্থল। সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য করতে সব উপাদান দিয়েছেন। নদী-নালা, খাল-বিল, বন-জঙ্গল, বায়ুমণ্ডল, সমুদ্র সবকিছুর সমন্বয়ে পৃথিবী মানবজাতির বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। মানুষ নিজের প্রয়োজনে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছে কলকারখানা, দালান, বিশাল অট্টালিকা। মানবসৃষ্ট এসব জিনিস জীবনযাত্রায় যেমন গতি দিয়েছে তেমনি অজ্ঞতাবশত পরিবেশকে ঢেলে দিয়েছে চরম বিপর্যয়ে। ১৮ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া শিল্প বিপ্লবের ফলে বিশ্বে নতুন প্রযুক্তির সূচনা হয় যা উৎপাদন ব্যবস্থায় আনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। গড়ে উঠে বৃহদাকার উৎপাদন, তৈরি হয় বড় কলকারখানা, শ্রমিকরা কাজের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলে ভিড় জমাতে থাকে। উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লাচালিত বাষ্প ইঞ্জিন দ্বারা সৃষ্ট ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে মিশে শুরু হয় পরিবেশদূষণের। দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের কয়েক দশক পর ওজোন স্তরের অবক্ষয়, ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সুরক্ষা নিয়ে ১৯৮০-র দশকে বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করতে শুরু করে। এছাড়া পণ্য প্যাকেজিংয়ে প্লাস্টিকের লাগামছাড়া ব্যবহার পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। ফলে উৎপাদন বিপণন ব্যবস্থায় উদ্ভব হয় নতুন মতবাদ গ্রিন মার্কেটিংয়ের। গ্রিন মার্কেটিং বলতে পরিবেশবান্ধব পণ তৈরি ও সেগুলো গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যেখানে পরিবেশের যাতে কোনো প্রকার ক্ষতি না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়। ১৯৮০ সাল থেকে গ্রিন মার্কেটিং ধারণাটি জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। গ্রিন মার্কেটিং ধারণার উদ্ভবের পর থেকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বিপণন কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিপণন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি পরিবেশের দিকেও বিশেষ নজর দিতে শুরু করে। এখানে পরিবেশ বলতে প্রাকৃতিক পরিবেশ, যেমন নদ-নদী, জলবায়ু, বন, গাছ-পালা, জীবজন্তু প্রভৃতি বোঝানো হচ্ছে। একই সঙ্গে মানবসৃষ্ট সামাজিক পরিবেশ, যেমন রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির সমষ্টিকে তুলে ধরা হয়েছে। গ্রিন মার্কেটিংয়ে প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় ধরনের পরিবেশের প্রতি সচেতন থেকে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। গ্রিন মার্কেটিংয়ে বিপণনকারী বিপণন কার্যক্রমের সব কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণ ও রক্ষার জন্য কাজ করে। যেমন পণ্য প্রস্তুত করার সময় পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার, পণ্য পরিবহন, প্যাকেজিং, সংরক্ষণ এবং প্রচারণার সময় পরিবেশের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখা হয়। ভোক্তাও পরিবেশ দূষণকারী পণ্য বাদ দিয়ে পরিবেশের জন্য অনুকূল পণ্য ব্যবহার শুরু করেছে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে, বিশ্বকে বাঁচাতে সব প্রতিষ্ঠানকে গ্রিন মার্কেটিংয়ের দিতে হবে।
মো. তাজুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়