প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

পাঁচ বছর পর ব্যাংকের শেয়ারে মুনাফা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: টানা পাঁচ বছর পর স্বস্তি ফিরেছে ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগকারীদের। অন্য খাতের তুলনায় বছরজুড়ে এ খাতের শেয়ারের প্রতি তাদের চাহিদা বেশি দেখা গেছে। সেই সঙ্গে এসব শেয়ারের দরও ছিল স্থিতিশীল পর্যায়ে। বছর শেষেও এর প্রতিফলন দেখা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বছর শেষে (১ জানুয়ারি থেকে ২১ ডিসেম্বর) তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের ৩০ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৪টির। শতাংশের হিসাবে যার পরিমাণ ৮০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এ বছর ব্যাংক শেয়ারের প্রধান কারণ ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সমন্বয় ও বেশিরভাগ ব্যাংক কোম্পানি মুনাফায় ফেরা। এই দুই কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এ খাতের শেয়ারের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। এ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সময় ও বিশেষ সুযোগে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আইনি সীমায় নামিয়ে আনে ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে আরও ১৫০০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়।

সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ওই ব্যাংকের আদায় করা মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংসের ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। ১৩টি ব্যাংকের এ সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সুযোগের কারণে সবকটি ব্যাংক ২১ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের বিনিয়োগ সমন্বয় করে। এছাড়া আগের তুলনায় লাভে ফিরেছে বেশিরভাগ ব্যাংক। ফলে এ খাতের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

বছরের সার্বিক চিত্রে দেখা যায়, বছরজুড়ে অল্প অল্প হলেও বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দর বাড়ছে। ফলে এ খাতে আবারও সুদিন ফিরছেÑএমনটা মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, চলতি বছর ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলো মুনাফায় রয়েছে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। ফলে বাড়ছে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ারদর।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক খাতের কিছু সমস্যা ছিল তবে ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগ সমন্বয় করায় এখন সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আশা করছি বিনিয়োগকারীদের এখন এ শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। তবে এক্ষেত্রে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। তারা যদি এসব শেয়ারের দিকে নজর দেয় তবেই খাতটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’

একই প্রসঙ্গে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর বেশিরভাগ ব্যাংক মুনাফায় ফিরেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যাংকগুলোর আমানত বাবদ সুদ কমা। গত বছরের তুলনায় এ বছরের আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় কমেছে।

ফলে ব্যাংকের মুনাফা বাড়ছে। যার প্রভাব

পড়েছে পুঁজিবাজারে।’ ব্যাংকগুলোর মুনাফার দিকে তাকালে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ ব্যাংকের নিট মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল বেশি হওয়ার কারণে মুনাফা বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর প্রকাশিত অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে ৩০ ব্যাংকের মধ্যে ২০টির নিট মুনাফা ও ইপিএস বেড়েছে। কমেছে ৯টির। একটির অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে ১৫ ব্যাংকের নিট মুনাফা ও ইপিএস বেড়েছে। কমেছে ১৪টির। একটির ইপিএস অপরিবর্তিত রয়েছে।

হিসাব অনুযায়ী যেসব ব্যাংকের নিট মুনাফা ও ইপিএস বেড়েছে সেগুলো হলো সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ন্যাশনাল, দ্য সিটি, রূপালী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, এক্সিম, আইএফআইসি,  মার্কেন্টাইল, ইস্টার্ন, যমুনা, ট্রাস্ট, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এবি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এক্ষেত্রে ইপিএস অপরিবর্তিত রয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের। বিপরীতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় নিট মুনাফা ও ইপিএস কমেছে প্রাইম ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, পূবালী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্, ঢাকা, ইসলামী, সাউথইস্ট, ওয়ান, শাহ্জালাল, উত্তরা, এনসিসি ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।

প্রসঙ্গত, ব্যাংককিং খাত বলা হয়ে থাকে পুঁজিবাজারের সব চেয়ে শক্তিশালী খাত। একসময় পুঁজিবাজারে মোট লেনদেনের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ থাকতো এ খাতের অবদান। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ পরিস্থিতি বদলে গেছে। লেনদেনে ব্যাংকের অবদান নেমে এসেছে ১০ শতাংশের নিচে। ব্যাংককিং খাতে হল-মার্কসহ নানা অনিয়ম সর্বোপরি রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনায় সাধারণ গ্রাহকের ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমেছে। তবে এ পরিস্থিতি অনেকটা কেটে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

নাম       বছরের শুরুর দিনের দর (টাকায়) গতকালের দর (টাকায়)    লাভ/ লোকসান

এবি ব্যাংক         ২১        ২২.২০   লাভ

আল-আরাফাহ্ ইস. ব্যাংক            ১৪.৫০  ১৫.৩০  লাভ

ব্যাংক এশিয়া      ১৬.৪০  ১৭.৯০  লাভ

ব্র্যাক ব্যাংক        ৪৮       ৬৪       লাভ

সিটি ব্যাংক        ২০.১০  ২৬.৯০ লাভ

ঢাকা ব্যাংক        ২০.১০  ১৭.৭০   লোকসান

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক            ১০২.৯০            ১০৮    লাভ

ইস্টার্ন ব্যাংক     ২৮.৪০  ২৮.৭০  লাভ

এক্সিম ব্যাংক      ৮.৫০   ১১        লাভ

ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক  ৮.৫০   ১২.৬০  লাভ

আইএফআইসি ব্যাংক       ২১        ২০.৮০ লোকসান

ইসলামী ব্যাংক    ২৭.৮০  ২৯        লাভ

যমুনা ব্যাংক       ১২.১০  ১৫.৫    লাভ

মার্কেন্টাইল ব্যাংক           ১০.১০  ১৪.৬০  লাভ

মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক    ১৮.৯০ ২৩.৩০ লাভ

ন্যাশনাল ব্যাংক   ৯.৫০    ৯.৭০    লাভ

এনসিসি ব্যাংক    ৯.১০    ১১.৪০  লাভ

ওয়ান ব্যাংক       ১৫.১০  ১৭.৫০  লাভ

প্রিমিয়ার ব্যাংক   ৭.৮০    ৯.১০    লাভ

প্রাইম ব্যাংক       ১৮.৯০ ১৭.৮০ লোকসান

পূবালী ব্যাংক      ২১.১০  ২৪.৯০  লাভ

রূপালী ব্যাংক     ৩৩       ২৫.৬০  লোকসান

শাহ্জালাল ইস. ব্যাংক      ১৩.১০  ১৪.৩০  লাভ

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক    ১৩.৩০ ১৭.১০  লাভ

সাউথইস্ট ব্যাংক ১৭.৩০  ১৭.৭০   লাভ

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক            ৯          ১১.৫০  লাভ

ট্রাস্ট ব্যাংক        ২৪.১০   ২৩.২০  লাভ

ইউসিবিএল        ২১.১০  ২০.২০   লোকসান

উত্তরা ব্যাংক      ২২        ২৪.৫০   লাভ

আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক            ৪.২০     ৪          লোকসান